মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি কোন হোমড়া-চোমড়া ব্যক্তি নই। ১৮ কোটি বাংলাদেশীর একজন অতি নগন্য এবং ক্ষুদ্র হিস্যা। একটা বিশেষ বিয়োগান্তক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। কোন ভূল-ত্রুটি হলে আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
চিঠির বিষয়বস্তু অতি-সাম্প্রতিক একটি ঘটনা; চকবাজার ট্রাজেডি। লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, আমি এটাকে দুর্ঘটনা বলছি না। ঠিক তাই; সত্যি বলতে এটা কোন দুর্ঘটনা নয়। একটি বিয়োগান্তক ঘটনা, যাকে একটা গণ-হত্যাকান্ডও বলা যায়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, এটা আসলে কতোগুলো সীমাহীন দূর্ণীতিগ্রস্থ, লোভী মানুষের লোভের কাছে আত্মাহুতি দেয়া আরো কতোগুলো নিরপরাধ মানুষের গল্প, যাদের এভাবে মারা যাওয়ার কথা ছিল না।
ইতিহাস বেশী ঘাটাঘাটি করবো না। চকবাজারের এই ঘটনা ২০১০ এ নিমতলীতে ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনার একটা কপি মাত্র। এটাকে আপনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রায় এক দশকের একটা শীতনিদ্রাও বলতে পারেন। সেবারও তদন্ত কমিটি হয়েছিল, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। ফলাফল? এবারকার এই চকবাজারের ঘটনা। আমাদের জাতীয় সমস্যা হলো, আমরা সবকিছু অতিদ্রুত ভূলে যাই। ফলে, ভবিষ্যতে আবার একটা শীতনিদ্রার পর কর্তাব্যক্তিরা উঠে হয়তো দেখবেন আরেকটা ঘটনা। তারপর আবারও পুরানো নাটকের নতুন মন্চায়ন! এই ভিশাস সার্কেল থেকে জাতীকে বের করতে একমাত্র আপনিই পারেন।
অনেকেই বলেন, দেশে গনতন্ত্র নাই; কাজেই এসব অবশ্যম্ভাবী। আমি বলি না থাকলে নাই, ডিক্টেটরশীপ-ই সই; তাতে যদি দেশের সমস্যার সমাধান হয়......ক্ষতি কি? ডিক্টেটর বললাম দেখে আবার রাগ করবেন না যেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিন্তু এই ডিক্টেটরশীপ এর পক্ষে। এই বেয়াড়া জাতীকে, আমলাতন্ত্রকে, আর রাজনীতিকে সঠিক পথে আনতে আমাদের ডিক্টেটরশীপ-ই দরকার। তাছাড়া বিশুদ্ধ গনতন্ত্রের হ্যাপাও অনেক। স্বাধীনভাবে কাজ করা যায় না, বিভিন্ন দিক সামলাতে সামলাতেই অনেক সময় চলে যায়। কাজেই একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া তথা দেশের উন্নতি করা সহজ হয়। বিশ্বে এমন উদাহরনও প্রচুর আছে। তবে হ্যা, শর্ত একটাই; ডিক্টেটরকে হতে হবে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। উপরে একজন সর্বশক্তিমান মালিক আছেন, যিনি গোটা বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের নিয়ন্ত্রক। তবে নীচে, বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে আপনিই সেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং নো অফেন্স, এটাকে......আই মিন, ডিক্টেটরশীপকে পজিটিভলি-ই দেখুন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া খুবই জরুরী। না হলে আপনি লক্ষ্য অর্জনে কামিয়াব হবেন না। একটা উদাহরণ দেই। এই যে আপনি শাহজাহান খানের মতো একজন বিতর্কিত কমেডিয়ানকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ কমীটির সভাপতি বানালেন; কাজটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? আপনার কি যোগ্য লোকের অভাব? আর এখন দেখেন, শিল্পমন্ত্রী বলে দিলেন, ওখানে কোন রাসায়ানিক পদার্থের গুদাম ছিল না! আপনার দরকার যোগ্য লোকের, যারা আসলেই কাজ করবে। ''মর্ণিং শো’জ দ্য ডে'' বলে ইংরেজিতে যে কথা আছে, তা তো এমনি এমনি বলা হয় না। এই লোকের কথা-বার্তাতেই পরিস্কার যে উনি দায়িত্ব সচেতন নন। কাজেই আরো ঝামেলা পাকানোর আগেই এনাকে বিদায় করে দেয়া উচিত। বাংলাদেশের আসলে এখন কোন কমেডিয়ানের দরকার নাই, দরকার গুটিকয় কাজের লোকের। এসব অযোগ্য লোকজন আর তোষামোদকারীদেরকে সরিয়ে একটু ভালো করে কান পাতুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। শুনতে পাবেন, দেশের মানুষ কি বলছে; তারা আসলে কি অবস্থায় আছে, কি চায়!!
