ব্লগে অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন; ছেলেবেলার, শৈশবকালের কথা লিখেন। পড়তে বড়ই ভালো লাগে, আনন্দ পাই! বিভিন্ন সময়ে এসব লেখা পড়তে পড়তে আমারও এ'ধরনের লেখা লিখতে ইচ্ছা করে, যেহেতু অন্য সবার মতোন শিশুকালসহ অন্যান্য কাল অতিক্রম করেই আজকের আমি! ক'দিন ধরেই ভাবছিলাম স্মৃতিচারণমূলক কিছু একটা লিখবো; ভাবনার একপর্যায়ে মনে হলো আসছে ১৪ই ফেব্রুয়ারী হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কাজেই অন্যান্য কাল নিয়ে স্মৃতিচারণ আপাততঃ গোল্লায় যাক, আমার তারুন্যকালীন স্মৃতি নিয়েই বরন্চ কিছু লেখি; যেই সময়টা আমি বলতে গেলে পুরোটাই ব্যয় করেছি একটা বিশেষ কাজে এবং বিশেষ জায়গায়। আরেকটু খুলেই বলি তাহলে। কাজটা হলো, খুবই মনোযোগ দিয়ে প্রেম করা আর জায়গাটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছাত্রী হল; শামসুন্নাহার হল! বুঝতেই পারছেন, শিরোনামের 'আমার হলবেলা' বলতে আমি এই হলটাকেই বুঝিয়েছি!
একটু পিছনে ফিরে যাই। স্কুল জীবনে আমার আড্ডাস্থল ছিল আজিমপুর কলোনী। ওই সময়ে আমার একটা বিশেষ দক্ষতা প্রকাশ পায়, যার ফলে আমি কলোনীর বড়ভাই এবং আপাদের খাস সুনজরে পড়ি। সেটা হলো, পানির কিংবা স্যুয়ারেজের পাইপ বেয়ে দ্রুত উঠানামা করার দক্ষতা! তখন মোবাইল ছিল না। ল্যান্ডলাইনও সবার বাসায় ছিল না। প্রেমের ক্ষেত্রে চিঠি চালাচালিই ছিল একমাত্র ভরসা। সবার চোখ এড়িয়ে রাতের আধারে পানির পাইপ বেয়ে আমি চিঠি পৌছে দিতাম আপাদের কাছে, উত্তরও নিয়ে আসতাম। বিনিময়ে আমার কিছু দক্ষিণাপ্রাপ্তি ঘটতো! এই পেশার কারনেই বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র প্রেমপত্র পড়ার দুর্লভ সৌভাগ্য অর্জন করি আমি। বলাই বাহুল্য, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই অন্য অনেকের প্রেমপত্রও আমি সামান্য দর্শনীর বিনিময়ে রচনা করে দিতাম। সাহিত্য রচনা করেও যে আয় করা সম্ভব, সেটা সে বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম। এই মেধা কাজে লাগিয়ে এর বাইরে কিছুই করতে পারি নাই, সেটা একান্তই আমার ব্যর্থতা। যাই হোক, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার পর সবাই জান-প্রান দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। ওদিকে আমার সবচাইতে ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু, যাদেরকে আমি 'থ্রি স্টুজেস' বলতাম, তারা তিনজনেই সেসব বাদ দিয়ে প্রেম করা শুরু করলো। একেবারে ডাইহার্ড প্রেমিক একেকজন। যখনই দেখা হয়, তাদের প্রেমিকার গল্প। তিনজনে সারাক্ষণ গুজুর গুজুর, ফুসুর ফুসুর করে। আমি কাছে গেলে বলে, তুই শালা ব্যাচেলর মানুষ, এসব বুঝবি না। দুরে থাক!
অত্যন্ত অপমানজনক আচরণ!!
