চতুর্থ পর্বঃ view this link
সকালে চোখের উপর রোদ পরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল মাশুকের। ঘড়িতে দেখলো সাতটা বাজে। সজীব বিছানায় নেই, এটাচড বাথরুম থেকে পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। উঠে বারান্দায় এসে দাড়ালো ও। সামনের বড় বড় গাছগুলোতে প্রচুর পাখী। ডাকাডাকি, লাফালাফি চলছে সমানতালে। নিজের মনেই হাসলো মাশুক। কাল রাতে সম্ভবতঃ মেয়েটা আসেনি, কিংবা এলেও ওদের ঘুম দেখে আর ডিস্টার্ব করেনি। হাজার হলেও বৃটিশ ভুত, ভদ্রতাজ্ঞান প্রখর হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গতঃ! কিংবা এটাও হতে পারে যে, ওদের আসার খবরই পায়নি এখনও!
বাথরুম থেকে বের হয়ে মাশুককে একা একা হাসতে দেখে সজীব বললো,
- কি ব্যাপার, খুব খুশী মনে হচ্ছে?
- দুঃখের কিছু যেহেতু ঘটেনি, খুশীই তো হওয়ার কথা! তবে ভুতটা না আসাতে মনটা একটু খারাপ।
- আমি তো তোকে অনেকবারই বলেছি, ভুত-প্রেত বলে কিছু নাই। বনের বাঘে খায় না, খায় মনের বাঘে! যাই হোক, ধীরে-সুস্থে তৈরী হয়ে নে। বের হই। আমাদের এখানকার প্রোগ্রাম কি?
- প্রোগ্রাম তো জানিসই। মাশুক বললো। যতোক্ষন খুশী স্টোনহেইন্জে আর এর আশেপাশে সময় কাটাবো। শহরে ঘোরাঘুরি করবো। আগামীকাল এখানে-ওখানে অলস সময় কাটাবো। তারপর রাতে রক্তিম চাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে স্টোনহেইন্জকে উপভোগ করে পরদিন সকালে ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন!
পরিকল্পনা মতোই সারাদিন কাটালো ওরা। স্টোনহেইন্জ এর আশেপাশে আর শহরে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। দিনটা খারাপ কাটলো না একেবারে। রাতে 'সো কল্ড বিখ্যাত' ইংলিশ ফিস এন্ড চিপস খেয়ে হোটেলে ফিরলো। বারান্দায় দু’জনে বসে আড্ডা দিল কিছুক্ষন। তবে সারাদিনের ঘোরাঘুরির ক্লান্তিতে বেশীক্ষন পারলো না, ঘুমিয়ে পরলো যার যার বিছানায়।
বজ্রপাতের প্রচন্ড শব্দে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল মাশুকের। পাশে তাকিয়ে দেখলো সজীব ঘুমাচ্ছে মরার মতো। বাইরে বাতাসের প্রচন্ড শব্দ। মাশুক একটু আশ্চর্যই হলো, বজ্রপাতের এতো বিকট শব্দেও সজীবের ঘুম ভাংলো না দেখে! হঠাৎ বারান্দায় চোখ গেল ওর আর সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ের চুল সব দাড়িয়ে গেল সড়সড় করে! মাশুক অনুভব করলো গায়ের প্রতিটা পশমও যেন দাড়িয়ে যাচ্ছে ওর, সেইসঙ্গে কেমন একটা শীত শীত অনুভূতি। নিশিতে পাওয়া মানুষের মতো বারান্দার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ও, নড়াচড়া করার একবিন্দু শক্তিও নাই যেন ওর শরীরে!
বারান্দায় সাদা একটা অবয়ব দাড়িয়ে, নাকি ভেসে আছে বোঝা যাচ্ছে না ঠিক! পেছনটা দেখা যাচ্ছে। প্রচন্ড বাতাসে সাদা কাপড় উড়ছে অনেকটা শাড়ীর আচলের মতো করে। মাশুক জ্ঞান হারায়নি, চিন্তা শক্তিও ঠিক আছে; তবে ভয়ে নাকি অন্য কোন কারনে জানেনা, নড়াচড়া করতে পারছে না ও। সজীবকে ডাকতে গিয়ে বুঝতে পারলো গলা থেকে কোন শব্দও বের হচ্ছে না। দেখলো, আস্তে আস্তে ওর দিকে ঘুরে যাচ্ছে অবয়বটা!
