ব্লগে আসি কিছু আনন্দময় সময় কাটাতে। লিখতে ভালো লাগে, তাই লেখি। পড়তে ভালো লাগে, তাই যখনই সময় পাই, ব্লগে বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়ি। ব্লগে সময় কাটানো মানেই একধরনের কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড…....এটাই ব্লগ সম্পর্কে আমার মুল্যায়ন। অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্লগারদের লেখা, মন্তব্য পড়ি। অনেক অজানা জিনিস জানা হয়; প্রতিনিয়ত জ্ঞান বাড়ে। তেমনিভাবে ক'দিন আগে একটা নতুন জিনিস জানলাম, জ্ঞান আরো কিছুটা বাড়লো। তবে সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে নেই।
মাইগ্রেশান মানব সমাজের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেই প্রাচীণ কাল থেকেই মানুষ যাযাবরের মতো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে আজও যায়। সবদেশের সব মানুষের জন্য সকল সময়েই এটা সত্যি। এমনকি বর্তমানের বহু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু পশ্চিমা বিশ্বের লোকজনও অন্যদেশে স্থায়ীভাবে মাইগ্রেট করে। এটা নিয়ে কিন্তু সেসব দেশের নাগরিকরা তাদেরকে বেইমান, নিমকহারাম, চশমখোর আর সুবিধাবাদী বলে বাড়িঘর মাথায় তোলে না। কারন তারা জানে, প্রতিটা মানুষেরই ইউনিক নিজস্বতা আছে। প্রত্যেকেরই অধিকার আছে পারিপার্শ্বিকতা, বিচার-বিবেচনাবোধ, সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পছন্দ-অপছন্দসহ বহুবিধ কারনকে সামনে রেখে তার বাসস্থান, সেটা যে দেশেই হোক না কেন, নির্বাচন করার।
এদিকে আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের দেশের কতিপয় মানুষ প্রবাসীদের সম্পর্কে কোন এক অজানা কারনে বিদ্বেষভাব পোষণ করে। ব্লগারদের মধ্যেও সে'ধরনের কিছু মানুষ দেখি। এনারা ঠিক কি কারনে এমনটা ভাবেন, আমার সঠিক জানা নাই। মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা হয়তো বলতে পারবেন। আমি আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে হয়তো বলার চেষ্টা করতে পারি, তবে সেটা হবে একজন আন্ধা মানুষের ঢিল ছোড়ার মতো! তবুও ভাবলাম গুটিকয় ঢিল না হয় ছুড়েই দেখি! কি আর হবে, মহাভারত তো অশুদ্ধ হয়ে যাবে না! অন্য কথায়, আমার ভাবনা আপনাদের সাথে একটু শেয়ার করি।
উন্নত দেশগুলোতে আমাদের দেশের যেসকল মানুষ বাস করে, আমার মনে হয় দেশের কিছু মানুষ তাদের ব্যাপারে খানিকটা জেলাস। এটাকে অবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খারাপ মনে করি না। কারন, জেলাস হওয়াটা মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। কেউ যদি বলে, আমি কোন ব্যাপারে কোন সময়ই কিংবা কারো ব্যাপারেই জেলাস না, তাহলে আমি বলবো, হয় মানুষটা একজন খাটি ঘর-সংসার ত্যাগী সন্নাসী অথবা নির্জলা মিথ্যা বলছে। আমরা আমাদের মধ্যে থেকে কেউ ভালো চাকুরী পেলে জেলাস হই, কেউ চমৎকার রেজাল্ট করলে জেলাস হই, এমনকি কেউ যদি খুব সুন্দরী একজন বউ পায়…..তাহলেও জেলাস হই! সত্যি বলতে, নিজের চেয়েও কারো ভালো কিছু দেখলেই আমরা জেলাস হই। মাত্রা সহনীয় থাকলে এটা ভালো। এতে করে বেশীরভাগ সময়েই সুস্থ্য প্রতিযোগিতার উত্তরণ সম্ভবপর হয়। সমস্যা হয়, যখন কেউ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এটাকে একধরনের অসুস্থ মানসিকতা বলা যেতে পারে। তাছাড়া যেমনটা বলা হয়ে থাকে যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা বাড়ে….কারো কারো ক্ষেত্রে সেই বাড়াটা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে থমকে যেতে পারে, ফলে এ'ধরনের জটিলতার উদ্ভব ঘটে।
যাইহোক, ব্লগে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনের যে সুযোগ-সুবিধার কথা শুরুতেই বলেছি সেই প্রসঙ্গে আসি। ক'দিন আগে জানলাম বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকগুলো নাকি প্রবাসে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়। আমার জন্য এটা একেবারেই একটা ব্র্যান্ড নিউ জ্ঞান! কথা হলো, তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক যেহেতু আছে, নিশ্চয়ই প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকও আছে; চতুর্থ শ্রেণী থাকাও বিচিত্র কিছু না! এই বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিক…….