আমি যদি ভূল না শুনে থাকি তাহলে যতোদূর জানি, আপনি ভবিষ্যতে আর প্রধানমন্ত্রী হতে ইচ্ছুক নন। যদি তাই হয়, তাহলে আমার সবিনয় অনুরোধ; এই টার্মে এমনকিছু করুন, যাতে করে বাংলাদেশের জাতী-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সাধারন মানুষ ভবিষ্যতে যখনই আপনার নাম নেবে, শ্রদ্ধায় মাথা নত করে যেন নেয়। আল্লাহ আপনাকে যে সুযোগ দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের কতোজনকে দিয়েছেন.......আপনিই চিন্তা করুন। এটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা বিশাল নেয়ামত। তাছাড়া মৃত্যুর পর জবাবদিহিতার ব্যাপারও তো আছে, তাই না! আমি আরও শুনেছি, আপনি নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন, ভোরে পবিত্র কোরান শরীফ তেলাওয়াত করেন। আল্লাহর প্রতি যার এতো শ্রদ্ধা, এতো ভক্তি, এতো আনুগত্য; তিনি কোন যুক্তিতে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অস্বীকার করবেন?
এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
অকালে স্বজন হারানোর বেদনা আপনার চাইতে বেশী কয়জন বোঝে? আমরা সবাই জানি, মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী সাধারন ঘটনা। তাকে স্বাভাবিক নিয়মেই আসতে দিন। অনাকাংখিত মৃত্যু তো কারো কাম্য না। আপনি বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করতে চাইছেন। প্রশংসা করার মতো একটা ব্যাপার। আপনার এই ইচ্ছাকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাতে চাই। কিন্ত মাননীয় দেশনেত্রী আপনি নিশ্চয়ই জানেন, তবুও বলছি। উন্নত বিশ্ব মানে কিন্তু কতোগুলো ফ্লাইওভার, ব্রীজ কিংবা স্কাইট্রেন অথবা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিই শুধু না। উন্নত দেশ মানে হচ্ছে, একই সাথে সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় একখন্ডে নিরাপদে বাসায় প্রিয়জনদের কাছে ফেরার নিশ্চয়তা। আপনি হয়তো বলবেন, উন্নত দেশে কি কোন দূর্ঘটনা ঘটে না!! সবিনয়ে জানাই, জ্বী ঘটে; তবে সেগুলো আক্ষরিক অর্থেই দূর্ঘটনা। আর সেখানে জবাবদিহীতা থাকার কারনে এসব দূর্ঘটনার ফ্রিকোয়েন্সি সহ্যসীমা অতিক্রম করে না সহসা।
আপনার কিছুটা মুল্যবান সময় নিলাম, সে জন্যে দুঃখিত। তবে দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের অভিভাবক আপনি; এই বিপুল জনসংখ্যার একজন হিসাবে এটুকু সময় তো আপনার কাছে দাবী করতেই পারি। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই বিশ্বের বুকে একদিন মাথা উচু করে দাড়াক, এই কামনা করছি।
আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, যাদের সীমাহীন লোভ, লালসা কিংবা অবহেলার কারনে এই ঘটনা, তাদের চিহ্নিত করুন। নিয়মিত শীতনিদ্রায় যাওয়া এসব সরীসৃপদের নিবৃত্ত করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। অতিদ্রুত এদের দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তি দিন, যাতে করে অন্যরা সাবধান হতে পারে। নয়তো এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আপনি ঠেকাতে পারবেন না কখনও।
এ দাবী আমার, দেশের সমস্ত সাধারন মানুষের, নিহতদের আত্মীয়-পরিজনের। সর্বোপরি, পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া প্রতিটি মানবদেহের আত্মার। অন্যের অপরাধের বোঝা কেন আপনি শুধু শুধু নিজের কাধে তুলে নিবেন? কোন যুক্তিতে??
আপনি কি পারবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন। সর্বান্তঃকরণে এবং আন্তরিকভাবেই আপনার ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করছি।
বিনীত,
এদেশের একজন অতি সাধারন নাগরিক।।
ছবিঃ বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম এর সৌজন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১৩