একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি একটি ভুয়া সনদ তৈরি করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাহবুবুল আলম মাত্র ১২ বছরের কিশোর ছিলেন। বর্তমানে এলাকায় তিনি মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও টাউট-বাটপাড় হিসেবে পরিচিত। একাত্তরে তাকে মুক্তিযুদ্ধের কোনো কাজেই দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ায় বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি এমএ আউয়াল তার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে জেরাকালে আদালতে তথ্য-প্রমাণসহ এসব বক্তব্য তুলে ধরেন সাঈদীর আইনজীবীরা। আইনজীবীদের জেরার জবাবে মাহবুবুল আলম পিরোজপুরের কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে চেনেন না বলে জানান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত বই প্রকাশ হয়েছে ও লেখালেখি হয়েছে, তা সঠিক নয়—সবই মিথ্যা বলে দাবি করে মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়েন্দা কমান্ডার মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, এগুলো সব মিথ্যা। এজন্যই আমি এগুলো পড়ি না।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী ও সরকারপক্ষের প্রধান সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে চতুর্থ দিনের মতো জেরা করেন অ্যাডভোকেট কফিলউদ্দিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আহমেদ আনসারী। জেরার একপর্যায়ে আদালত সাক্ষীকে মামলার পয়েন্ট অনুযায়ী জেরা করার মরামর্শ দিলে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি প্রশ্নও অতিরিক্ত করছি না। প্রতিটি প্রশ্নই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব প্রশ্ন করতে হবে। আমরা এই আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য এসেছি। এই ব্যক্তিই হচ্ছে মামলার প্রধান সাক্ষী। তিনি সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদীও। কাজেই আমরা তাকে সর্বমোট ১৮টি পয়েন্টে প্রশ্ন করব। এখনও আমাদের অনেক পয়েন্ট বাকি রয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আপনারা চার দিন ধরে একজন সাক্ষীকেই জেরা করছেন, বৃহস্পতিবারও তা চলবে। এখনও আপনারা বলছেন, আমরা আমাদের পয়েন্টে আসছি। এতে সাক্ষীর ওপরও চাপ পড়ে, এটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। আদালতের এ মন্তব্যের জবাবে অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দীন বলেন, আমরা একটি প্রশ্নও খামোখা করছি না। সব প্রশ্নেরই পয়েন্ট আছে। ট্রাইব্যুনালে সময়মত তা দেখতে পাবেন। এদিকে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাঈদী বলেন, মাননীয় আদালত! আমার একজন আত্মীয় এখানে এসেছিলেন। সাক্ষীর নিরাপত্তার কথা বলে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে। অথচ সাক্ষীকে জেরা করার সময় সরকারপক্ষ থেকে আকার-ইঙ্গিতে তাকে জবাব বলে দেয়া হচ্ছে। আজকেও আমার একজন আইনজীবীকে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এ পর্যায়ে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কারও কথা থাকলে আমাদের লক্ষ্য করে হাত ওঠাবেন। আমরা সময় দিলে আপনারা কথা বলবেন। জেরার একপর্যায়ে সরকারপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়াদ আল মালুম বলেন, যেভাবে জেরা হচ্ছে তাতে এই সাক্ষীর জেরা ২০১২ সালেও শেষ হবে না। তার এ বক্তব্যের জবাবে আদালত বলেন, ’১২ সালে শেষ না হলে ’১৩ সালে শেষ হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জেরা করা জরুরি। গতকালের জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নরূপ :
গত মঙ্গলবারের জেরার সূত্র ধরে অ্যাডভোকেট কফিলউদ্দিন চৌধুরী বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের কাছে জানতে চান, সুন্দরবনে মেজর জিয়াউদ্দিনের ক্যাম্পে গেলে তাকে কী বলে সম্বোধন করতেন?
উত্তর : ওস্তাদ বলে ডাকতাম।
প্রশ্ন : সুন্দরবনে মেজর জিয়াউদ্দিনের একটি ক্যাম্প ছিল। ওই এলাকার নাম কী ছিল?
উত্তর : মনে নেই। সঠিক বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ওই ক্যাম্পে যাওয়া-আসার সময় আপনি কখনও আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা?
উত্তর : আমি কখনোই আক্রান্ত হইনি বা আহত হইনি।
প্রশ্ন : ক্যাম্পের নিরাপত্তাবলয় ছিল কিনা বা কমান্ডো পাহারা দেয়া হতো কিনা?
