আমার এই পোষ্ট একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু করি। অনেকেই জানেন, তারপরেও প্রাসঙ্গিকতার জন্য বলা।
এক পাগল, যার প্রধান কাজ ছিল গুলতি দিয়ে বিভিন্ন ভবনের জানালার কাচ ভাঙ্গা। এক পর্যায়ে লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে তাকে ধরে চাদা তুলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেল চিকিৎসার জন্য। ক্রনিক সমস্যার জন্য দীর্ঘ চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে চিকিৎসকের মনে হলো যে, রোগী এখন সুস্থ হয়েছে। তো তার মানসিক অবস্থার একটা চুড়ান্ত ধারণা নেয়ার জন্য ডাক্তার তাকে একটা ছোট পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। এই পরীক্ষায় যদি সে পাশ করতে পারে, তাহলে তাকে আবার সমাজে ছেড়ে দেয়া হবে।
ডাক্তারঃ মনে করো, একটা হোটেলের রুমে তোমাকে আর একজন সুন্দরী মেয়েকে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। তোমাকে বলা হলো, এই মেয়ের সাথে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবা। কি করবা তুমি?
রোগীঃ আমি মেয়েটার সাথে বিভিন্ন কথা-টথা বলবো। তাকে সহজ করে তুলবো, যেন সে আমার কাজে সহযোগিতা করে।
ডাক্তারঃ খুব ভালো। অত্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ। তারপর?
রোগীঃ মেয়েটা সহজ হয়ে গেলে তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তার টপস খুলে ফেলবো।
ডাক্তারঃ খুবই স্বাভাবিক। তুমিতো দেখা যাচ্ছে পুরাই সুস্থ। ভেরী গুড। তারপর? নিজের সাফল্যে এই পর্যায়ে ডাক্তার খানিকটা উত্তেজিত।
রোগীঃ তারপরে মেয়েটার ব্রা খুলে ফেলবো। তারপরে ব্রা'র দুই পাশের দুই ইলাষ্টিক দিয়ে গুলতি বানায়ে প্রথমেই আমার হোটেল রুমের জানালার কাচ ভেঙ্গে ফেলবো!!!!
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, এই পাগলকে কি সমাজে ছেড়ে দেয়া উচিত? আপনারা কি বলেন?
সাইকোপ্যাথরাও এক ধরনের পাগল। আপাতঃদৃষ্টিতে এরা সমাজের স্বাভাবিক অংশ। দীর্ঘদিন খুব খেয়াল করে এদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, এরা ঠিক স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। অবশ্য এটা বোঝার পূর্বশর্ত হলো, আপনাকেও সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে হবে। আপনি যদি সেই পাগলের কার্যকলাপের প্রতি কোন রকমের এমপ্যাথিসুলভ মনোভাব আগে থেকেই পোষণ করেন, তাহলে কিন্তু হবে না। এন্টি-সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (এএসপিডি) নামে একটা মানসিক রোগ আছে। বলা হয়ে থাকে, এটা হলো সাইকোপ্যাথি'র কেতাবী নাম।
এসব আমার কথা না। আমেরিকার হেলথলাইনডটকম নামে একটা ওয়েবসাইট আছে। এরা আমেরিকান এক্রেডিটেইশান কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (এএসিআই) কর্তৃক সার্টিফায়েড। ক্লিনিকাল এক্সেলেন্সের জন্য এরা খুবই নির্ভরযোগ্য এবং সর্বজনবিদিত। আপনাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ইংল্যান্ডে থেকে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এর মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের রেফারেন্স না দিয়ে আমেরিকার পিছনে কেন পড়লাম? এই প্রশ্নের উত্তর পোষ্টেই নিহিত আছে!!!