অপমানে জর্জরিত আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, যে করেই হোক, একটা প্রেম আমাকে করতেই হবে। একে একে তিন বন্ধুকেই অনুরোধ করে বললাম, দোস্ত, ভাবীরে কয়া যেমনেই হোক, আমারে একটা প্রেম করায়া দে। ওরা একবাক্যে বললো, পানির পাইপ বায়া উঠা-নামা করতে করতে তোর চেহারা বান্দরের মতো হয়া গ্যাছে গা। কোন মাইয়া তোর লগে প্রেম করবো না। অপমানের উপর অপমান! ওদের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়ে বড়ভাই / আপাদের কাছে হত্যা দিয়ে পড়লাম, ভাইজানেরা/আপামনিরা.....আমারে পিলিস, একটা প্রেম করায়া দ্যান!!! যাদেরকে একসময়ে আমি আমার জানবাজী রেখে তাদের মধুর প্রেম চালিয়ে যেতে সহায়তা করেছি তাদের বক্তব্য, তোর মতো ভাদাইম্মার লগে কোন মাইয়া প্রেম করবো না।
মনের দু্ঃখে বড়বোনের ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নায় বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজেকে দেখি। বান্দর কিংবা ভাদাইম্মা দেখি না; প্রমাণ সাইজের আমাকেই দেখি। দেখতে তো খুব একটা খারাপও লাগে না! ভাবলাম, আমি না দেখলে কি? সবাই যেহেতু বলে, নিশ্চয়ই আমাকে বান্দর কিংবা ভাদাইম্মার মতোই লাগে! হতাশ হয়ে বার বার আয়নার সামনে যাই। নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করি। কোন পরিবর্তনই চোখে পড়ে না।
একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বড়বোন আম্মাকে বললো, আম্মা! এই বদমাইশটা সারাক্ষণ আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে ঘুর ঘুর করে, আর সুযোগ পাইলেই নিজেরে মডেলদের মতো ঘুরায়-ফিরায় দ্যাখে। আম্মা কিছুক্ষণ আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, এ্যাই উজবুক! তুই প্রেম শুরু করছস নাকি! মনে রাখবি, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারলে তোরে ওই মোড়ের ফার্নিচারের দোকানে সেলসম্যানের চাকুরী করতে হবে। ওইখানে অনেক ড্রেসিং টেবিল আছে। সারাদিন আয়নায় নিজেরে দেখবি আর ফার্নিচার বিক্রি করবি!
কি দুঃখে যে আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাই তা আর খুলে বলতে পারলাম না, তবে সত্যি সত্যিই ভয় পেলাম। আমার রাশভারী আম্মাকে কোন বিশ্বাস নাই। উনার পক্ষে এটা করা সম্ভব। আর আব্বার কানে গেলে ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে না.....উনি এখনই আমাকে ওই দোকানে নিয়ে যাবেন! প্রেমের আশায় জলান্জলি দিয়ে পড়ালেখাতে মনোযোগ দিলাম। ফলাফল শুনবেন? আমার ওই তিন বন্ধুর একজনও ঢাবিতে চান্স পায় নাই।
যাহোক, আসল কথায় আসি। সেকেন্ড ইয়ারের শুরুর দিকের ঘটনা। ততদিনে অবশ্য প্রেমের ভুত আমার মাথা থেকে নেমে গিয়েছে, পড়াশুনাতে অখন্ড মনোযোগ। আমার এক কাজিনের বিয়েতে এক মেয়েকে দেখলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম, এই মেয়ের হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে পড়ছে। পরমুহুর্তেই সামনে আম্মাকে দেখে পুরানো সাবধানবানী মনে পড়লো। বুক চিরে হাহাকারের মতো একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। দার্শনিকের মতো ভাবলাম, এই দুনিয়াতে সবাই সবকিছু পায় না। নিজের যা আছে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত! পর মুহুর্তেই ভাবলাম, আমার আছেটা কি, যে সন্তুষ্ট থাকবো!!
