আগেই বলে নেই, বিভ্রান্ত হবেন না। এটা কোন ভাষা শিক্ষার ক্লাশ না, এটা হলো তবলার টুকটাক।
ইংলিশ DUMB শব্দের ট্র্যাডিশনাল মানে হলো বোবা। তবে অধুনা ইংল্যান্ডে ''বেকুব'' কিংবা ''উজবুক'' বোঝাতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় শব্দটা। যদিও এটাকে খানিকটা ভদ্রস্থ বলা যায়, অর্থাৎ পরিচিত কাউকে দাত কেলিয়ে বললে খুব একটা মাইন্ড খায় না। অঞ্চলভেদে এটা অনেকভাবেই বলা হয়, তবে আমি ইংল্যান্ডের যে অঞ্চলটাতে থাকি সেখানে সমার্থক হিসাবে ''প্রিক'' আর ''ডিকহেড'' শব্দদু'টা খুবই জনপ্রিয়। জনপ্রিয় গালি বলতে পারেন! আমারও প্রিয়। যারা বৈদেশে ইংলিশ ভাষাভাষী দেশে থাকেন, তাদের অঞ্চলে ডাম্ব এর লোকাল স্ল্যাংটা পারলে জানায়েন। কোনোটা পছন্দ হলে এইখানে ব্যবহার শুরু করে দিবো।
যাকগে, আসল কথায় আসি। আমাদের প্রাত্যাহিক যোগাযোগে ডাম্ব বা বেকুব শব্দ যখন ব্যবহার করা হয়, তার বহুরকমের মানে করা যায়। অনেক সময়ে কাউকে বা কোন জনসংখ্যাকে শব্দগুলো ব্যবহার না করেও আকার-ইঙ্গিতে উজবুক বানানো বা প্রকাশ করা যায়। কিছু ঘটনা বলি আপনাদের। কোনো কোনোটাতে আমি আমার মতামত দিলেও দিতে পারি; তবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। মতামত দেই অথবা না দেই, দিনশেষে আপনারাই ঠিক করবেন সেই ঘটনাতে উজবুক কে বা কাহারা!!!
বেশ আগে একটা ভিডিও দেখেছিলাম। এক ইংলিশ ব্লন্ডি বা স্বর্ণকেশী ফ্রান্সের কোন এক গ্রামে বেড়াতে গিয়েছে। হাটতে হাটতে পথ হারিয়ে ফেলায় তার কাউকে সঠিক রাস্তার নিশানা জানার জন্য কথা বলার প্রয়োজন হলো। পথ চলতি এক পথিককে তার জিজ্ঞাসা,
- আচ্ছা, এখানে ইংলিশ বলতে পারে এমন কাউকে কি পাওয়া যাবে? আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। মূল রাস্তায় যাওয়ার দিক নির্দেশনা দরকার।
- ইংলিশ বলতে পারা মানুষ তো এখানে পাওয়া খুবই কঠিন। তবে তুমি আরেকটু সামনে গেলে একটা দোকান পাবে। সেখানে কাউকে পেলেও পেতে পারো। পথিক জানালো।
- কি সমস্যায় যে পড়েছি!! আমার বন্ধুরা মূল রাস্তার কাছে পিকনিক করছে। আমি একটু হাটতে গিয়ে এই বিপদে পড়লাম। এদিকে আমি আবার ইংলিশ ছাড়া আর কোন ভাষা জানি না। স্বর্ণকেশী করুণস্বরে জানালো।
- আসলেই দুঃখজনক। তবে যেভাবে বললাম........একটু সামনে গেলেই তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মুচকি হাসি দিয়ে পথিকের জবাব।
এরই মধ্যে আরেকজন পথিকের আগমন। সেও ঘটনা শুনে জানালো যে, এখানে ইংরেজি জানা মানুষ পাওয়া বেশ কঠিন, তবে ওই দোকানে সে বেশ ক'জন ইংরেজকে দেখেছে। সম্ভবতঃ ওরাই স্বর্ণকেশীর বন্ধুরা। দ্রুত গেলে তাদের পাওয়া যাবে। মেয়েটা ওদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে দ্রুত হাটা দিলো।
দুই পথিক একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তারপর হ্যান্ডশেইক করে যে যার পথে হাটা দিলো।
বলাই বাহুল্য, তিনজনের এই পুরো কথোপকথনটা হয়েছে ইংলিশে। শেতাঙ্গদের মধ্যে একটা জনপ্রিয় ধারনা হলো, স্বর্ণকেশীরা খানিকটা বেকুব কিসিমের হয়। এটা নিয়ে বহু জোকস প্রচলিত আছে। এখন তাদের সমাজের একটা অংশকে নিয়ে এই যে হাসাহাসি, এটাকে কি বর্ণবাদী বা সভ্য আচরণ বলা যায়? যারা শেতাঙ্গদেরকে দেবতাসম জ্ঞান করেন, তারা আমার কথায় হয়তো মাইন্ড করতে পারেন। কি আর করা!!!!
