" চলে এলাম বিসর্জন গল্পের অসমাপ্ত অংশের শেষাংশ নিয়ে। আশা করি প্রথম দুটি অংশের পরিপূর্ণতা ঘটবে শেষাংশে।
ছবি : নিজের তোলা
| শেষ অংশ |
ঘন্টা দেড়েক পথ পাড়ি দিয়ে যখন দাদু-বাড়িতে প্রবেশ করল তিথি, তখন কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল ! দাদু সম্পূর্ণ সুস্থ ! তিথীকে অপরিচিত একটি মেয়ের সাথে এভাবে একা আসতে দেখে তার দাদুও কিছুটা অবাক হল । সে কখনোই একা কোথাও চলাফেরা করে না । বিশেষত বাবা-মায়ের সাথে দাদু বাড়িতে আসে ।
দাদু - তোর সাথে এই মেয়েটি কে ? আর তুই
একা কেন এসেছিস ?
তিথী - মা-বাবা কোথায় ? বাবা বলল তুমি খুব
অসুস্থ !
দাদু - কি বলছিস এসব !তোর মা বাবা তো
এখানে আসেনি আর আমার তো কিছুই
হয়নি ।
হতবাক হয়ে গেল তিথী । মা-বাবা যদি না আসে তাহলে মিথ্যা বলল কেন ! কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। হঠাৎ ড্রইং রুমে থাকা টেলিভিশনে হৃদয়বিদারক ব্রেকিং নিউজ শুনতে পেল তিথী ।
"ঐতিহ্যবাহী ভগ্নাবশেষ নিদর্শনটি অজ্ঞাত সহিংসতার শিকার হয়ে বিস্ফোরিত হলো। মূল্যবান নিদর্শনের সঙ্গে হারালো কিছু মূল্যবান প্রাণ । মৃত্যু - কুল হতে বেঁচে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়েছে সেখানকার থমথমে পরিবেশ।"
তিথী আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো । তার আর্তনাদে কিছুই বুঝতে পারলো না দাদু । বাড়ির সবাই ছুটে এল , চাচা-চাচী ও ভাইবোনেরা কেউ কিছু বুঝতে পারছে না । সবার মনে অজানা আতঙ্ক এমন কি হলো যে তিথী এভাবে ছটফট করছে ?
তিথির চারপাশে কালো আঁধার নেমে এলো । শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছিল তার । প্রাণের চেয়েও প্রিয় বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ,বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত অপরিচিত কেউ যে আর বাকি রইলো না । এই মানুষ গুলোর জন্য নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে এ মানুষ গুলোকে নিয়ে হয়তো সে বাঁচতে পারতো অথচ এদের ছাড়া কি করে বাঁচবে সে ?
আপনজনদের ঘিরেই তো হাজারো স্বপ্ন বোনা হয়, যেখানে আপনজনদের পদচারণা সেখানেই নতুন দিনের শুরু , নতুন জীবনের শুরু কিন্তু এদের ছাড়া তো জীবন বিভীষিকাময় !
তিথী চিৎকার করতে চাইল কিন্তু শব্দ হলো না , এই নিঃশব্দ আর্তনাদ' দুমড়ে-মুচড়ে দিল তাকে । আর সহ্য হচ্ছে না । কোনোভাবেই আর সহ্য হচ্ছে না ! একি হলো ! আল্লাহ -বিশ্বাসী তিথী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করত- " যা ঘটে তা ভালোর জন্যই ঘটে। " তবে কি এমন ভালো হল এই নির্মম দুর্ঘটনায় ! কোন ভালোর জন্য সৃষ্টিকর্তা এমন কঠিন শাস্তি দিলেন ? কি অপরাধ ছিল তার এবং তার বাবা-মায়ের ?যে মানুষ দুজন সারা জীবন অন্যের উপকারে জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে, যারা সর্বদা অসহায়কে সহায়তা করেছেন । আজ তাদের কি অপরাধে এত বড় শাস্তি দিলেন সৃষ্টি কর্তা ! কেন এমনটি হলো !
দুঃখ ও যাতনায় ভেঙে পড়ল তিথী । হঠাৎ করে তার মনে জোর আসলো ! কি যেন এক অদ্ভুত শব্দ তার মন থেকে কানে ভেসে আসলো ! স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যেন তার মনে অবস্থান করে বলছেন ,
" তুমি আঁধার কাটিয়ে এবার আলোর পথিক হও , তুমি সেই আঁধার পথের মশাল হও যে আঁধার পথে দিয়েছে তোমার আপন জনের বিসর্জন ! "
হঠাৎ চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বসল তিথী। চার পাশে আলো হয়ে গেছে ! স্বপ্ন ! না দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে ! বিছানায় বসেই কাঁদতে শুরু করল তিথি। কি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন ! বাস্তব তো অনেক দূরের কথা দুঃস্বপ্নটাও যেন সে সহ্য করতে পারছিল না । ছুটে গেল বাবা মায়ের রুমে , দেখলো বাবা অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে এবং মা রান্না ঘরে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে ।
তিথীকে দেখেই মা বলল ,
- sorry মামনি , আজকের trip টা cancel
করতে হলো । বাবার খুব জরুরী একটা
meeting পড়ে গেছে কিন্তু promise
আগামীকাল আমরা অবশ্যই বেড়াতে
যাবো, কেমন ?
মাকে জড়িয়ে ধরে গোপনে চোখের পানি মুছে ফেলল তিথী । বলল,
- নাহ ! কোন Trip হবে না । আগামীকাল সারাদিন
আমরা বাসার ছাদে-বাগানে বসে গল্প করব ,
সারাদিন তোমাদের সাথে থাকব ।
" আমাদের একান্ত কিছু বিষণ্নতা থাকে যাকে আমরা দুঃখ মনে করে ভেঙ্গে পড়ি । অথচ প্রকৃত দুঃখ থেকে আমরা অনেক দূরে আছি কিন্তু আমরা তা টের পাই না । সেই দুঃখের দেখা পাওয়া মাত্রই অনুধাবন করা যায় , একান্ত দুঃখের চেয়ে প্রকৃত দুঃখ-কষ্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ।
তাই দু-হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করি সেই মহান রবের যিনি ঝড় বৃষ্টির আদলে লুকিয়ে রেখেছেন বজ্রপাত ! স্বয়ংসম্পূর্ণ রবের এতটা দয়া ও ভালোবাসার কাছে তাই হাজারো ব্যর্থতার হোক বিসর্জন । "
| সমাপ্ত |