আমাদের দেশের অবহেলিত পথশিশুদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। সুন্দর, সাজানো গুছানো শিশুদের দেখলে যেভাবে আমাদের আদর করতে ইচ্ছা করে, পথশিশুদের দেখলে সে'রকমের ইচ্ছাও কারো হয় না। তবুও এরা জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে এবং একসময়ে যেভাবেই হোক, বিকশিতও হয়। এদের বেড়ে ওঠা নিয়ে সমাজের বিবেকদের তেমন একটা মাথাব্যথাও নাই।
তেমনিভাবে অযত্নে অবহেলায় বাগানের আগাছায়, বনে-জঙ্গলে, এদিক-সেদিকের চিপায়-চাপায় অনেক বুনো ফুল ফোটে। কেউ এদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় না। কেউ এদের ছবি তোলে না, এদের নিয়ে কাব্য লেখা হয় না। এরা অবহেলিত পথশিশুদের মতো আপন মনে ফোটে, বিকশিত হয়, তারপরে একদিন সবার অলক্ষ্যে অনাদরে-অবহেলায় ঝরে পড়ে।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ফুলের ফসল কবিতায় বলেছেন,
জোটে যদি মোটে একটি পয়সা, খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি
দু'টি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিও, হে অনুরাগী।
এই কবিতাটা নিঃসন্দেহে এইসব ফুলের জন্য লেখা হয় নাই। কারন এই ফুল তো কেউ পয়সা খরচ করে কিনবে না; কিনবে সেই সব অভিজাত ফুল, যাদের রুপে-সুগন্ধে-সৌন্দর্যে বিমোহিত হয় সবাই। তারপরেও এরা প্রকৃতির নিয়মেই আপন খুশীতে জন্ম নেয়, বিকশিত হয়, তারপরে একসময়ে অলক্ষ্যে ঝরে পড়ে…...কেউ দেখুক চাই না দেখুক। দেশ-কালভেদে এদের পরিণতির কোন রকমফের হয় না। এমনি কিছু বিলাতী ফুলের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই। এদের যেহেতু কোন পোষাকী নাম নাই, তাই এদেরকে কি নামে ডাকবো, তাও জানা নাই। জেলখানার কয়েদীদের মতো এদের সংখ্যা দিয়েই না হয় ডাকি, কি বলেন!!!
বুনোফুল ১ঃ আমাদের বাসার পিছনে জংলা জায়গাতে হঠাৎ একদিন দেখি অনেকগুলো এই ফুল ফুটে রয়েছে। চমৎকার দেখতে। ব্লগের বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ মা. হাসান জানিয়েছিলেন এটা প্যাশন ফ্রুটের ফুল। নেট ঘেটে দেখলাম, দেশে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাও জেলায় এটা ট্যাং ফল নামে পরিচিত। বাংলা ভাষায় এর কোন জেনেরিক নাম কি আছে?
বুনোফুল ২ঃ এটাও আমাদের বাসার পিছনের জঙ্গলে ফুটে ছিল। কাশফুলের মতো একসাথে অনেকগুলো ফোটে। এটা আমার প্রথম নজরে আসে যখন কোভিড মহামারী বেশ দাপট দেখানো শুরু করেছিল, তখন; তাই নাম দিয়েছিলাম করোনা ফুল।
বুনোফুল ৩ঃ ঝোপ জাতীয় এই গাছ সাধারনতঃ বাগানের বেড়া হিসাবে লাগানো হয়। মার্চের শুরুতে এটাতে যখন ফুল ফোটা শুরু হয়, তখন দুর থেকে দেখলে মনে হয়, ঝোপের মধ্যে তুষার জমে আছে। চমৎকার লাগে দেখতে।
বুনোফুল ৪ঃ আমাদের বাসার সামনের মোড়ের জংলায় এই ফুলগুলো ঝোপ বেধে ফোটে। গত শনিবার ভোরবেলা ঝোপের সামনে বসে কায়দা-কানুন করে ছবি তুলছি, হঠাৎ এক বৃদ্ধা তার বিশাল সাইজের হাস্কি নিয়ে হাজির। মোড় ঘুরেই আমাকে সন্দেহজনকভাবে ঝোপের সামনে ওভাবে বসে থাকতে দেখে চোখ সরু করে বললো, এই যে ইয়াংম্যান, তুমি এখানে বসে কি করছো? আমি আকর্ণ বিস্তৃত একটা হাসি দিয়ে উঠে দাড়িয়ে তাকে আশ্বস্ত করলাম যে, আমি কোন কিছু বিসর্জন করছি না। মুখে বললাম, এই ফুলগুলোর ছবি তুলছি। বৃদ্ধা বললো, এগুলি তো বুনোফুল। এর ছবি কেউ তোলে?