যা ভেবেছিল, একটা মেয়ে। বাইরে আবছা আলো, কিন্তু মেয়েটাকে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে ও। নতুন করে আর কি হবে, বাকরুদ্ধ তো হয়েই ছিল। মেয়েটার অপার্থিব সৌন্দর্য্য দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল মাশুক। মেয়েটার চেহারায় এক অন্যরকমের বিষাদ। হঠাৎ মাশুকের মনে হলো মাথার ভিতরে কে যেন বললো,
- ভয় পেয়ো না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে আসিনি।
মেয়েটার ঠোট বিন্দুমাত্রও নড়তে দেখেনি। বিদ্যুৎ চমকের মতো ওর মাথায় এলো, টেলিপ্যাথি! মেয়েটা টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কথা বলছে ওর সাথে! মাশুক মনে মনে বললো,
- তাহলে কেন এসেছ?
- আবারও বলছি, ভয় পেয়ো না। তোমার সাহায্য দরকার আমার। তুমিই প্রথম ব্যাক্তি, যে আমাকে দেখে জ্ঞান হারায়নি! তুমিই পারবে আমাকে এই যন্ত্রনাদায়ক জীবন থেকে মুক্তি দিতে। যাতে ভয় না পাও, তা নিশ্চিত করতে আমি তোমার কাছেও আসবো না, এখান থেকেই কথা বলবো। ভয় পাচ্ছো না তো?
- পেয়েছিলাম, আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক ভয় পেয়েছিলাম। এখন আর ততোটা পাচ্ছি না। তবে এটাও বুঝতে পারছি না যে আমি কিভাবে সাহায্য করবো তোমাকে?
- বলছি, যতোটা সংক্ষেপে পারা যায়। তোমাকে সম্পূর্ণটা জানতে হবে আগে।
আমার নাম লিয়ানা। হাজার হাজার বছর আগে এখানে একটা গোত্র বাস করতো। আমার বাবা ছিল সেই গোত্রের প্রধান। আমরা চন্দ্র দেবতাদের পুজা করতাম। প্রধান দেবতার নির্দেশে আমাদের লোকেরা একটা চন্দ্র মন্দির তৈরী করে, যেটাকে তোমরা স্টোনহেইন্জ নামে চেনো এখন।
আমার একজন ভালোবাসার মানুষ ছিল, মিরিল নাম। আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতাম পাগলের মতো। সব যুগেই, সব ভালোবাসারই কিছু শত্রু থাকে। আমাদের ভালোবাসারও তেমনই দু’জন শত্রু ছিল, আমার বাবা, আর প্রধান পুরোহিত।
তবে দু’জনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। বাবা চাইতো না, গোত্র প্রধানের মেয়ের সাথে একটা সাধারন ছেলের সম্পর্ক থাকুক। আর পুরোহিতের গোপন ইচ্ছা ছিল আমাকে ভোগ করার, যেটা মিরিলের জন্য সম্ভব হচ্ছিল না। দুজনের উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। তাই দু’জনে মিলে ষড়যন্ত্র করে, মিরিলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার। পুরোহিতের ইচ্ছা অবশ্য বাবার জানা ছিল না। মিরিল পুরো গোত্রে খুবই জনপ্রিয় ছিল। সবার আশা ছিল যে, বাবার পর ওই হবে গোত্র প্রধান। তাই ওকে সরানোটা খুব সহজসাধ্য ছিল না।
নিয়ম ছিল, মন্দির তৈরীর পর দেবতার সন্তুষ্টির জন্য মন্দিরে প্রথম প্রার্থনার দিন একটা প্রান উৎসর্গ করতে হবে, অর্থাৎ নরবলি দিতে হবে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে পুরোহিত প্রচার করে যে, বলিকে হতে হবে একজন সুপুরুষ, যুবক; আর সে হবে পুরো গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, তবেই দেবতারা সন্তুষ্ট হবে। ফলে মিরিলকে উৎসর্গ করার ব্যাপারটা সবাইকে বোঝাতে কোন সমস্যা হয়নি। ও ছিল প্রচন্ড সাহসী আর গোত্রের প্রতি নিবেদিত প্রান। দেবতারা অসন্তুষ্ট হলে গোত্র ধ্বংস হয়ে যাবে এটা চিন্তা করে ও নিজেও রাজী হয়ে যায় নিজেকে উৎসর্গ করতে। আমাকে বোঝায়, দেবতাদের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই, আর তাদের আশির্বাদেই আমরা মৃত্যুর পর আবার মিলিত হবো অনন্তকালের জন্য।