সে যাই হোক, হেলথলাইনডটকম সাইকোপ্যাথ চেনার কিছু প্যারামিটার ব্যাখ্যা করেছে। চলেন, সেগুলো একটু ঘাটাঘাটি করে সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করি। প্যারামিটারগুলো এমন,
- এদের আচরণ সমাজ কিংবা কোন কমিউনিটির প্রচলিত নিয়ম-কানুন বা আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হয়,
- এরা অন্যের অধিকার বা আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় না,
- সফল অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে এরা হিউমারের ধারক-বাহক হিসাবে পরিচয় দিতে সক্ষম হয়,
- চাটুকারিতা পছন্দ করে এবং অন্যদের আবেগ নিয়ে খেলা বা নিজস্বার্থে লাগানোর কাজে পটু হয়,
- এরা বারবার আইন ভঙ্গ করে কিন্তু কোন রকমের অপরাধবোধ বা অনুশোচনায় ভোগে না,
- এমনভাবে মিথ্যা বলে যেটা সত্যের মতো শোনায়,
- অহংকারী হয় এবং নিজেকে সর্বজ্ঞানী মনে করে। এরা নিজেদেরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং চায় যে সবাই তাকে তোষামোদি করুক (নার্সিসিস্টিক বিহেভিয়ার),
- কোনটা ভুল এবং কোনটা ঠিক, সেটাই ঠিকমতো বুঝতে পারে না। সবকিছুকেই নিজের স্বার্থে এবং নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে।
মোটামুটি এই হলো সাইকোপ্যাথ চেনার সার-সংক্ষেপ। কি, খানিকটা আশ্চর্য হচ্ছেন? আমাদের ব্লগের কোন অপচ্ছায়া কি চোখের সামনে ভেসে উঠছে? উঠলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। কারন এই ধরনের চরিত্র আমাদের এই ব্লগেই আছে। আমার এই বক্তব্যকে কেউ যদি চ্যালেন্জ করতে চান……...মোস্ট ওয়েলকাম। আমি প্রতি-মন্তব্যে স্ক্রীণশট দিয়ে প্রতিটা পয়েন্টকে জাস্টিফাই করতে পারবো। এখন দিচ্ছি না কারন, এতো এতো স্ক্রীণশট দিলে পোষ্টের আকার হয়ে যাবে বিশাল। তাছাড়া শুধু আমিই না, আমার বিপ্লবী ভাই-বোনদের অনেকেই এমন বহু স্ক্রীণশট দেয়ার ক্ষমতা রাখে!!!
আগে কোন পোষ্টে বলেছি কিনা মনে নাই। যদি বলেও থাকি, আবারও বলি। আমাদের দেশে সরকারী পর্যায়ে একটা অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত আছে। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন অকাম-কুকাম করে ধরা পড়লে তাকে নতুন জায়গায় ট্রান্সফার করে দেয়া হয়। ভাবখানা এমন যে, এই ট্রান্সফারের ফলে উক্ত বদমাশ সাধু হয়ে যাবে! কিন্তু আফসোস, তা হয় না। নতুন জায়গায় গিয়ে সে আগের কাজগুলোই নতুন উদ্যোমে করতে থাকে। আমাদের ব্লগেও প্রায়শঃই এমন একটা ব্যাপার দেখা যায়। কেউ যদি অকাম করে ব্যান খায়, তাহলে সে নতুন নিকে এসে সেই পুরানো কাজগুলো আবার পূর্ণদ্যোমে শুরু করে। অথচ ব্লগটিম থেকে বলা হয়ে থাকে, কেউ যদি সুলেমানী ব্যান খায়, তাহলে সে যদি নতুন নিকে আসে, এবং কর্তৃপক্ষ সেটা ধরতে পারে, তাহলে সেই নতুন নিকও ব্যান করে দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?
আপনারা অনেকেই হয়তো জার্মান প্যাস্টর মার্টিন নেমলারের সেই বিখ্যাত কবিতা '' First They Came'' পড়ে থাকবেন। আজ যারা ওই অপ-ব্লগারের ব্লগার খেদানো কার্যক্রমের কোন কার্যকর প্রতিবাদ করবেন না, সেইদিন হয়তো দূরে না, যখন আপনার পক্ষে কথা বলার মতো কেউ আর এই ব্লগে অবশিষ্ট থাকবে না। আজকে ব্লগার জুলভার্ন চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন, কাল হয়তোবা আপনার পালা আসবে। কে বলতে পারে?
সাইকোপ্যাথ নিয়ে অনেক কথা বললাম। তবে এর চিকিৎসা কি? সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সম্ভবতঃ ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপী, যেটাকে সোজা কথায় শক থেরাপী বলা হয়। ইলেক্ট্রিক শক দিলে তাদের মস্তিস্কের যেসব উথাল-পাথাল কর্মকান্ডের কারনে এই বিপর্যয় ঘটে, সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। কারো কাজে হয়তো লাগতে পারে, তাই হেলথলাইনডটকম এর নিউইয়র্ক অফিসের ঠিকানা, ফোন নাম্বার দিলাম। সাইকোপ্যাথদেরকে শক থেরাপী দেয়ার ব্যাপারে এরা কার্যকর ভূমিকা রাখে!!!

275 7th Ave., 24th Floor
New York, NY 10001
Phone (917) 720-4400
হুমায়ূন আহমেদের কোন এক বইতে পড়েছিলাম, কোন গ্রামে পাগল না থাকাটা নাকি সেই গ্রামের ইজ্জত নষ্ট হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। এখন ব্লগ কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে, ব্লগে একজন সাইকোপ্যাথ না থাকাটা সেই রকমের একটা ব্যাপার, তাহলে অবশ্য আমার বলার কিছুই নাই।

সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন আর সাইকোপ্যাথদের সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। এর মধ্যেই জাতি, সমাজ আর ব্লগের কল্যান নিহিত!!!
ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:২৯