এই মেয়ে ছিল আমার আরেক কাজিনের প্রিয় বান্ধবী এবং লতায়-পাতায় আত্মীয়, সেই সূত্রে আমারও। তো অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আমার কাজিন সেই মেয়েকে নিয়ে আমার সামনে হাজির। উদ্দেশ্য, আমাদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আপনারা আবার অন্যকিছু ভেবে বসবেন না যেন! আসলে সেই মেয়ে তখন ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। যদি চান্স পেয়েই যায়, তাহলে বড়ভাইয়ের সাহায্যপ্রার্থী.....এই আর কি!!!
আল্লাহর কি অশেষ রহমত! মেয়ে চান্স পেয়েই গেল!! আর কয়েকমাসের মধ্যে শামসুন্নাহার হলে সিটও পেয়ে গেল!!! বড়ভাই হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব-কর্তব্য অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পালন করতে লাগলাম এবং অচিরেই বুঝতে পারলাম, আমার আন্তরিকতা, একাগ্রতা এবং আত্মত্যাগ (আবার ছ্যাচরামী মনে কইরেন না কিন্তু!!!) এই মেয়ের সবিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সময় এসে গেল, আমার প্রেম সেক্টরের অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর। সুতরাং আমার সকল সাহিত্য প্রতিভা ঢেলে দিয়ে একটা চিঠি লিখেই ফেললাম। ওটাকে ঠিক প্রেমপত্র বলা যাবে না, বরং ওর জন্য একটা দিক-নির্দেশনামূলক পত্র বলতে পারেন। মূলভাবটা এমন ছিল, পর সমাচার এই যে, বড়ভাই হিসাবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং ভালোবাসা দিয়া তোমারে যথাসম্ভব সেবা দিয়া যাইতেছি। কিন্তু এক্ষণে আমার মনে এই ভাবনার উদয় হইয়াছে যে, এই ভালোবাসাকে যদি বড়ভাই হইতে প্রেমিকের ভালোবাসায় রুপান্তর করা যাইতো, তাহা হইলে আমি আরো আন্তরিকতা, উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সহিত তোমার সেবা করিতে পারিতাম!
পরদিন সকালে উত্তর পেলাম। এই মেয়ে আমার থেকেও এক কাঠি সরেস। লিখেছে, ইহা অনুমিতই ছিল। মেয়েরা ছেলেদের দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করিয়াই বুঝিতে পারে কোনটা সাধুর দৃষ্টি আর কোনটা শয়তানের! অদ্য রাত্রি বারো ঘটিকার পর হইতে তোমার দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হইলো। ইহা পদোন্নতি নাকি পদাবনতি, সময়েই বুঝিবা। আপাততঃ অধিক আনন্দিত হওয়ার কিছু নাই। ঠিক বৈকাল পাচ ঘটিকার সময়ে হলের গেটে উপস্থিতি নিশ্চিত করিবা।
সেই শুরু। এরপর থেকে কোন রকমের প্রাকৃতিক কিংবা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগই আমাকে দমিয়ে রাখতে পারে নাই। পরবর্তী ছয় ছয়টা বছর আমি হলের গেটে সকাল-বিকাল অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ডিউটি পালন করেছি। সে সময়ে যেহেতু কোন মোবাইল ছিল না, আমরা দেখা হওয়ার পর পরই পরদিনের সময় ঠিক করে রাখতাম। সমস্যা হতো, যদি বিনা নোটিশে উপস্থিত হতাম। ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া হলের দাদু'রা (হলের পিয়ন/দারোয়ান, যাদেরকে মেয়েরা দাদু বলতো) মেয়েদেরকে ডেকে দেয়ার স্লিপ নিতো না। তখন যেসব মেয়ে হলে ঢুকতো তাদেরকে বলে স্লিপ ধরিয়ে দিতাম। সব মেয়েই সাধু না। কিছু খচ্চড় প্রকৃতির মেয়েও ছিল, যারা ডেকে তো দিতই না, উপরন্তু অপমানজনক আচার-আচরন করতো। একদিনের কথা বলি। সেদিন বিনা নোটিশে উপস্থিত হয়েছি। তিনজনকে এ্যপ্রোচ করে প্রত্যাখাত হয়ে মেজাজটা খিচড়ে ছিল। ছোটখাটো গড়নের এক মেয়েকে হলে ঢুকতে দেখে বললাম, এই মেয়ে, অমুক রুম থেকে তমুককে ডেকে দাও তো! খবরদার, হলে ঢুকে স্লীপ ফেলবা না (অনেক মেয়েই না করতে না পেরে স্লীপ নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকেই স্লীপ ফেলে দিত)। বলে একরকম জোর করে হাতে স্লিপ গছিয়ে দিলাম। একটু পরে 'উনি' হাপাতে হাপাতে এলেন। সাফল্যে আমার দাত বের হয়ে গেল। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে বললো, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গ্যাছে! রানু আপা মাস্টার্সের ছাত্রী। উনার সাথে মিসবিহেভের কারন কি? এক্ষুনি উনার কাছে মাফ চাও। পরবর্তীতে অবশ্য এই রানু আপার সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর হয়ে যায় তবে কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বলতেন, এইটারে দেইখা যতো ভোলাভালা মনে হয় তা কিন্তু ঠিক না......অতি বদের বদ!
সেসময়ে হলে কয়েন বক্স ফোনের প্রচলন ছিল। মেয়েরা কয়েন নিয়ে সারারাত ফোনের আশেপাশে ঘুর ঘুর করতো সিরিয়ালের জন্য। আমার আরেক বন্ধু তার প্রেমিকার সাথে প্রায়শঃই ফোনে সারারাত কথা বলতো। ওরা অবশ্য দু'জনেই বাসায় থাকতো। ওই বন্ধুর কাছে তার প্রেমালাপের বর্ণনা শুনে আমার মধ্যেও রোমান্টিকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ওকে প্রস্তাব দিতেই ছ্যাৎ করে উঠলো। বললো, অসম্ভব! আমি রাত-বিরাতে সবার সামনে তোমার সাথে প্রেমালাপ করতে পারবো না। আমি বললাম, অনেকেই তো করে...তোমার সমস্যা কি? তুমি কোনখানকার ইস্পেশাল আইটেম? যাই হোক, প্যাচে ফেলে ওকে রাজি করিয়ে বাসায় আসলাম। আবেগের চোটে আমার খেয়াল ছিল না, বাসার সিটিং রুমে রাখা ফোনের আরেকটা এক্সটেনশান ফোন আব্বার বিছানার সাইড টেবিলে রাখা থাকে। বহু কায়দা-কানুন করে সেই এক্সটেনশান খুলে রিঙ্গার একদম লো করে যথাসময়ে ফোনের সামনে বসলাম।
ফোনটা কোৎ করে শব্দ করতেই প্রায় ঝাপিয়ে পড়ে রিসিভার তুললাম।
- বলো, কি বলবা। আমার 'না হওয়া বউ'য়ের নিরাসক্ত কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
- কি বলবো মানে কি? এইটা কোন ধরনের কথা! গল্প করবো, সারারাত। একেবারে খাটি প্রেমালাপ যাকে বলে!
- সারাদিন প্রেমালাপ করেও তোমার শখ মিটে নাই!
- সামনা-সামনি আর ফোনের প্রেমালাপে তফাৎ আছে। দুইটার মজা দুই রকমের। কিন্তু তুমি মনে হয় ঝগড়ার মুডে আছো! রাগ করে বললাম। তোমার তো দেখি কথা বলার কোন উৎসাহ-ই নাই!
- শোনো, এখানে আরো মেয়ে হাটাহাটি করছে। সবাই কথা বলবে। এরা একটু পর পর কাশি দেয়। এর মধ্যে আমি তোমার সাথে প্রেমালাপ করতে পারবো না.......বলতে বলতেই উহ রে আর্তনাদ.....সেইসাথে ঠাস ঠাস শব্দ ভেসে এলো ইথারে। বললো, এ্যাই শোনো, মশা কামড়াচ্ছে!!