আমার আর কিছুই করার ছিল না। দেবতাদের নির্দেশ ছিল, রক্তিম চাদের রাতেই এই ধর্মীয় কাজ অর্থাৎ বলী সম্পাদন করতে হবে। সেই ভয়াবহ রাতে আমি এখানেই বসে ছিলাম। এটা তখন ছিল একটা পাহাড়-চুড়া, আর পিছনেই ছিল গভীর খাদ। পুরোহিত ধর্মীয় কাজ শেষ করে এসে আমাকে জানায় যে, মিরিল এখন আর বেচে নেই, কাজেই ওর কাছে আত্মসমর্পন করা ছাড়া আমার আর কোন গতি নেই। ও যখন আমাকে ধরতে আসে, তখন আমি ওই খাদে লাফিয়ে পরি।
তখন পর্যন্ত সব ঠিক মতোই এগুচ্ছিল। আমি মিরিলের অনন্ত সঙ্গলাভের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখনই দেবতাদের অভিশাপ আমার উপর নেমে এলো। আমি জানলাম, রক্তিম চাদের পবিত্র রাতে আত্মহত্যা মহাপাপ। এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত তখনই শেষ হবে যখন মিরিলের বয়সী এক যুবক, কোন এক রক্তিম চাদের রাতে একটা নির্দিষ্ট কাজ করার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করতে স্ব-ইচ্ছায় রাজী হবে। তুমি জানো, এই চাদের রাত বহু বছর পর পর আসে। আর যখন আসে, তখন বাকী সব শর্ত পূরণ করে যদিও বা কাউকে পাই, তাকে কিছু বলার আগেই সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়!
- বুঝলাম, মাশুক মনে মনে বললো। আরো বিভিন্ন জায়গায় তো এতোকাল চেষ্টা করতে পারতে। ঠিক এখানেই কেন তোমাকে সাহায্যকারী খুজতে হবে?
- এখানেই আমি আত্মহত্যা করি। তাই দেবতাদের নির্দেশে আমার আত্মা এখানেই আবদ্ধ। সবই তোমাকে বললাম। এখন করবে আমাকে সাহায্য? তোমার করুণা পেলেই কেবল আমার আত্মার মুক্তিলাভ সম্ভব। আর তাহলেই আমি মিরিলের সাথে মিলিত হতে পারি। সমাপ্তি হতে পারে আমাদের দু’জনের অনন্তকাল অপেক্ষার পালা। এই অন্তঃহীন বিরহ আমি সহ্য করতে পারছি না আর; দয়া করো আমাকে, একটু দয়া করো!
মাশুক দেখলো, লিয়ানার দু’গাল বেয়ে অশ্রুর ধারা নেমে এসেছে। ভুত জীবনে কোনদিন দেখেনি, ভুতের কান্না দেখার তো প্রশ্নই আসে না। ওর খুব ইচ্ছা করছিল, লিয়ানার সাথে একটা সেলফি তোলে! কিন্ত লিয়ানার এই অবস্থায়, এমন প্রস্তাব দিতে ওর বিবেকে বাধলো। বললো, আমি সাহায্য করলে যদি তোমার আত্মা মুক্তি পায়, তাহলে অবশ্যই করবো। বলো কি করতে হবে আমাকে? তাছাড়া, সাথে আমার বন্ধুও আছে। ওর কিছু করার থাকলে সেটাও আমাকে বলতে পারো।
