আমাদের দেশে হুজুর আর মাদ্রাসা নিয়ে কিছুদিন পর পরই তুমুল তোলপাড় হয়। এটা যেন একটা নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। ইসলাম ধর্ম এবং এর রক্ষণাবেক্ষনের দাবীদার পক্ষগুলোর কার্যকলাপ নিয়ে একেকটা ঘটনা ঘটে, আর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এরপর একটা সময়ে সব পক্ষই ঝিমিয়ে পড়ে নতুন ইস্যুর অপেক্ষায়; তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক মহলে একটা মোটামুটি পার্মানেন্ট ইস্যু ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্ধ।
কিছুদিন পর পরই মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইজরায়েল সাকো নাড়ানোর মতো কোন একটা অকাম করে। জবাবে হামাস খান-কতক রকেট ছোড়ে ইজরায়েলে, আর পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে ইজরায়েল কোমর বেধে নেমে পড়ে ফিলিস্তিন নিধনে। ইজরায়েল ইচ্ছা করেই এসব করে। কারন, তারা জানে তাদের যে কোনও ফাজলামোর জবাব হামাস দিবেই দিবে। আর যেহেতু কোন কারন ছাড়াই অন্যের ভুখন্ডে হামলা করাটা আজকালকার জামানায় ইজ্জতের জন্য কিছুটা অসুবিধাজনক, তাই তারা বাহানা তৈরী করে নেয়, ফাদ পাতে। আর প্রতিবারই সেই ফাদে পা দেয় হামাস। ফলাফল? বেশকিছু সাধারন নিরীহ আদম-সন্তানের অকাল মৃত্যু। মৃত্যু যে কতোটা শস্তা, সেটা এখন ফিলিস্তিন জনগনের চাইতে ভালো আর কারা জানে? এর শেষ কোথায়? আপাতঃ দৃষ্টিতে এর শেষ দেখা যাচ্ছে না। তবে এটাও ঠিক, কোন কিছুই অনাদিকাল পর্যন্ত চলে না, চলতে পারে না। ইতিহাস আমাদেরকে সেই বার্তাই দেয় সব সময়ে। তবে নাদান মানুষ সেই বার্তা কোনদিন বোঝে না, বুঝতে চায়ও না। সকল ক্ষমতাধরই ভাবে, তাদের এই ক্ষমতা চিরন্জীব, চিরস্থায়ী। কিন্তু এটা যে কতোটা ভ্রান্ত একটা ধারনা, তার লাখো উদাহরন চোখের সামনে থাকার পরেও ক্ষমতাবানরা অন্ধ থাকে। কিন্তু অন্ধ থাকলেই কি আর প্রলয় বন্ধ হয়? নাকি হয়েছে কোনকালে?
চলেন, একটু দেখি…….কি কি উপায়ে আজকের ইজরায়েলের ক্ষমতার অবসান হতে পারে! আমরা আজকে যারা বেচে আছি, তারা হয়তো এটা দেখে যেতে পারবো না; তবে অনুমান করতে ক্ষতি তো নাই কোন, কি বলেন!!!
