somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দেয়ালিকা বিপাশা
লেখালেখিটা পেশা নয় এক প্রকার ক্ষুদ্র নেশার মতো আমি মনে করি। ভালো লাগা থেকে কাগজে কলমে যে শব্দ আসে তার ব‍্য‍খ‍্যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি সাধারণ মানুষ, তাই লেখালেখির মতো সাধারণ ভালো লাগাটাই আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়।

বিসর্জন

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" চলে এলাম বিসর্জন গল্পের অসমাপ্ত অংশের শেষাংশ নিয়ে। আশা করি প্রথম দুটি অংশের পরিপূর্ণতা ঘটবে শেষাংশে।



ছবি : নিজের তোলা

| শেষ অংশ |

ঘন্টা দেড়েক পথ পাড়ি দিয়ে যখন দাদু-বাড়িতে প্রবেশ করল তিথি, তখন কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল ! দাদু সম্পূর্ণ সুস্থ ! তিথীকে অপরিচিত একটি মেয়ের সাথে এভাবে একা আসতে দেখে তার দাদুও কিছুটা অবাক হল । সে কখনোই একা কোথাও চলাফেরা করে না । বিশেষত বাবা-মায়ের সাথে দাদু বাড়িতে আসে ।

দাদু - তোর সাথে এই মেয়েটি কে ? আর তুই
একা কেন এসেছিস ?

তিথী - মা-বাবা কোথায় ? বাবা বলল তুমি খুব
অসুস্থ !

দাদু - কি বলছিস এসব !তোর মা বাবা তো
এখানে আসেনি আর আমার তো কিছুই
হয়নি ।

হতবাক হয়ে গেল তিথী । মা-বাবা যদি না আসে তাহলে মিথ্যা বলল কেন ! কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। হঠাৎ ড্রইং রুমে থাকা টেলিভিশনে হৃদয়বিদারক ব্রেকিং নিউজ শুনতে পেল তিথী ।

"ঐতিহ্যবাহী ভগ্নাবশেষ নিদর্শনটি অজ্ঞাত সহিংসতার শিকার হয়ে বিস্ফোরিত হলো। মূল্যবান নিদর্শনের সঙ্গে হারালো কিছু মূল্যবান প্রাণ । মৃত্যু - কুল হতে বেঁচে আসা স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়েছে সেখানকার থমথমে পরিবেশ।"

তিথী আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো । তার আর্তনাদে কিছুই বুঝতে পারলো না দাদু । বাড়ির সবাই ছুটে এল , চাচা-চাচী ও ভাইবোনেরা কেউ কিছু বুঝতে পারছে না । সবার মনে অজানা আতঙ্ক এমন কি হলো যে তিথী এভাবে ছটফট করছে ?

তিথির চারপাশে কালো আঁধার নেমে এলো । শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছিল তার । প্রাণের চেয়েও প্রিয় বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ,বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত অপরিচিত কেউ যে আর বাকি রইলো না । এই মানুষ গুলোর জন্য নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে এ মানুষ গুলোকে নিয়ে হয়তো সে বাঁচতে পারতো অথচ এদের ছাড়া কি করে বাঁচবে সে ?

আপনজনদের ঘিরেই তো হাজারো স্বপ্ন বোনা হয়, যেখানে আপনজনদের পদচারণা সেখানেই নতুন দিনের শুরু , নতুন জীবনের শুরু কিন্তু এদের ছাড়া তো জীবন বিভীষিকাময় !

তিথী চিৎকার করতে চাইল কিন্তু শব্দ হলো না , এই নিঃশব্দ আর্তনাদ' দুমড়ে-মুচড়ে দিল তাকে । আর সহ্য হচ্ছে না । কোনোভাবেই আর সহ্য হচ্ছে না ! একি হলো ! আল্লাহ -বিশ্বাসী তিথী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করত- " যা ঘটে তা ভালোর জন্যই ঘটে। " তবে কি এমন ভালো হল এই নির্মম দুর্ঘটনায় ! কোন ভালোর জন্য সৃষ্টিকর্তা এমন কঠিন শাস্তি দিলেন ? কি অপরাধ ছিল তার এবং তার বাবা-মায়ের ?যে মানুষ দুজন সারা জীবন অন্যের উপকারে জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে, যারা সর্বদা অসহায়কে সহায়তা করেছেন । আজ তাদের কি অপরাধে এত বড় শাস্তি দিলেন সৃষ্টি কর্তা ! কেন এমনটি হলো !