আরেকটা ঘটনায় আসি। ক'দিন আগে কোন এক অনুষ্ঠানে এক পাকিস্তানীর সাথে পরিচয় হলো। আমি মুসলমান শুনে আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে সে মুসা (আঃ)কে নিয়ে একটা ঘটনা বয়ান করতে গিয়ে হঠাৎ থেমে আমাকে বললো, আপনি মুসা (আঃ)কে তা তো জানেন। তাই না? আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, না তো!! উনি কে?
ভদ্রলোক তখন মুসা (আঃ) কে চেনানোর জন্য উনার আল্লাহ-দর্শন সংক্রান্ত ঘটনা বর্ণনা করা শুরু করলো, এবং এক পর্যায়ে সেই পাহাড়ের নাম ভুলে যাওয়াতে আমি মনে করিয়ে দিলাম, সেটার নাম তুর পাহাড়। ভদ্রলোক ঘটনার বয়ান শেষ করলেন। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, ''আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসলে শেখার কোন শেষ নাই।'' একজন মুসলমানকে মুসা (আঃ) সম্পর্কে জানাতে পেরে ভদ্রলোকের চোখে-মুখে সুস্পষ্ট পরিতৃপ্তি লক্ষ্য করেছিলাম!!!
দেশে আজিজ-বেনজীর-মতিউরকে নিয়ে উথাল-পাতাল কান্ড ঘটে যাচ্ছে। এই নিয়ে যখনই কোন আওয়ামী নেতা-সাপোর্টারের বক্তব্য শুনি, জানতে পারি, এসবই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূর্নীতির প্রতি ''জিরো টলারেন্স'' এর কারনে ঘটছে। এতেই প্রমানীত হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্নীতিকে শক্তহাতে প্রতিহত করতে কতোটা বদ্ধপরিকর! কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আমি যখন জিজ্ঞেস করি..........আচ্ছা, এই লেভেলের একজন কর্মকর্তার পক্ষে বছরের পর বছর হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি করা কি প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে সম্ভব? আর যদি সম্ভব হয়ও তাহলে এতো এতো গোয়েন্দা সংস্থা কি ছিড়ছে? তারা কি উপর লেভেলে কে কি করছে তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট করছে না? কোন উত্তর পাই না। আমি বেকুবের মতো আরো জিজ্ঞেস করি, এই ধরাধরির ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরে তারা বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ পায় কিভাবে? এই সেইফ এক্সিটটা তাদেরকে কে দেয়? দুদকই বা এর অনুসন্ধান বা তদন্তে এতো গড়িমসি করে কেন? উত্তর আসে, বেশী বোঝা ভালো না। বুঝি না, এখানে আসল বেকুব কে?
আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন নেতা-নেত্রী-ডাইহার্ড সমর্থকরা সাধারন জনগনকে ডাম্ব মনে করে। আবার সাধারন জনগন নেতা-নেত্রী-ডাইহার্ড সমর্থকদেরকে ডাম্ব মনে করে। তবে আমার মতে দেশের নেতা-নেত্রীদেরকে ডাম্ব না বলে ডিকহেড বলাটাই যুক্তিযুক্ত, কারন জনতার নীরবতাকে 'বোঝার অক্ষমতা' মনে করা একমাত্র ডিকহেডদের মনোভাব। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ঘুরে এসে সংবাদ সম্মেলনে বেশ ঘটা করে জানিয়েছেন, ''ভিসা সহজ করে দিয়েছি। ভারতে চিকিৎসা নেওয়া সুবিধা হবে।'' প্রকারান্তরে কি উনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যদশা কিংবা নিজের অযোগ্যতাকেই স্বীকার করে নিলেন না? মানুষ কেন ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবে?