আমাদের দেশে সকল ক্ষমতার উৎস যেমন জনগন, তেমনিভাবে সন্ত্রাসী ইজরায়েলের সকল ক্ষমতার উৎস তাদের গডফাদার আমেরিকা। আসলে এখানে আমার একটু সন্দেহ আছে, সেটা হলো…..আসলে কে কার বাপ? ইজরায়েল আমেরিকার, নাকি আমেরিকা ইজরায়েলের? যাকগে, সেটা অন্য আলোচনা। আজ সেদিকে না যাই। ধরে নেই, মহান আমেরিকাই ইজরায়েলের বাপ। আপনারা হয়তো আমার সাথে দ্বি-মত পোষণ করতে পারেন এই বলে যে, মহান বাপের পোলা সন্ত্রাসী হয় কিভাবে? অবশ্যই হয়; বাই থিওরী হতেই পারে। আমাদের দেশেই তো একটা প্রবচন আছে, হাজী'র ব্যাটা পাজী। বিষয়টা অনেকটা সেই রকম। তো এই মহান বাপের পতন না হওয়া পর্যন্ত তার সন্ত্রাসী পোলারও পতন হবে না। আমেরিকার মাস্তানী সময়ের হিসাবে কিন্তু খুব বেশীদিনের না। কাজেই তারা আরো কিছুদিন গরম থাকবে। তারপরে আস্তে আস্তে ঠান্ডা হবে। তার খুব সামান্য হলেও লক্ষণ কিন্তু দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বে একটা ক্লাব আছে। যেটার নাম জাতিসংঘ। এই ক্লাব বহুবিধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে যার অনেককিছুই বিতর্কিত। আসলে এই জন্য ক্লাবের কর্মকর্তাদেরকে দোষ দেয়া বোকামী। বর্তমানকালে যারা ক্ষমতাধর এবং এই ক্লাবে যারা মূল চাদা দেয়, অর্থাৎ যাদের টাকায় প্রধানতঃ এটা চলে, তাদের কথা তো শুনতেই হবে। নুন খাইবে, আর গুন গাইবে না……..এটা কোন যুক্তির কথা না। এখন কোনভাবে এটার মধ্যেকার স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যদি পরিবর্তন আনা যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে। ঠিক ধরেছেন, আমি নিরাপত্তা পরিষদের পঞ্চ-পান্ডবের ভেটো ক্ষমতা বিলুপ্তির কথা বলছি। আপাতঃদৃষ্টিতে এটা অসম্ভব মনে হতে পারে, তবে জেনে রাখবেন ''অসম্ভব'' একটা আপেক্ষিক শব্দ। আজ যেটা অসম্ভব মনে হচ্ছে, কাল সেটা সম্ভব হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে যে এটা সম্ভব, সেটা নিয়ে কিছু যুক্তি-নির্ভর আলোচনা আমি করতে পারি, তবে তাতে পোষ্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। আর বড় পোষ্ট সন্মানীত ব্লগারগন পছন্দ করেন না। কাজেই স্টপ!!!
মুসলিম বিশ্ব আজ বহুধা বিভক্ত। আমরা জানি, আমাদের এই পৃথিবীটা নিজের অক্ষের উপর ঘোরে, সেইসাথে সূর্যের চারদিকেও ঘোরে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী এবং ধনী দেশগুলো শুধুমাত্র তাদের স্বার্থের চারিদিকে ঘোরে। তাদের মুসলিম হিসাবে নীতি-নৈতিকতা, আল্লাহ-রাসুলের আদর্শ আর মুসলিম উম্মাহ'র স্বার্থের চারিদিকে ঘুরতে একেবারেই দেখা যায় না। মধ্যপ্রাচ্যের তৈলাক্ত দেশগুলো প্রতিনিয়ত ব্যস্ত তাদের আব্বা-হুুজুর আমেরিকার পশ্চাদ্দেশ তৈলাক্তকরণে। এর অংশ হিসাবে কিছুদিন আগেও তারা নাজায়েজ ইজরায়েলকে জায়েজ করার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। আরেকটা দেশ তুরস্ক……..প্রচুর বড় বড় কথা বলে, যাদুঘরকে মসজিদ বানানোর মতো স্টান্টবাজীর মাধ্যমে তাদের ইসলাম-প্রীতি দেখাতে চায়, কিন্তু দিনশেষে তারাও অবৈধ ইজরায়েলকে বৈধতা দিয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলিম দেশগুলোর ক্লাব ওআইসিকে যদি সঠিক মাত্রায় সক্রিয় করা যায়, তাহলে কিছু একটা হলেও হতে পারে। মোটামুটি অসম্ভব হলেও আশা করতে দোষ কি? আল্লাহ এদেরকে সঠিক পথে আসার তৌফিক দান করুন।
