somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছা পূরণের গল্পঃ চতুর্থ পর্ব

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তৃতীয় পর্বঃ view this link


আগামীকাল সকাল ৮ টায় এ্যামেসব্যারী যাওয়ার ট্রেন ধরতে হবে। তাই সকাল সকাল ওঠা খুবই জরুরী। ওরা দুজনেই আড্ডা বাদ দিয়ে রাত ১০ টার দিকে শুয়ে পরেছিল। অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করেছে মাশুক। ঘুম কিছুতেই আসে না। শেষে ধ্যাত্তেরি বলে বিছানা থেকে উঠে পরেছে ও। বারান্দায় এসে দাড়ালো। বাইরে বেশ ঠান্ডা। এখন বাজে মাত্র রাত এগারোটা। কিন্তু চারিদিক এতো নির্জন নিস্তব্ধ যে মনে হচ্ছে যেন গভীর রাত। একেবারে দেশের গ্রামের রাতের মতো। মনে হচ্ছে গাছ থেকে একটা পাতা পরলেও শব্দ শোনা যাবে।

মাত্র ক’দিন আগেই দেশে ছিল। কতো মানুষ, হৈ হুল্লোড়, আড্ডাবাজি! আর এখন এখানে মাত্র ওরা দু’জন। জীবন কিভাবে বদলে যায়! পরিবার, আত্বীয় পরিজন, চেনা দেশ, পরিবেশ ছেড়ে এখন একা বিদেশে। একা একা পথ চলা বোধহয় শুরু হয়ে গেল ওর। চিন্তা করতে করতে ফোস করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো মাশুক। তারপর নিজের মনেই হাসলো। এসব কি চিন্তা করছে? কেউ তো ওর উপর কিছু চাপিয়ে দেয়নি। সব সিদ্ধান্ত তো ওর নিজেরই নেয়া। নাহ, এসব এলোমেলো চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমানো দরকার। বেশী রাত করে ঘুমালে ভোরে ওঠাটা কঠিন হয়ে যাবে।

হোটেলের নাম ফেয়ার লন হাউস। সজীব আর মাশুক বসে আছে রিসেপশান থেকে কিছুটা দুরে পেতে রাখা সোফায়। ওদের চেক-ইনের শেষ সময় ছিল বিকাল ২টা। আর ওরা হোটেলে এসে পৌছেছে সাড়ে তিনটার সময়। লেস্টার থেকে এ্যামেসব্যারী ট্রেনে আসা যতোটা সহজ মনে করেছিল ওরা, বাস্তবে তা হয়নি। চারবার ট্রেন বদলাতে হবে, এটা ওদের জানাই ছিল। কিন্তু লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে দু’বার যে ভুল ট্রেনে উঠে পরবে, এটা জানা ছিল না। সব ঝামেলা মিটিয়ে যখন শেষপর্যন্ত ওরা হোটেলে এসে পৌছালো, তখন ফ্রন্ট ডেস্কে বসা রিসিপশনিষ্ট মেয়েটা মধুর একটা হাসি দিয়ে জানালো যে, ওদের বুকিং ক্যানসেল করে মাত্র কিছুক্ষন আগে আরেকটা গ্রুপকে ওদের রুম দু’টো দিয়ে দেয়া হয়েছে! মাশুক হতাশ হয়ে বললো,
- তোমাদের আর কোনও রুম নাই?
- সব রুমই বুক হয়ে গিয়েছে। বুঝতেই পারছো, এখন ট্যুরিস্ট সিজন। তোমাদের চেক-ইনের শেষ সময় ছিল ২টা। আমরা তিনটা পর্যন্ত তোমাদের জন্য অপেক্ষা করেছি। ফোন নাম্বারও দাওনি যে কন্ট্যাক্ট করবো!
- এখন আমরা কি করবো? তুমি কোন সাজেশান দিতে পারো? মাশুক হতাশ হয়ে বললো।
- অন্য কোনও হোটেলে চেষ্টা করতে পারো। তবে এই সময়ে বুকিং ছাড়া রুম পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। নয়তো, ম্যানেজারের জন্য অপেক্ষা করতে পারো। সে হয়তো একটা ব্যবস্থা করতে পারবে।
- তোমার ম্যানেজার আসবে কখন?
- এসে পরবে। তোমরা অপেক্ষা করতে চাইলে ওখানে বসো। আর কফি মেশিন ওখানে। ইশারায় একটা দিকে দেখালো। চাইলে কফি খাও, টাইম পাস করো।

তখন থেকে প্রায় এক ঘন্টা ধরে ওরা টাইম পাস করছে। জঘন্য স্বাদের তিন কাপ কফিও খেয়ে ফেলেছে। তবু ম্যানেজার ব্যাটার কোন দেখা নেই!

শেষ পর্যন্ত অতীষ্ঠ হয়ে ওরা যখন ঠিক করলো যে অন্য কোথাও চেষ্টা করবে, তখন দেখলো মধ্যবয়সী একজন ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
- হাই ল্যাডস, আমি এ্যাডাম! ক্যারেন বললো, তোমরা নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছো? তোমাদের সমস্যাটা আমি শুনেছি। আমি আসলেই দুঃখিত। টাইমলি আসতে পারলে না কেন?
- আমরা আসলে এদেশে নতুন। লেস্টার থেকে আসতে গিয়ে দু’বার ভুল ট্রেনে উঠে পরেছিলাম। তুমি কি আমাদের কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারো? সজীব বললো।
- আমি আবারও দুঃখিত! স্টোনহেইন্জের সবচেয়ে কাছের হোটেলে যেহেতু তোমরা বুকিং দিয়েছিলে, ধরে নিতে পারি ওটা দেখতেই এসেছো। কিন্তু এই মুহুর্তে ধারে কাছের কোন হোটেলে তোমরা জায়গা পাবে না। দুরে চেষ্টা করতে পারো। আমাদের হোটেলে একটা রুম অবশ্য আছে......সাধারনতঃ আমরা ওটা গেস্টদেরকে দেই না।
- দাও না কেন? সজীব কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
- টু বি অনেস্ট, অনেক গেস্টই কমপ্লেইন করেছে। আমি বা হোটেলের কোন স্টাফ কখনও কিছু দেখিনি তবে কমপ্লেইন হচ্ছে, ওখানে নাকি কিছু প্যারানর্ম্যাল এক্টিভিটি দেখা যায়, কিংবা অনুভব করা যায়।
- তাহলে দরকার নাই ওই রুমের। আমরা বরং.........