উত্তর : নিরাপত্তা পাহারা ছিল না।
প্রশ্ন : তার ক্যাম্পে বা অফিসে গেলে আশপাশে দেখতেন এমন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম বলেন।
উত্তর : মহিউদ্দিন খান, গণী ফসারী, চুন্নু খান, গৌতম হালদার, সুধীর মাস্টার, শংকর সেন মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন।
প্রশ্ন : মেজর জিয়াউদ্দিন তার যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য তার কমান্ডকে বিভাগ ও উপ-বিভাগে বণ্টন করেছেন। তাদের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : মনে নেই। বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মেজর জিয়াউদ্দিনের গোয়েন্দা শাখার একজনকে আলাদা করে প্রধান করা হয়েছিল। তার নাম কী?
উত্তর : মহিউদ্দিন কালাম।
প্রশ্ন : এই গোয়েন্দা কমান্ডার কোন এলাকার জন্য নির্ধারিত ছিলেন এবং তার অফিস ছিল কিনা?
উত্তর : আমার জানামতে ছিল না।
প্রশ্ন : পরিতোষ কুমার পাল নামে এমন কোনো মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছিল কিনা?
উত্তর : এ নামে কাউকে আমি চিনি না।
প্রশ্ন : ওই ক্যাম্পের বাবুল গাজী নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে চিনতেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তাম্বুলবুনিয়া ও পাঙ্গাসিয়ার নাম শুনেছেন কিনা?
উত্তর : পাঙ্গাসিয়ার নাম শুনেছি।
প্রশ্ন : পাঙ্গাসিয়া কি একটি বাড়ি, নদী, পাহাড়, গ্রাম—নাকি এলাকার নাম?
উত্তর : চিনি না। তবে গ্রাম হতে পারে।
প্রশ্ন : তাম্বুলবুনিয়া কি চেনেন?
উত্তর : চিনি না।
প্রশ্ন : মেজর জিয়াউদ্দিন আপনার এলাকায় কাকে কমান্ডার নিয়োগ করেছিলেন?
উত্তর : মেজর শামসুল হককে। বর্তমানে তিনি অ্যাডভোকেট।
প্রশ্ন : স্বরূপকাঠি, কাউখালী ও ভাণ্ডারিয়া থানায় কাকে কমান্ডার নিয়োগ করা হয়েছিল?
উত্তর : ভাণ্ডারিয়া থানার কথা মনে আছে।
প্রশ্ন : তার নাম বলেন।
উত্তর : কমান্ডার আজিজ।
প্রশ্ন : আপনি তো গোটা পিরোজপুরের গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন। এর জন্য আপনি কোনো ট্রেনিং নিয়েছিলেন কিনা?
উত্তর : আমি স্বাভাবিক ট্রেনিং নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : একাত্তরের কখন আপনি সেই ট্রেনিংটা নিয়েছিলেন?
উত্তর : জুনের শেষদিকে সুন্দরবনে।
প্রশ্ন : ওই ক্যাম্পটা সুন্দরবনের কোথায় ছিল?
উত্তর : এটা আমি বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান, হাবিবুর রহমান, মজিদ খান, জাহাঙ্গীর বাহাদুর, আলতাফ হোসেনকে চেনেন কিনা?
উত্তর : এই নামে কাউকে আমি চিনি না।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধকালে এই নামে কারও সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কিনা?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি এই ট্রাইব্যুনালে গত বছর ২০ জুলাই অভিযোগ দাখিল করেছেন। ওই সময় আপনি গোয়েন্দাগিরির কথা উল্লেখ করেননি।
উত্তর : ওই সময় এত কিছু চিন্তা করিনি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর পাক হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত হয়। কয়টায় মুক্ত হয়েছিল?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : সকালে, বিকালে নাকি রাতে?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ৮ ডিসেম্বর পাড়েরহাটে মেজর জিয়াউদ্দিন এসেছিলেন কি?
উত্তর : তিনি শত্রুমুক্ত হওয়ার পর এসেছিলেন। ওই সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম। এ মুহূর্তে সময়টা মনে নেই।
প্রশ্ন : তারিখ মনে আছে কিনা?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : ৮ ডিসেম্বরের কতদিন পরে তিনি এসেছিলেন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : আপনার ওস্তাদ মেজর জিয়াউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখেছেন? এটা পড়েছেন কিনা?
উত্তর : আমি পড়িনি। তবে শুনেছি।
প্রশ্ন : ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আপনার পিরোজপুর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস গ্রন্থ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। আপনি জানেন কিনা?
উত্তর : আমি জানি না।
প্রশ্ন : আপনি সত্য গোপন করছেন।
উত্তর : সত্য নয়। ওই বইগুলোতে লেখার কোনো সত্যতা নেই। এজন্য আমি এগুলো পড়িনি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামে গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। ওই গ্রন্থে পিরোজপুরের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উত্তর : আমি ওই গ্রন্থ পড়িনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধ নিয়ে যত বই প্রকাশ হয়েছে ও লেখালেখি হয়েছে, তা সঠিক না। সবই মিথ্যা।
প্রশ্ন : ওই বইয়ে প্রকৃত ঘটনা আছে বলে আপনি তা অস্বীকার করছেন?