১৯৮৯ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের হার্ট এ্যাটাক হয়। অবস্থা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলে ডাক্তাররা উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু উনি সেখানে না গিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন আর নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন যাতে করে সিঙ্গাপুরের উন্নত চিকিৎসা দেশেই পাওয়া যায়। এরপরে উনার আরো দুইবার হার্ট এ্যাটাক হয় এবং প্রতিবারই উনি দেশে চিকিৎসা করান। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সুবিধা করে দিয়ে আবার সেটা ঘটা করে দেশবাসীকে জানাচ্ছেন। এখন তো মনে হচ্ছে, ইচ্ছে করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করায়। অবশ্য এটা হয়তো একজন বিশিষ্ট ডাম্ব হিসাবে আমার উজবুকীয় চিন্তা...........কি বলেন!!!
আচ্ছা, বাদ দেন এসব অং বং। বরং ব্লগ নিয়ে কিছু কথা বলি।
ব্লগের এক অতি গেয়ানী বিসিএস শিক্ষক নাকি অন্যের লেখা চুরি করে ব্লগে পোষ্টায়ে ধরা খেয়েছে!! বড়ই আচানক কথা। সাধারন চোর আর শিক্ষক চোরের মধ্যে বিরাট তফাৎ আছে, না কি বলেন!!! যেমন ওপার বাংলার এক হনুমানও অন্যের লেখা চুরি করে ব্লগে পোষ্ট দেয়। তা সে দিতেই পারে। ওই মাল যে এর চেয়ে উন্নত কিছু করার ক্ষমতা রাখে না, সেটা আমরা বহুবারই দেখেছি। তাই বলে শিক্ষক!! ছ্যা ছ্যা ছ্যা...............লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে!!!
বড় বড় নীতি কথা বলা একজন মানুষ যখন এমন নীতিহীন কাজ করে, তখন বুঝি না আসলে ডাম্ব কে? চোর-শিক্ষক কি সাধারন ব্লগারদেরকে এতোটাই ডাম্ব মনে করে যে, ধরেই নিয়েছে তার চৌর্যবৃত্তি কেউ ধরতে পারবে না! এই পদের শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে কি শিক্ষা দিবে? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি আসলে এদের হাত ধরেই সম্ভব হচ্ছে। আর শিক্ষক সাহেবের ভাষাও মাশাল্লাহ, লা-জওয়াব!!! মিছা কিছু কি কইলাম? এসব দেখে আমার বুকের গভীর থেকে একটা শব্দই দীর্ঘশ্বাসের মতো উঠে আসে...........আফসোস!! বড়ই আফসোস!!!
পোষ্টের শুরুতে যা বলেছিলাম। মনুষ্য সমাজে এমন বহু মানুষ আছে যারা নিজেদেরকে অতি-চালাক আর অন্যদেরকে ডাম্ব ভাবে। আসলে তারা জানেও না যে, অন্যকে ডাম্ব ভাবা এই মানুষগুলো নিজেরাই কত্তো বড় ডাম্ব। স্মার্টনেস উপকারী জিনিস, কিন্তু ওভার স্মার্টনেস? নো ওয়ে!!!!
আশেপাশে এমন গলায় দড়ি দেয়া অতিচালাকের অভাব নাই। এমন দু'একটা কাহিনী আপনাদের কাছ থেকে শুনতে পারলে মন্দ হতো না। ''অতি চালাকের গলায় দড়ি'' নিয়ে একটা আড্ডা দিলে কেমন হয়? হে হে হে..........না থাক। আমার বড়ভাই আবার ব্লগে আড্ডা দেয়া পছন্দ করে না!!!!!
ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৯