মাশুক এতোক্ষণ বসে বসে ওদের কথা শুনছিল। সজীব কথা শেষ করার আগেই জিজ্ঞেস করলো,
- কি ধরনের প্যারানর্ম্যাল এক্টিভিটি?
- ওখানে থাকা সব গেস্টই যে কমপ্লেইন করেছে, বিষয়টা এমন না। তবে ম্যানেজমেন্ট থেকে বলে দিয়েছে ওটা কাউকে না দেয়ার জন্য। কিন্তু তোমরা যদি জেনেশুনে নিতে চাও, আমি চিন্তা করতে পারি।
- কিন্তু কি ধরনের প্যারানর্ম্যাল এক্টিভিটি তা তো বললে না!
- তেমন কিছু না। সাদা পোষাকের এক মেয়েকে নাকি মাঝে-মধ্যে দেখা যায়। তবে সে কোনদিন কারো কোন ক্ষতি করেনি। এখন আসলেই দেখা যায় নাকি মনের ভুল, তা আমি বলতে পারবো না।
- আমাদেরকে দশমিনিট সময় দাও, আমরা জানাচ্ছি। সজীব বললো।
- আরেকটা কথা। যেতে গিয়েও ঘুরে দাড়িয়ে ম্যানেজার বললো। তোমরা যদি সত্যিই ওই রুমে থাকতে চাও তাহলে আমাকে লিখিত দিতে হবে যে, তোমরা সবকিছু জেনে-শুনেই থাকছো। বুঝতেই পারছো, তোমরা যদি সত্যি সত্যিই ভয় পাও আর কমপ্লেইন করো........আমাকে জবাব দিতে হবে তো! শেষে আমার চাকুরী নিয়ে টানাটানি পরবে!

মাশুককে এক কোনায় টেনে নিয়ে সজীব বললো,
- শুনলি তো, ম্যানেজার ব্যাটা কি বললো! এখন বন্ড সই দিয়ে ভয় পেতে হবে! দ্যাখ, এসবে তোর আগ্রহ আছে, আমার নাই। চল অন্য কোথাও ট্রাই করি।
- তুই কি ভয় পাচ্ছিস?
- না। ভুত-প্রেত আমি বিশ্বাস করি না, তুই জানিস। সবই মনের ভুল। তবে, মনের ভুলেও আমি ভয় পেতে চাই না।
- শোন, ম্যানেজার আরও কি বললো তাও তো শুনলি। আশে-পাশে কোন হোটেলে জায়গা পাওয়া যাবে না। দুরের ব্যাপারেও কোন নিশ্চয়তা নেই। আর আমরা দু’জন থাকবো। ভয়ের কি আছে? আর যদি সত্যিই কিছু থাকে...... আমি এই সুযোগ হারাতে চাই না।

সজীব জানে এই পরিস্থিতিতে ও মাশুককে ঠেকাতে পারবে না। বললো, ঠিক আছে। তোর যা ইচ্ছা কর। এখন ভালোভাবে লেস্টারে ফিরতে পারলে আমি বাচি। মুচকি হাসি দিয়ে মাশুক রিসেপশান ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল।

রুমে ঢুকে তো মাশুক দারুন খুশী। সুন্দর একটা রুম। চারিদিকে বড় বড় জানালা। লাগোয়া বারান্দায় দাড়ালে দুরে, পাহাড়ের উপর স্টোনহেইন্জ দেখা যায়। চার পাশের দৃশ্যও দেখার মতো। বারান্দায় দাড়িয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মাশুক বললো,
- সব কিছুরই একটা ফ্লিপ সাইড আছে, কি বলিস? টাইমলি আসলে তো আর আমরা এই এতো দারুন রুমটা পেতাম না!
- তা ঠিক। তবে কপালে কি আছে সেটা তো দিনে বোঝা যাবে না! রাতটা আসুক!
- আসুক। আমরা দু’জন আছি না? ওই জিনিসটা যদি সত্যি সত্যিই আসে তাহলে তোর কিছু বলার দরকার নাই। যা বলার আমিই বলবো। হাসতে হাসতে বললো মাশুক।

সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হয়ে টাউন সেন্টার আর আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখলো ওরা। তারপর রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে সাড়ে নয়টার দিকে হোটেলে ফিরে এলো। সারাদিনের ক্লান্তিতে নাকি ভয়ে কে জানে, দশটার দিকে সজীব বললো, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি শুয়ে পড়লাম। ওই মেয়ে ভুতটা যদি আসে, খবরদার আমাকে ডাকবি না। বলে পাতলা কম্বলটা দিয়ে পুরোটা শরীর ঢেকে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। মাশুকও ক্লান্ত। সারাদিনে ধকল তো আর কম যায়নি! বারান্দায় কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে, আকাশ-বাতাস চিন্তা করে ও-ও শুয়ে পড়লো।

ফটো ক্রেডিটঃ গুগল।

ইচ্ছা পূরণের গল্পঃ পন্চম (শেষ) পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৫৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×