সেই ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের কথা। একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম রঙ্গে ভরা বঙ্গ শিরোনামে। ইচ্ছা ছিল এটাকে একটা সিরিজের আকৃতি দেয়া, মানে সময়ে সময়ে আমাদের প্রিয় বঙ্গের অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন রঙ্গলীলাগুলোকে সামনে নিয়ে আসা। তবে আমার অলসতা নিয়ে আর নতুন করে কি বলবো! দিচ্ছি দিবো করে করে সেই পোষ্টের পর আর একটা পোষ্টও দেয়া হয় নাই। আমি নিজেকে নিয়ে পুরাই হতাশ! অবশ্য এই হতাশা কাটার কোন সম্ভাবনা অন্ততঃ এই জনমে নাই। যাই হোক, অবশেষে দ্বিতীয় পর্ব লিখতে পারলাম আর নতুন করে আবার আশায় বুক বাধলাম। আপনারা দোয়া রাইখেন, অন্ততঃ তৃতীয় পর্বটা যেন অচিরেই লিখতে পারি।
চলেন তাহলে, এই পর্বের রঙ্গগুলো নিয়ে একটু রগড় করি!!!
আপনারা ভারতের নটবরলালের কথা তো জানেন। ওই যে একটা প্রতারক, যে কিনা তাজমহলকে তিন তিনবার বেচে দিয়েছিল! ঠিক ওই মাত্রার না হলেও আমাদের দেশে একজনকে পাওয়া গিয়েছে যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়েছে। এই কামিলদার আদমীর নাম আবুল হোসেন। অবশ্য এই বিক্রিটা সে করেছে মাত্র দুই বার। ঘটনা এখানে শেষ হলে ভালোই হতো। কিন্তু তা হয় নাই। এক ক্রেতা সেই মহাসড়কের ক্রয়কৃত জমি বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৫ কোটি টাকা। ঘটনা কিন্তু এখানেও শেষ না, আরো আছে। সেই টাকা তুলতে না পেরে ব্যাঙ্ক সেই জায়গা বিক্রির জন্য নিলামেও তুলেছে!!!
অবশ্য আবুল হোসেনের দোষ ততোটা না। সে ওই ঝামেলার জমি ঝেড়ে ফেলার জন্য দুই দুইবার বিক্রিও করে। আসলে ২০০৬ সালে ৫৮২৫ নাম্বার খতিয়ানে উক্ত মহাসড়কের ২৪ শতাংশ জমি আবুল হোসেনের নামে দিয়ে দেয় ভূমি রেকর্ড ও জরীপ অধিদপ্তর। দেশে গাজা অনেকেই খায়, তবে ওই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়তো একটু বেশী পরিমানেই খায়। কোন ব্যাপার না। আমার জোর দাবী…….ওনাদের মতো আরো কর্মোদ্যোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে সকল সরকারী দপ্তরগুলোতে লান্চ বিরতির মতো গাজা-বিরতি দেয়া হোক। কানাডার মতো দেশ যদি গন্জিকা সেবনকে স্বীকৃতি দিতে পারে, আমরা কেন পারবো না? আর আমাদের করিৎকর্মা সরকারী লোকজন তাদের কাজ ভালোভাবে করার জন্য এই সুবিধাটুকু পেতেই পারে! দেশে আপনারা যারা জায়গা-জমির মালিক তারা সাবধানে থাকবেন। সরকার আপনার জমিতে ''সরকারী খাস জমি'' এর নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিতে পারে যে কোনও সময়ে। দেন-দরবার শুরু করার আগেই দেখবেন, সেই জমি হয়তো বিক্রিও হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে!
ওদিকে দেশের করোনা পরিস্থিতির রঙ্গ থামার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এই ক্রমাগত উর্ধমূখী সংক্রমণের মধ্যেই সরকার বিসিএস পরীক্ষা নিল। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষাও হলো। সরকারী উদ্যোগে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালিত হলো। কোন কিছুই বাদ নাই। একটা ভিডিওতে দেখলাম, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভীড়। দেখে কে বলবে, পরীক্ষার হার অনুযায়ী দেশে প্রতি একশত জনের ২৪ জনই করোনায় আক্রান্ত? এসবের মধ্যেই সরকার কিছুদিন পর পর জনগণকে সচেতনতার নামে কাতুকুতু দেয়ার আয়োজন করে। কেউ হাসে, কেউ হাসে না। কি একটা অবস্থা! সামাজিক দুরত্ব পরিণত হয়েছে রঙ্গ-তামাশার বিষয়বস্তুতে। সারারাত বৌয়ের সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়ে সকালে বাসে আলাদা সিটে বসে অফিসে যাওয়াকেই এখন নাকি সামাজিক দুরত্ব বলে! এটা আমার না…...ঢাকার কতিপয় দুর্বৃত্ত্ব মনোভাবাপন্ন দেশদ্রোহী নাগরিকের কথা!!!
