ইস্তান্বুলের অলি-গলিতে কয়েকটা দিন - দ্বিতীয় পর্ব
আজও খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো, ফজরের আজানের শব্দে। ইংল্যান্ডে তো মসজিদের আজান শোনার সৌভাগ্য হয় না! হোটেলের কাছেই একটা মসজিদ আছে, শুয়ে শুয়েই আজান শুনলাম। মনটা অন্যরকম ভালো হয়ে গেল।
আজকে বেশ ব্যস্ত প্রোগ্রাম। সুলতান আহমেত কমপ্লেক্স এবং এর আশেপাশে যে কয়টা দর্শনীয় স্থান আছে, সবগুলোই আজ দেখতে হবে, অন্ততঃ যে কয়টা পারি! নাস্তা করে সকাল সাড়ে নয়টায় হোটেল থেকে বের হয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য হাগিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম, প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থানের আলাদা টিকেট তো কাটাই যায়, বেশীর ভাগ স্থান কাভার করে এমন কম্বাইন্ড টিকেটও করা যায়! দামও একটু সস্তা পড়ে! যেহেতু আমার ইচ্ছা যতোবেশী সম্ভব দেখা, তাই কম্বাইন্ড টিকেট টাই করে ফেললাম।
হাগিয়া সোফিয়ার তৈরীকাল ৫৩২-৫৩৭ খৃষ্টাব্দ, একটা ক্যাথেড্রাল হিসাবে। ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত এটা চার্চ বা ক্যাথেড্রালই ছিল। এরপর মুসলমানদের অধীনে আসার পর এটাকে মসজিদে রুপান্তর করা হয়, সবশেষে ১৯৩৫ সালে এটাকে মিউজিয়ামে রুপান্তর করা হয়। আমি যখন যাই, তখন এর ভিতরে রক্ষনাবেক্ষনের কাজ চলছিল, তাই প্রানভরে দেখতে পারি নাই। কয়েকটা ছবি দিলাম।
মুসলিম এবং খৃষ্টান আমলের ফ্রেসকো, পাশাপাশি
খৃষ্টান আমলে এখানে রাজ্যাভিষেক হতো
খৃষ্টান আমলের ফ্রেসকো উদ্ধারের চেষ্টা
মসজিদ সময়কালের মিম্বর
আরও তিনটি ছবি
হাগিয়া সোফিয়ার পাচটা গম্বুজের নীচের স্থাপনায় সুলতান, তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং নিকটাত্বীয়দের সমাধি রয়েছে। সমাধিগুলোর চারটা ছবি দিলাম।
পরের গন্তব্য বিখ্যাত ’ব্লু মস্ক’। কপাল অত্যাধিক খারাপ হলে যা হয়! দেখি, নোটিশ ঝুলানো, রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মসজিদ ট্যুরিষ্টদের জন্য বন্ধ। রমযানের পর খুলবে আবার। মন খারাপ করে চলে গেলাম টপক্যাপি প্যালেস দেখতে।
১৪৫৯ সালে এই প্রাসাদের নির্মানকাজ শুরু হয়। নির্মানের পর এটি সুলতানের বাসভবন হিসাবে ব্যাবহার করা শুরু হয়। ১৮৫৬ সালে সুলতান আব্দুল মেজিদ - ১ নবনির্মীত দোলমাবাহচে প্রাসাদকে বাসস্থান হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করলে টপক্যাপি এর গুরুত্ব হারায়। ১৯২৩ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৯২৪ সালে এটাকে মিউজিয়াম হিসাবে ঘোষনা করা হয়।
মূল প্রাসাদে ঢোকার তোরণ
মূল প্রাসাদের জায়গায় জায়গায় এমন পানিপানের ব্যবস্থা
প্রাসাদের ফুলের বেডের দুইটা স্যাম্পল ছবি
যুবরাজদের মুসলমানী কক্ষের ছাদের কারুকাজ। যুবরাজরা ছাদের কারুকাজ দেখে হয়তো ব্যাথা ভোলার চেষ্টা করতো!!!
এই ঘরে মহানবী (সাঃ) এর আঙরাখা সংরক্ষিত আছে। ভিতরে ঢোকা নিষেধ।
প্রাসাদের তৃতীয় আঙ্গিনাতে সুলতানের ব্যক্তিগত কয়েকটা কক্ষে মহানবী (সাঃ), বিভিন্ন নবী-রাসুল এবং চার খলিফার ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী রাখা আছে। দেখতে দেখতে কখন জানি চোখে পানি চলে এসেছিল, নিজেও জানিনা। ছবি তোলা খুবই স্ট্রিক্টলি নিষেধ, তাই আপনাদেরকে দেখাতে পারলাম না।
প্রাসাদের একটা ইন্চিও কোনরকমের কারুকাজ ছাড়া নাই। ফুটপাথ, বারান্দা সম্পূর্ণটাই শ্বেত / মার্বেল পাথরের। কয়েকটা র্যান্ডম ছবি দিলাম।
এবার হারেমের কয়েকটা ছবি। প্রথমেই রাণীমাতার বসার ঘরের দুইটা ছবি
হারেমে সুলতানের ব্যক্তিগত বিশ্রামকক্ষ
হারেমে একটা করিডোরের দেয়ালের কারুকাজ
প্রাসাদে চাকচিক্য আর বিলাসিতার ছড়াছড়ি দেখে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের কারন কিছুটা বুঝতে পারলাম। প্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেলাম কাছেই মহানবী (সাঃ) এর একজন সাহাবীর মাজারে। ইনার নাম হযরত আব্দুর রহমান সামী তুরবেসী (রাঃ)। খুব বেশী জানতে পারিনি উনার সম্পর্কে, শুধু জানতে পারলাম মুসলমানদের কোন একটা কন্সট্যান্টিনোপল অবরোধের সময় ইনি শহীদ হন।
ছবিঃ প্রথমটা নেট থেকে, বাকিসব আমার ক্যামেরা ও ফোন থেকে।
তথ্যঃ বিবিধ।
ইস্তান্বুলের অলি-গলিতে কয়েকটা দিন - চতুর্থ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৪২