- মশা যে কামড়াবে সেটা তো তুমি জানোই.....মোজা-টোজা পরে প্যাকেট হয়ে আসবা না!! মেজাজ খারাপ করে বললাম।
- এই গরমের মধ্যে প্যাকেট হয়ে আসবো মানে কি?
- প্রেমের জন্য মানুষ কতোকিছু করে.....আর তুমি একটু গরম সহ্য করতে পারো না!
- না, পারি না। আমার অতো তেল নাই। তাছাড়া আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। তুমি সকাল ৯টায় আসো, তখন গল্প করবো। রাখলাম।
আমি কিছু বলার আগেই খটাশ করে ফোন রেখে দিল। কথার কি ছিরি!! এই রকমের একটা নীরস টাইপের কাঠখোট্টা মেয়ের সাথে প্রেম করা যায়? মনের দুঃখে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। আকাশে থালার মতো ঝুলে থাকা চাদটার দিকে নজর পড়লো। ওটাকে রুটির মতো না লাগলেও কোনভাবেই রোমান্টিক মনে হলো না। ওটাই ছিল আমাদের 'হল টু বাসা' প্রথম এবং শেষ প্রেমালাপ!!!
সেসময়ে 'সুর্যাস্ত আইন' বলে মেয়েদের হলে একটা নিয়ম ছিল। প্রতিদিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার করে হলের দাদুরা বিকট শব্দে ঘন্টা বাজাতো মেয়েদেরকে হলে ঢোকানোর জন্য। হলের মূল গেটের পাশে এক দাদু'র একটা ছোটখাটো মুদির দোকান টাইপের দোকান ছিল। সেটাতে একটা বড় পোস্টার ছিল, তাতে লেখা......
পুকুরেতে পানি নাই, পদ্ম কেন ভাসে
যার সাথে দেখা নাই, সে কেন হাসে।
গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে একটা সিগারেট ধরিয়ে চা খেতে খেতে ভগ্নহৃদয়ে উদাস নয়নে এই উচ্চমার্গীয় লাইন ক'টার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর বোঝার চেষ্টা করতাম। বিভিন্ন ব্যাখ্যা মাথায় আসতো কিন্তু কোনটাই মনঃপুত হতো না। তারপর এক সময়ে বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়ে হতাশ হয়ে বন্ধুদের আড্ডার দিকে হাটা দিতাম। মাথার মধ্যে ক্রমাগত ঘুরতে থাকতো দু'টি লাইন.......
পুকুরেতে পানি নাই, পদ্ম কেন ভাসে
যার সাথে দেখা নাই, সে কেন হাসে। কেন হাসে? হোয়াই!!! কেউ কি জানে??
শেষকথাঃ
লেখাটা শেষ করে বউকে পড়তে দিলাম। সে পড়ে বললো, এইসব কি লিখছো! বুড়া বয়সে ভিমরতি!! ব্লগে কতো পোলাপাইন আছে; তোমার কি লজ্জা-শরমের বালাই নাই?
আমি বললাম, বউ.....এ্যনোনিমাস ব্লগিংয়ের এইটাইতো মজা। তোমারেও কেউ চিনে না, আমারেও না! তাছাড়া পোলাপাইনেরে জানানোটাও তো একটা দায়িত্ব যে, প্রেম কোন ছেলেখেলা বিষয় না। প্রেম করলে আমার মতো মনোযোগ দিয়াই প্রেম করা উচিত!
বউ বললো, হ....হইছে! তুমি যে কি জিনিস; এইটা আর কেউ জানুক আর না জানুক, আমি তো জানি.........
ব্যাস, চালু হয়ে গেল বহুদিনের পুরানো ভাঙ্গা রেকর্ড। সেসব আর আপনাদের না শোনাই ভালো!!!