দুঃখ ও যাতনায় ভেঙে পড়ল তিথী । হঠাৎ করে তার মনে জোর আসলো ! কি যেন এক অদ্ভুত শব্দ তার মন থেকে কানে ভেসে আসলো ! স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যেন তার মনে অবস্থান করে বলছেন ,

" তুমি আঁধার কাটিয়ে এবার আলোর পথিক হও , তুমি সেই আঁধার পথের মশাল হও যে আঁধার পথে দিয়েছে তোমার আপন জনের বিসর্জন ! "


হঠাৎ চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বসল তিথী। চার পাশে আলো হয়ে গেছে ! স্বপ্ন ! না দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে ! বিছানায় বসেই কাঁদতে শুরু করল তিথি। কি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন ! বাস্তব তো অনেক দূরের কথা দুঃস্বপ্নটাও যেন সে সহ্য করতে পারছিল না । ছুটে গেল বাবা মায়ের রুমে , দেখলো বাবা অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে এবং মা রান্না ঘরে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে ।

তিথীকে দেখেই মা বলল ,

- sorry মামনি , আজকের trip টা cancel
করতে হলো । বাবার খুব জরুরী একটা
meeting পড়ে গেছে কিন্তু promise
আগামীকাল আমরা অবশ্যই বেড়াতে
যাবো, কেমন ?

মাকে জড়িয়ে ধরে গোপনে চোখের পানি মুছে ফেলল তিথী । বলল,

- নাহ ! কোন Trip হবে না । আগামীকাল সারাদিন
আমরা বাসার ছাদে-বাগানে বসে গল্প করব ,
সারাদিন তোমাদের সাথে থাকব ।

" আমাদের একান্ত কিছু বিষণ্নতা থাকে যাকে আমরা দুঃখ মনে করে ভেঙ্গে পড়ি । অথচ প্রকৃত দুঃখ থেকে আমরা অনেক দূরে আছি কিন্তু আমরা তা টের পাই না । সেই দুঃখের দেখা পাওয়া মাত্রই অনুধাবন করা যায় , একান্ত দুঃখের চেয়ে প্রকৃত দুঃখ-কষ্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ।

তাই দু-হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করি সেই মহান রবের যিনি ঝড় বৃষ্টির আদলে লুকিয়ে রেখেছেন বজ্রপাত ! স্বয়ংসম্পূর্ণ রবের এতটা দয়া ও ভালোবাসার কাছে তাই হাজারো ব্যর্থতার হোক বিসর্জন । "


| সমাপ্ত |

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব বাটপারের খপ্পরে বাংলাদেশ ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৪ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:০৯



একমাত্র ব্যক্তি শেখ হাসিনা সঠিক ভাবে চিনেছেন এই বাটপার’কে। তার নিজের জবানবন্দিতে আছে । তিনি কিশোর বয়সে কিভাবে অন‍্যের পুরস্কার চতুরতার সাথে আত্মসাৎ করেছেন ‼️ তার নাটকের নতুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহাম্মদ ইউনূসকে একঘরে করে দিন

লিখেছেন sabbir2cool, ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭


জুলাই ষড়যন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাইয়ের মেটিকুলাস ডিজাইনড প্ল্যানে দেশবিরোধী যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেটার অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। দখলদার ইউনূস সরকার প্রবল চাপে পড়েছে। এখন তাদের সব কূল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯


দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার নাই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

একটা পোস্ট দেখে লেখার সাধ জাগলো। যা নিয়ে লিখবো তা আমার নেই।
আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই। বাবা মা যখন ছোট ছিলেন তখনই তারা পরপারে উড়াল দিয়েছেন। বাবার বয়স যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×