আজ ইরান যদি একটা পারমানবিক শক্তিধর দেশ হয়ে যায়, তাহলে প্রচন্ড চাপে পড়ে যাবে জারজ ইজরায়েল! কারন, এই দেশটা মুসলিম বিশ্বের কোন একটা দেশকে যদি গণায় ধরে, তাহলে সেটা হলো ইরান। এদিকে ইরান-সমর্থিত হামাস যেহেতু গাজা'র প্রশাসন চালাচ্ছে, সেই সাথে ইজরায়েলে রকেট হামলাও চালাচ্ছে……ইজরায়েলের মনে ভয় ধরে যাবে, ব্যাটারা কোন একটা রকেটে না আবার ছোট আকারের পারমানবিক বোমা ভরে দেয়!! আসলে হামাস নেতৃত্বের মাথা যেই লেভেলের গরম, তাতে করে এটা অসম্ভব কোন ব্যাপার না। ইজরায়েলও সেটা জানে। কাজেই সমূহ সম্ভাবনা আছে যে, ইজরায়েল তাদের স্বেচ্ছাচারিতার রাশ টেনে ধরতে বাধ্য হবে। এর সূত্র ধরে এক পর্যায়ে তারা কোন একটা সমঝোতায়ও আসতে বাধ্য হতে পারে। কে না জানে, কুত্তাকে প্রেমময় বাণী দিলেও সে ঘেউ ঘেউ করে, কিন্তু লাঠি দেখালে কেউ কেউ করতে বাধ্য হয়!! ইরানের পারমানবিক বোমার অধিকারী হওয়ার আরেকটা সুবিধা হলো, বাই প্রোডাক্ট হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের আমেরিকান চামচা নেড়ি কুত্তাগুলোও লম্ফ-ঝম্ফ বন্ধ করবে। ইরান তলে তলে কদ্দুর কি করেছে, আল্লাহ মালুম। তবে আর দেরী করা ঠিক না। সময় হয়েছে একটা পরীক্ষামূলক পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটানোর!! আমার মতে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটা মানবিক বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। আপনারা কি বলেন?
যার কেউ নাই, তার আল্লাহ আছে। ইয়েস। এটাই আমার মতে এই সমস্যা সমাধানের শেষ উপায়। আসলে কোনকিছুই যখন কাজ করে না, তখন এ'ছাড়া আর উপায় কি? মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিকে স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ধ্বংশ করে দিয়েছেন। হারামজাদা ইজরায়েলকে টাইট করতে অসুবিধা কোথায়? সমস্যা হলো, আল্লাহর হিসাব-কিতাব বান্দাদের বোধের অগম্য। উনার একটা টাইমলাইন নিশ্চয়ই সেট করা আছে; তবে সেটা কতোদিনের, সেটাই জানা যাচ্ছে না। আসলে আমরা, বর্তমানের মুসলমানরা নামেই মুসলমান। সেজন্যেই আল্লাহ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমরা আর কিই বা করতে পারি!! তবে আগেই সাবধান করে দেই। সেটা যদি হয় নাকি-কান্না, তাহলে কিন্তু কোন লাভ হবে না।
গত কয়েকদিন ধরে টিভি খুলে শুধু এই এক বিষয়ের উপরেই খবর দেখছি। যতোই দেখি, ততোই নিজের উপরেও কেমন যেন একটা বিতৃষ্ণা চলে আসে। মনে হয়, ফিলিস্তিন জনগণের আজকের এই দূর্দশার জন্য এক অর্থে তো আমিও দায়ী। কারন….........আমিও একজন নামকাওয়াস্তে মুসলমান!!!
পরিশেষে আপনাদেরকে দু'টা ভিডিও'র লিঙ্ক দিচ্ছি। দেখবেন অবশ্যই। আপনারা হয়তো বা জানেন, আইরিশরা প্রচন্ডভাবে স্বাধীন প্যালেস্টাইনের সমর্থক। এর একটা ঐতিহাসিক কারনও আছে। সে যাই হোক, এই ভিডিও ক্লিপ দু'টাতে একজন খ্যাতনামা আইরিশ সাংসদ ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে যে তীব্রভাষায় আক্রমন করেছে, আই উইশ, কোন মুসলিম নেতা যদি গাটস নিয়ে এইভাবে বলতে পারতো!! অন্ততঃ নৈতিকতার দিক থেকে হলেও কিছুটা শান্তি পেতাম!!!!
প্রথম লিঙ্ক
দ্বিতীয় লিঙ্ক
ফটো ক্রেডিটঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