এই জাতীয় মহিলারা একবার কথা শুরু করলে আর থামতে চায় না। তার উপরে কুকুরটাও দেখলাম তাদের হাটাহাটিতে এই অযাচিত উপদ্রবে খানিকটা বিরক্ত। আমার দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে গলা থেকে একটা গুরুগম্ভীর আওয়াজ বের করলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চাদপসরণ করতে করতে বললাম, আমার বুনোফুলের ছবি তুলতেই ভালো লাগে!!
বুনোফুল ৫ঃ গত এপ্রিলে কোভিড টিকার প্রথম শট নিতে যাওয়ার সময়ে তোলা।
বুনোফুল ৬ঃ বাড়ির কাছের পার্কে হাটাহাটি করতে গিয়ে তুলেছি।
বুনোফুল ৭ঃ এটাও সেই পার্ক থেকে তোলা।
বুনোফুল ৮ঃ ব্যাকইয়ার্ডে এরা কাতারে কাতারে ফুটে থাকে।
বুনোফুল ৯ঃ এরাও আমার ব্যাকইয়ার্ডের সৌন্দর্য-বর্ধক।
বুনোফুল ১০ঃ এই ফুলগুলো অনেকটা মাইক্রোস্কোপিক সাইজের। তবে একজায়গাতে একসাথে অনেকগুলো ফুটলে দেখতে বেশ লাগে।
বুনোফুল ১১ঃ আমার বাড়ির বেড়ার ফাক দিয়ে দেখলাম প্রতিবেশীর ঝোপে এই ফুলটা ফুটে রয়েছে, অথচ আমার এলাকায় নাই। কি আর করবো, তাকে অনুরোধ করলাম, একটা ছবি তোলার সুযোগ দেয়ার জন্য।
বুনোফুল ১২ঃ আগেরটার ছবি তুলতে গিয়ে এটার দেখা পেলাম। দু'টার ছবি তুলে ফেরত আসছি, প্রতিবেশীর কৌতুহলী প্রশ্ন, এই বুনোফুলের ছবি দিয়ে কি করবা? আমি বললাম, জংলীফুলের ভেষজগুন নিয়ে একটা গবেষণা করছি, সেই কাজে লাগবে। সে প্রতিবাদের সূরে বললো, কিন্তু তুমি কোন গবেষণাগারে কাজ করো বলে তো শুনি নাই। আমি তাকে একটা বিভ্রান্ত করা হাসি দিয়ে বললাম, এটা আমার ব্যক্তিগত শখ, তুমি তো জানোই আমরা ভেষজ উপাদান ব্যবহারে ভালা পাই!!
শেষ কথাঃ বর্তমানে আমি বাসায় আগত কিছু মেহমানের মেহমানদারীতে ব্যস্ত। তাই ছবিব্লগ দেয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছিলাম। তাছাড়া আমার মতো ছবি তোলার ক্ষেত্রে আনাড়ি একজনের পক্ষে এই জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার কোন মানে নাই। এটা অনেকটা হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিপক্ষে কোন এক জামানত-হারানোর উপযোগী প্রার্থীর নির্বাচনে দাড়ানোর মতো ব্যাপার। তারপরেও ''অংশগ্রহনই বড় কথা'' এই আপ্তবাক্যের কারনে ইজ্জৎ খোয়ানোর মতো কাজটা করে ফেললাম। আপনাদের হাতে আমার ইজ্জৎ তুলেই যখন দিয়েছি, সেই ইজ্জৎ নিয়ে আপনারা কি করবেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। তবে অনুরোধ থাকবে আর সেইসাথে সৃষ্টিকর্তার দোহাই…….আমার ইজ্জৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না!!
যথা-সম্ভব ভোট (লাইক, কমেন্ট) দিয়ে আমাকে আমার জামানত ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এই ভরসায় আপনাদের আশীর্বাদপ্রিয়, ভুয়া মফিজ!!!!
শিরোনামের ছবিটা নেট থেকে নেয়া, বাকী সব ছবির কৃতিত্ব আমার আইফোনের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:২৭