- না। সমস্ত কাজ তোমাকে একাই করতে হবে বন্ধু। কেউ যেন কিছু না জানে, এমনকি তোমার বন্ধুও না। মূল কাজটা করতে হবে ঠিক মধ্যরাতে। সেই হিসাবে রাতে যথাসময়ে তুমি বেরিয়ে পড়বে। তার আগেই তোমার বন্ধুকে আমি ঘুম পাড়িয়ে দিব। চন্দ্র মন্দিরে গিয়ে বৃত্তের ভিতরের যে কোনও জায়গায় আধহাত পরিমান একটা গর্ত খুড়বে। তারপর ঠিক মধ্যরাতে, আকাশে রক্তিম আভা যখন পরিপূর্ন রুপ ধারন করবে, তখন এই বাক্সটা সেই গর্তে রেখে পুড়িয়ে দিবে। শেষে, গর্তটাকে আবার মাটি দিয়ে ভরাট করে দিবে। ব্যাস, তাহলেই আমার প্রায়শ্চিত্ত শেষ হবে। লিয়ানা ছোট্ট একটা বাক্স বের করলো। বললো, বাক্সটা খুলবে না দয়া করে। তাহলে কিন্তু সব নষ্ট হয়ে যাবে, আমিও আর কোনদিন মুক্তি পাবো না। সকালে বাক্সটা তোমার বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ারে পাবে। আমি আর মিরিল তোমার উপকারের কথা কোনদিনও ভুলবো না। বিদায় বন্ধু। ভালো থেকো।
মাশুকের চোখের সামনে লিয়ানা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসও থেমে গেল; চারদিক সুনসান, নিস্তব্ধ। ঘুমে দু’চোখ জড়িয়ে এলো মাশুকের।
সকালে সজীবের বিরাট হৈ চৈ আর চেচামেচিতে ঘুম ভাংলো মাশুকের। সে নাকি অনেকক্ষন ধরে ডাকাডাকি করছে, কিন্তু মাশুকের ঘুম ভাঙ্গাতে পারছে না। যাই হোক, মাশুককে উঠতে দেখে শান্ত হলো ও। মাশুক জানিয়ে দিল, আজ আর কোথাও বের হবে না, শরীরটা ভালো ঠেকছে না। সারাদিন বিশ্রাম নিবে। অনেক জোরাজুরি করেও না পেরে শেষে সজীব একাই বেরিয়ে গেল। আসলে মাশুক চাচ্ছিল একটু একা থাকতে। সজীব বেরিয়ে যেতেই বাক্সটা বের করলো ও। ছোট্ট একটা কালো রং এর কাঠের বাক্স। সারা শরীরেই অদ্ভুদ সব আকি-বুকি, যার মর্ম উদ্ধার করা ওর পক্ষে অসম্ভব। খুব ইচ্ছা করছিল খুলে দেখে, কিন্তু লিয়ানার দুঃখী চেহারা মনে ভেসে উঠায় আর খুললো না। সারাটা দিন শুয়ে, বসে আর ঝিমিয়েই কাটিয়ে দিল ও।
সন্ধ্যার পরপরই ফিরে এলো সজীব। সারাদিন কি কি করলো তার সবিস্তার বর্ণনা দিল। হু হা ছাড়া তেমন কিছুই বললো না মাশুক। বারান্দায় বসে রইলো একভাবে। শেষে রাত ১০ টার দিকে সজীব জানালো, ও আর চোখ খোলা রাখতে পারছে না। টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। এগারোটার দিকে উঠলো মাশুক। সবকিছু আগেই রেডি করে রেখেছিল। হোটেল থেকে স্টোনহেইন্জ প্রায় তিরিশ মিনিটের হাটা-দুরত্ব, এতো রাতে ট্যাক্সি ডাকার ঝুকি নিল না ও। হেটেই চলে গেল।
কোন রকমের ঘটনা বা সমস্যা ছাড়াই কাজগুলো লিয়ানার কথামতো সারলো ও। মাশুকের মনে হলো, লিয়ানা প্রতিটা মুহুর্তেই ওকে দেখছে, ওর সঙ্গেই আছে। যখনই একটু জোরে বাতাস দিয়েছে, ওর মনে হয়েছে এই বাতাসের মধ্যে লিয়ানার প্রাচীন দীর্ঘ-নিঃশ্বাসও মিশে আছে!
ঠিক বারোটার সময় সব কাজ শেষে আকাশে, রক্তিম চাদটার দিকে তাকালো মাশুক। দেখলো, সাদা একটা কুয়াশার মতো মেঘ চাদের দিকে ভাসতে ভাসতে গিয়ে এক সময় মিলিয়ে গেল। হয়তো লিয়ানার আত্মার মুক্তি ঘটলো চিরতরে। চাদের দিকে তাকিয়ে আপনমনে মাশুক বললো, ভালো থেকো লিয়ানা, তোমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। মিরিলের সাথে তোমার বহু প্রতীক্ষিত মিলন মধুর হোক। প্রার্থনা করি, দুঃখ যেন তোমাকে আর কোনদিন ছুতে না পারে! কখনও না, এক মুহুর্তের জন্যও না। তোমাদের দু'জনের জন্য অনন্ত শুভ কামনা!!!
ফটো ক্রেডিটঃ গুগল।