তাহারা আসলে কাহারা, সেই সম্পর্কে আমার ধারনা নাই। আমি প্রবাসীদেরকে তিন ক্যাটাগরীতে ভাগ করতে পারি। অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত, নিম্নশিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত। প্রবাসী অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত শ্রমিকদের নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে বাধ্য হয়ে একবার একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। আগ্রহীরা মন চাইলে দেখতে পারেন। এবার এটা লিখতে বাধ্য হলাম। আমি ব্লগে আনন্দ নিয়েই লেখালেখি করি…...তবে এ'ধরনের লেখা লিখতে আনন্দ বা উৎসাহ কোনটাই পাই না। বাধ্য হয়ে লিখতে হয়। আচ্ছা মনে করেন, যদি প্রবাসীদের নিয়ে এ'ধরনের নেতিবাচক কথায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে সব প্রবাসীরা দেশে চলে আসে, তাহলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে? এটা দেশের জন্য ভালো নাকি মন্দ হবে? দেশের বেকার সমস্যা বাড়বে নাকি কমবে? দেশ আরো উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে? এটা ব্লগারদের কাছে আমার প্রশ্ন। খুব সিরিয়াসলি বলবেন। মনে রাখা উচিত হবে……..বিদেশে প্রবাসীরা যাই করেন, নিজের যোগ্যতায় করেন; কারন সেখানে মামা-চাচার জোর কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি (যদি কারো থাকে) কোন কাজে আসে না।
আলোচনা একটু ডিরেইলড হয়ে গিয়েছে; ক্ষমা করবেন। মূল আলোচনা…...তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক বিষয়ে ফিরে আসি। আসলে অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত প্রবাসীরা এমনিতেই দেশের কতিপয় শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কটুকথা, গালি-গালাজ শুনে অভ্যস্থ, এতে করে তাদের পরিস্থিতির খুব একটা রকমফের ঘটে না। এদিকে আমরা কিছু শিক্ষিত হতভাগা ভিনদেশে নাগরিক হয়ে ফেসে গিয়েছি। তাও আবার তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক! কোন কথা হলো এটা? কত্তোবড় ছাগল এইগুলা……..দে এই হালাদেরও গালি! আসলে গালি খাওয়ার মতো কাজই তো হয়েছে, নাকি বলেন আপনারা!! কি অদ্ভুত মানসিকতা কিছু মানুষের।
আচ্ছা, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, প্রবাসীরা দেশের কোন উপকার করছে না; সেই সাথে দেশের ক্ষতিও তো করছে না। নাকি করছে? এটলিস্ট দেশের উপর থেকে কিছুটা হলেও চাপ তো কমিয়েছে! আমি বুঝি না, কতিপয় মানুষ এতো বিদ্বেষ বুকে নিয়ে চলাফেরা করে কিভাবে? এনাদের কি রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন হয়? আসলে এতো এতো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকলে ঘুমে কিন্চিৎ বিঘ্ন ঘটাই তো স্বাভাবিক! নাকি ভুল বললাম!!
আরেকটা কথা শুনতে শুনতে কান পচে গিয়েছে। প্রবাসীরা নাকি দেশপ্রেমিক না। মরার উপর খাড়ার ঘা'য়ের মতো কিছু দুষ্ট প্রকৃতির প্রবাসী আছে, যারা কিনা সারাদিন পাটি পেতে বসে দেশের বদনাম করে। এটাই বা কেমন কথা হলো? ব্যতিক্রম ছাড়া ইন জেনারেল যদি বলি, দেশের মানুষ বেশী দেশপ্রেমিক নাকি ভিনদেশে যারা পরে থাকে তারা বেশী দেশপ্রেমিক? এই বিতর্ক বিতর্কের জায়গায় থাক। এটার কারনে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, বরং সেটাই বলি। আমার পিঠাপিঠি এক বোন আছে। ছোটবেলায় তার পছন্দ ছিল আর্টস নিয়ে পড়ার, আর আমার সায়েন্স। প্রায়ই ঝগড়া করতাম আমরা, কোনটা ভালো সেটা নিয়ে। এই ঝগড়া প্রায়শঃই চুলাচুলির পর্যায়ে গড়াতো যতোক্ষণ পর্যন্ত না আম্মা জাতিসংঘের রুপ নিয়ে আবির্ভাব না হতেন!! অত্যন্ত ইম্ম্যাচিওরড ঝগড়া ছিল কি বলেন! সত্যিই তাই; কারন আমরা দু'জনেই তখন ইম্ম্যাচিওরড ছিলাম। এখন আর আমার বোনের সাথে এমন ঝগড়া হয় না; তবে এখন দেখছি, ম্যাচিওরডরাও এ'ধরনের ঝগড়া করে!!!
সময় থাকতে থাকতেই পটেনশিয়াল প্রবাসী বা ভিনদেশে নাগরিকত্ব প্রত্যাশীদেরকে সাবধান করছি। আপনারা দেশেই থাকুন দয়া করে। আমরা, কতিপয় হতভাগা নাদান মানুষেরা যে ভুল করেছি, আপনারা দয়া করে সেই ভুল করবেন না।
কথা আর না বাড়িয়ে লেখায় সমাপ্তি টানি। তবে মনের ভিতরে একটা কথা পাক খাচ্ছে; যেতে যেতে বলেই যাই। আমাদের সবার প্রিয় জানা আপাও বহুদিন ধরেই প্রবাসী। সন্দেহ নাই, উনি একটা ভিনদেশের নাগরিকও বটে। তাহলে কি..….…………..!!! ও মাই গড!!!!!
ফটো ক্রেডিটঃ অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:১০