সরকারী রঙ্গের একটা সর্বশেষ সংযোজন না করে আর পারলাম না। গত ৩ তারিখে জনাব ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন লক ডাউন এর সিদ্ধান্ত। আজ ৫ তারিখ মন্ত্রী পরিষদ সচিব জানিয়েছেন, লকডাউন নয় কঠোর বিধি-নিষেধ দেয়া হয়েছে………...হে হে হে! কতো রঙ্গে রঙ্গীন আমাদের এই দুখিনী দেশটা!!!
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বারোটা দেশ আর বৃটেন বাদে পুরো ইউরোপ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে কয়জন বাংলাদেশে আসে? কিন্তু কোন অবস্থাতেই ভারতের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা হচ্ছে না। ভারতীয় খবরেই দেখলাম, সেখানে গোমুত্র কোন কাজেই আসছে না। ভারতের আক্রান্তের সংখ্যা রাতারাতি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ! শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই গত শনিবারের খবর অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার। প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক! আসলে শ্বশুরবাড়ি বলে কথা!! আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে যে প্রাণ আই ঢাই করে!!! কথায় বলে, কুটুমবাড়ির কুত্তাও নাকি অনেক পেয়ারের…….সেখানে করোনা ভাইরাস কোন গণায় ধরার জিনিস?
বাদ দেন করোনা নিয়ে আজাইরা বাৎচিৎ! বরন্চ আপনাদেরকে আরেক প্রতারকের কাহিনী শোনাই। এই মেধাবী প্রতারকের নাম কামরুজ্জামান। বয়স ষাটের কোঠায়। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রতি নিয়ত সে বিজ্ঞাপন দেয় ''পাত্রী চাই'' এর। পাত্রের বয়স ৪০ থেকে ৪৪ এর মধ্যে। সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। মনে করেন, কোন এক আগ্রহী পাত্রীকে সে ব্যাখ্যা করে তার কোন একটা মানতের কথা। সাংসারিক জীবনে সুখী হওয়ার জন্য একটা গরু ছদকা দেয়া অত্যাবশ্যক, না হলে সে বিয়ে করতে পারবে না। এই বলে সে গরু কেনার টাকা নেয়। এক আগ্রহী পাত্রীর বক্তব্য এমন, গরু কেনার জন্য বিশ হাজার টাকা চাওয়াতে আমি দেই। পরে জানায়, এই টাকায় গরু কেনা যাচ্ছে না। আরো আঠারো হাজার টাকা লাগবে, সেটাও আমি দেই!!! এখানে আসলে গরুটা যে কে, সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন?
এমনিভাবে বিভিন্ন বাহানায় সে হাজারো মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে।
আর প্রতারণার কেচ্ছা না। এবার একটা ঘটনা বলি। দুঃখজনক ঘটনা। এটা আমার মনে অনেক দাগ ফেলেছে। কেন? সেটা ঘটনাটা বলে তারপরে বলছি।
চট্টগ্রামের এক ছেলে তার বাবার পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কারনটা অভিনব। বাবার ইচ্ছা, ছেলে ডাক্তার হবে। এদিকে ছেলে ডাক্তারী পড়তে চায় না। বাবার জোড়াজুড়ির পরও সে ডাক্তারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে নাই। ফলে ক্ষিপ্ত বাবা প্রচুর বকাবকি করে তাকে। এতেই অভিমান করে এই অপকর্ম করে সে।