উত্তর : এটা ঠিক না।
প্রশ্ন : একাত্তরের ৮, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে পিরোজপুরে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির লোকদের খুঁজে বের করেন এবং স্টিমারে করে সুন্দরবনে নিয়ে তাদের হত্যা করেন?
উত্তর : একদম মিথ্যা।
প্রশ্ন : এ সময়ে সিকান্দার সিকদার, মোসলেম মোল্লা, দানেস মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, সৈয়দ মুহাম্মদ আফজালসহ কুখ্যাত রাজাকারদের গ্রেফতার করা হয়?
উত্তর : সিকান্দারকে গ্রেফতারের কথা জানি। অন্যরা পলাতক ছিলেন।
প্রশ্ন : যুদ্ধের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে পিরোজপুরে একটি মামলা হয়েছিল। আপনি জানেন?
উত্তর : আমি জানি না।
প্রশ্ন : বড় রাজাকার যারা ছিল তাদের চেনেন?
উত্তর : গোলাম আযমসহ অনেকেই পলাতক ছিলেন।
প্রশ্ন : মেজর জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আপনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না বলেই আপনি ভুল তথ্য দিচ্ছেন।
উত্তর : ঠিক না।
প্রশ্ন : মেজর জিয়াউদ্দিন আপনাকে কোনো দায়িত্বই দেননি।
উত্তর : ঠিক না।
প্রশ্ন : আপনার এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আপনার বিরুদ্ধে একটি দরখাস্ত দিয়ে বলেছিলেন যে, আপনি প্রতারক ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।
উত্তর : এটা সঠিক না।
প্রশ্ন : মুক্তিবার্তার কোন সংখ্যায় আপনি তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন?
উত্তর : বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সময়।
প্রশ্ন : ২০০৪ ও ২০০৫ সালে আপনি নিজেকে অসহায় ও বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দুটি আবেদন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। তাকে সুপারিশ করেছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
উত্তর : পিরোজপুর কমান্ড কাউন্সিল আমার দরখাস্তে সুপারিশ সংগ্রহ করে দিয়েছিল।
প্রশ্ন : বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ সাঈদীর পক্ষে প্রত্যেক নির্বাচনেই কাজ করেছেন। আপনি অভিযোগ করার পূর্বে আপনার এলাকায় কেউ সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী বা অন্য কোনো অভিযোগ করেনি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : জনগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান এমপি এমএ আউয়াল সরকারের প্রথম দিকে আপনার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছিল।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি বেকার, অসহায় ও সমস্যার কথা উল্লেখ করে বর্তমান এমপি এমএ আউয়ালের কাছে গিয়ে আবার ভাতা চালু করার জন্য অনুরোধ জানান।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : এমপি এমএ আউয়াল সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে আপনাকে দিয়ে এ ভুয়া মামলা দায়ের করিয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : দেশে ৬২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, ঠিক কিনা?
উত্তর : এরা বিএনপির আমলে হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনিও তো বিএনপির আমলে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি আদালতে যেভাবে সাঈদীর নাম বিকৃত করেছেন, অন্য কোথাও এভাবে করেননি।
উত্তর : এটা ঠিক।
প্রশ্ন : পিরোজপুরের এসডিপি ফয়েজ মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছেন। শুনেছেন?
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : তার স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো মামলা করেছিলেন কিনা?
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : ২০০৮ সাল ‘জীবন যেরকম’ নামে একটি বই লিখেছেন।
উত্তর : জানি না।
প্রশ্ন : ওই বইয়ে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ও তার মামলায় সাঈদীর নাম নেই।
উত্তর : আমি জানি না।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার আগে ও পরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদী নিজ নামে ও পরিচয়ে নিজের এলাকা অথবা অন্য কোথাও ওয়াজ মাহফিল করেছেন। তিনি কখনোই পলাতক ছিলেন না।
উত্তর : তিনি নিজ নামে ’৭৫ ও ’৭৬-এর আগে ওয়াজ করতেন।
প্রশ্ন : আপনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবে হয়েছেন?
উত্তর : জিয়ানগর এলাকার কমান্ডার হয়েছি সম্ভবত গত জুনে।
প্রশ্ন : আপনার পূর্বে কারা কমান্ডার ছিলেন?
উত্তর : আবুল লতিফ কমান্ডার যুদ্ধের পর থেকেই কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রশ্ন : তার পরে ও আপনার আগে কারা দায়িত্ব পালন করেন?
উত্তর : বেলায়েত ছিলেন কিছুদিন।
প্রশ্ন : নির্বাচন কতদিন পরপর হয়?
উত্তর : দুই বছর পরপর হয়।
প্রশ্ন : এখন কতদিন পর হয়?
উত্তর : সংসদ পরিবর্তন হয়েছে শুনেছি। কাগজপত্র পাইনি।
প্রশ্ন : জিয়ানগর থানা কোন বছর হয়েছে?
উত্তর : ১৯৭৪ সালে।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার পেশা কী ছিল?
উত্তর : ছাত্র ছিলাম।
প্রশ্ন : হাবিলদার শহীদ আলাউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় ছিল কিনা?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার শামসুল হক, আলতাফ হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, আফজাল হোসেন, হেমায়েত হোসেন বাদশা, নুরুল ইসলাম, মজিবুল হক মজনু, শহীদ আসাদ, হেলাল, টিপু সুলতান, কামালউদ্দিন, হাবিবুর রহমান সিকদার, হাবিলদার আবদুল হাই, সুবেদার লতিফ, সুবেদার গাফফার, হাবিবুর রহমান, সুবেদার ফুলু, শহীদ খন্দার, সহিদুল আলম, বাদল, হাবিলদার ফজলুল হককে আপনি চেনেন কিনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় এদের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল কিনা?
উত্তর : এদেরকে আমি চিনি না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে পাড়েরহাট বাজারে হাজারখানেক দোকান ছিল?
উত্তর : পাঁচ-সাতশ’।
প্রশ্ন : পাড়েরহাট বাজার থেকে আপনার বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : পাড়েরহাট রিকশা স্ট্যান্ড থেকে আপনার বাড়ি কতদূর?
উত্তর : দেড় কিলোমিটার।
প্রশ্ন : আমি বলছি তিন কিলোমিটার।
উত্তর : না, দেড় কিলোমিটার হবে।
প্রশ্ন : আপনারা কি তিন ভাই?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনার ভাই বাতেন হাওলাদার কি আপনার পৈতৃক বাড়িতেই থাকেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনার ভাই মজিদ হাওলাদার কি মারা গেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার চার ছেলে?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তারা একাত্তরে আপনার সঙ্গেই থাকতেন?
উত্তর : একই বাড়িতে আলাদা থাকতাম।
প্রশ্ন : আপনার বাড়িতে মৃত মোবারকের ছেলে আবদুল হাই থাকেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : মোবারকের আরও দুই ছেলে জব্বার ও আউয়াল একই বাড়িতে থাকেন?
উত্তর : আলাদা থাকেন।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আবদুল হাইয়ের বয়স কত ছিল?
উত্তর : আমি এবং সে একই বয়সের।
প্রশ্ন : বর্তমানে জব্বারের বয়স ৫৭ এবং আউয়ালের বয়স ৫২।
উত্তর : জব্বারের বয়স ৩৮ থেকে ৪০ এবং আউয়ালের বয়স ৫০ হবে।
প্রশ্ন : আপনাদের একই বাড়ির মোতাহারের ছেলে ফারুকের বয়স কত?
উত্তর : ৫০ হবে।
প্রশ্ন : আপনাদের এই বাড়ির জাহাঙ্গীরের পিতা মৃত লালা হাওলাদারের বয়স কত?
উত্তর : ৪৭ থেকে ৪৮ বছর হবে।
প্রশ্ন : ইমরুল হাওলাদারের ছেলে মহসিনের বয়স কত?
উত্তর : ৬৩ বছর হবে।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে যাদের নাম বললাম, তাদের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিলেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনাদের উত্তর পাশে ফকিরবাড়ি?
উত্তর : ইঙ্গুর আলী সরদারের বাড়ি।
প্রশ্ন : ওই সরদার বাড়িতে ১৯৭১ সালে কয়টি ঘর ছিল?
উত্তর : ওই বাড়িতে একটি ঘর ছিল। বড় ছেলে আবদুল লতিফ হাওলাদারের বর্তমান বয়স ৪৭-৪৮ হবে।
প্রশ্ন : ফকির বাড়ির মোবারক ফকির, রুহুল আমিন ফকির ও বনি ফকিরকে চেনেন?
উত্তর : চিনি।
প্রশ্ন : জিন্নাত আলী ফকিরকে চেনেন?
উত্তর : চিনি।
প্রশ্ন : তার বড় ছেলে কে?
উত্তর : আবুল হোসেন ফকির।
গতকালের এ জেরার পর আদালতের কার্যক্রম আজ সকাল পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।