এবার আমার মনে দাগ ফেলার কারনটা বলি। আমার আব্বার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল, উনার বড় ছেলে (আমি) ডাক্তার হবে। এদিকে আমি নাছোড়বান্দা…...ডাক্তারী পড়বো না। কারনটা ব্যতিক্রমী। ছোটবেলা থেকেই কেন জানি থকথকে চর্বি দেখলেই আমার গা গুলাতো। সময়ে সময়ে বমিও করে দিতাম। ফলে কোরবানী ঈদ ছিল আমার জন্য একটা বিভীষিকার মতো, কারন এই সময়ে বাসায় গরু/খাসীর গোশতের স্তুপ হয়ে যেতো, আর এই চর্বি দেখার ভয়ে আমি কোন বন্ধুর বাসায় গিয়ে বসে থাকতাম পরিস্থিতি সুবিধাজনক হওয়ার অপেক্ষাতে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, আমি গরু/খাসির গোশত একেবারেই খাই না। এটা নিয়েও কম কাহিনী হয় নাই আমার বাসায়। যাই হোক, সে অন্য কাহিনী। প্রসঙ্গে আসি। লম্বা ঘটনা, আপনাদেরকে অতি সংক্ষেপে বলি।
আমার বড় বোন তখন ডাক্তরী পড়ছে। তার কাছ থেকে ডিসেকশান টেবিলের গল্প শুনতাম। কিভাবে মৃতদেহের চর্বিতে হাত মাখামাখি হয়ে যেত। ফলে আব্বা যখন উনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, আমি এক কথায় নাকচ করে দিলাম। আব্বা আর আমার মধ্যে অনেক অনেক টাগ অফ ওয়ারের পর শেষে ভর্তি হলাম সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। দুই মাস ক্লাশ করলাম। তারপরে একদিন বাসায় এসে ঘোষণা দিলাম, স্যরি, আমাকে দিয়ে হবে না। আব্বাকে জানালাম, আমি যদি কেৎরাইতে কেৎরাইতে শেষ পর্যন্ত ডাক্তার হইও, হবো রোগীমারা ডাক্তার!
বাকা আঙ্গুল সোজা করার জন্য আব্বা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। সব খরচ দেয়া বন্ধ করলেন। আমি আমার খরচ (পড়ার খরচসহ) চালানোর জন্য টিউশনি করা শুরু করলাম। এভাবে দুই বছর গেল। এরপরে আমার দাদীর হস্তক্ষেপে আস্তে আস্তে উনি স্বাভাবিক হলেন, টাকা-পয়সা দেয়াও শুরু করলেন। তবে এরপরও আমার পুরা ছাত্রজীবন আমি টিউশনি চালিয়ে গিয়েছিলাম। আসলে নিজের আয় করা টাকা খরচের মজাই আলাদা। এই মজা যে একবার পেয়েছে, তার পক্ষে অন্যথা করা মোটামুটি অসম্ভব!!
এতো কথা এই জন্য বললাম যে, এই ছেলের এতোটুকু গাটস ছিল না? ম্যাচিউরড একটা ছেলে। বাবা বকাঝকা করলো, আর আত্মহত্যা করে বসলো! নিজের জীবনটা কি এতোই শস্তা? এটাও এক অর্থে এক ধরনের রঙ্গই তো। অন্ততঃ আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। তবে যাদের এই টেন্ডেন্সী আছে, তাদের বলছি, এই ধরনের রঙ্গ একেবারেই করবেন না। জীবনটা আপনার। লক্ষ্যে অবিচল থাকবেন। জয় আপনারই হবে একদিন।
আজকাল ব্লগে দেয়ার মতো সময়ই বের করতে পারছি না। আমার ব্লগীয় একমাত্র বড়ভাই জানে আমি কোন মাত্রায় ঠিক কতোটা ব্যস্ত; বিতং করে আপনাদেরকে আর বলতে চাই না, সময় করে উনিই হয়তো আপনাদের জানাবেন। দেশে বর্তমানের লক ডাউনে রঙ্গ-তামাশা কেমন চলছে? সময়ে সময়ে কেউ না কেউ পোষ্টাবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আসলে দেশের নিস্তরঙ্গ জীবনে এইসব রঙ্গ-তামাশার প্রয়োজন আছে। সরকার বাহাদুর উনাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন বিনোদন দেয়ার, বাকীটা দেশবাসীর ইচ্ছা। দেশে নাই। এই মজাগুলো মিস করছি, তাই মনটা কিন্চিৎ খারাপ! আগামী ১৩ই এপ্রিল টীকা দিতে যাবো, সেটা নিয়েও টেনশানে আছি…...শেষে রক্ত জমাট বেধে পৈত্রিক প্রাণটা বেঘোরে যায় কিনা! আল্লাহ ভরসা!!!
প্রথম পর্বের লিঙ্ক। চাইলে চোখ বুলাতে পারেন। রঙ্গে ভরা বঙ্গ - ১
ছবিঃ গুগলের!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪৭