১. মাসুদা একটা হাসপাতালে আয়ার কাজ করে। রাতে ঘরে ফিরছিলো এক নির্জন রাস্তা দিয়ে। ওর হাতে ঝুলানো একটা পলিথিনের ব্যাগে টিফিন বক্স আর কয়েকটা ছোটখাটো জিনিস। হঠাৎ ঠিক পিছনে একটা খসর খসর শব্দে চমকে উঠলো ও। মনে হচ্ছে ঠিক ওর পিছনে কেউ হাটছে, ওকে অনুসরণ করছে! দাড়িয়ে পরলো মাসুদা। শব্দটা আর হচ্ছে না, মানে অনুসরনকারীও দাড়িয়ে পড়েছে!
মনে পড়লো ওর গ্রামে থাকা মা একবার বলেছিল, শুনশান রাস্তায় হাটলে যদি মনে হয় তোর পিছনে কেউ হাটতাছে তাইলে ভূলেও পিছন ফিরা তাকাবি না কইলাম মাসুদা। কিছু ভূত আছে, এরা মাইয়াগো পিছনে পিছনে হাটে আর পিছন ফিরা তাকাইলেই ঘাড় মটকায়!
সেটা মনে করেই পিছনে একবারও না তাকিয়ে এবার দ্রুত হাটা দিল ও। এবার পিছনের শব্দটাও দ্রুততর হলো। আর আগুপিছু চিন্তা না করে হেচকির মতো শব্দ তুলে ব্যাগ-ট্যাগ ফেলে ঝেড়ে দৌড় দিল মাসুদা। বেশকিছুটা দৌড়ানোর পর একটা রিক্সা দেখে দাড়ালো, মানুষের সাড়া পেয়ে এবার পিছনে তাকালো। কেউ নেই!! প্রচন্ড ভয় পেয়েছে আজ, সেই সঙ্গে বড় বাচাও বেচেছে!!
বুকে একগাদা থুতু ছিটিয়ে বাড়ীর পথ ধরলো। শব্দটাও এখন নেই আর!!!
২. দোকানটা বন্ধ করতে আজ দেরীই হয়ে গেলো হরিপদর। আজ অমাবষ্যার রাত, গ্রামের রাস্তায় হাটাই মুশকিল। তাই ভেবেছিলো আজ তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ী ফিরবে। হিসাব শেষ করতে করতে সেই দেরীই হয়ে গেলো। তালা দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারেই বেড়িয়ে পড়লো। এই যাহ, টর্চটা তাড়াহুড়োয় দোকানে ফেলে এসেছে! যাকগে, ভাবলো মিনিট পনেরোর পথ, চোখ বন্ধ করেই যেতে পারে ও।
পথেই একটা কালী মন্দির পরে, তার কাছে এসেই পা দ্রুততর হলো হরিপদর। অন্ধকারও হয়েছে বটে আজ, আর এদিক টা তো একেবারে নিকষ কালো, ভাবলো ও। হঠাৎ কালীমন্দিরের দিক থেকে মেয়েলী গলার আওয়াজ ভেসে এলো,
- হরিপদ, ওই হরিপদ, এতো তাড়া ক্যান? সেইসঙ্গে হি হি হি হি হাসি!
- কে? কে হাসে?? আতকে উঠে ফোপানীর মতো আওয়াজ বেরুলো হরিপদর গলা দিয়ে।
- আমি কালী!
- জয় মা কালী! রক্ষে করো মা কালী!! দুই হাত জোড় করে কপালে ঠেকালো ও।
- মা কালী না গো, আমি তোমার পাশের বাড়ীর কালী!! আবার হি হি হি হি হাসি!
- ধুুর শালীর শালী, খামাখা ডর দেখাস, আগে কইবি না?
৩. প্রানের বন্ধু সজীবের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে রিয়াদ। পুরাই শহরের ছেলে রিয়াদের পুরানো জমিদার বাড়ী টাইপের বাড়ীতে থাকার শখ অনেকদিনের। সজীবের দাদার দাদা সেই আমলে লাখপতি হয়ে নিজ গ্রামে বাড়ী বানিয়েছিলেন। সজীব অনেকবারই ওকে বলেছে, আমাদের গ্রামের বাড়ীতে গেলে তোর এই শখ পুরাই মিটবে দোস্ত!!
আজ যাই, কাল যাই করতে করতে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হলো গ্রীষ্মের ছুটিতে। এসে খুবই খুশী রিয়াদ। আসলেই আলীশান বাড়ী, সামনে পিছনে বড় বড় গাছওয়ালা বিরাট বাগান, বিশাল পুকুর। সারাদিন খুব মজা করলো, ইচ্ছেমতো ঘুরলো। রাতে ভূড়িভোজ করে রুমে চলে এলো ঘুমাতে, খুব টায়ার্ড লাগছে ওর। প্রাচীণ আমলের পালংকওয়ালা বিশাল এক রুমে ওকে থাকতে দিয়েছে সজীব। বলেছে ওর দাদার দাদা এই রুমেই থাকতেন। গ্রীষ্মকাল, কিন্তু মোটেই গরম লাগছে না ওর। বিশাল খোলা জানালা দিয়ে বাতাস আসছে হু হু করে।
গভীর ঘুম ভাংলো একটা শীতল হাতের স্পর্শে। কে যেন ওর পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!!
- কে? কে?? প্রচন্ড আতংকে জমে গিয়ে চেচিয়ে উঠলো রিয়াদ।
- আমি, বড় হুজুরের খাস চাকরানী। আইজ দেড়শো বছর ধইরা এই কামরায়ই থাকি। আপনে মেহমান, ঘুমান। আমি পায়ে হাত বুলায়া দেই!!!
রিয়াদ চোখ বুজলো। ঘুমিয়ে গেল আবার? নাকি অজ্ঞান হয়ে গেল???
৪. কাল পহেলা বৈশাখ, অনেক প্রোগ্রাম বন্ধুদের সাথে। তাই রাতে হাল্কা একটু খেয়ে মশারী টানিয়ে, ফ্যান ছেড়ে একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়লো পুলক। গভীর রাতে কোনো এক কারনে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল ওর। দেখলো মশারীর ঠিক বাইরে কোনার দিকে একটা সাদা অবয়ব। বিভিন্ন দিকে নড়ে-চড়ে ওর দিকেই এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে!!
প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো পুলক, কিন্তু মুখ দিয়ে শুধু একটা অপার্থিব অ অ অ শব্দই বের হলো, তারপরই অজ্ঞান হয়ে গেল ও। সকালে পাখীর ডাকে ঘুম ভাংলো নাকি জ্ঞান ফিরলো জানে না ও। রাতের কথা মনে হতেই ভয়ে ভয়ে তাকালো কাল রাতের কোনাটার দিকে। তারপরই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
পহেলা বৈশাখে পরবে বলে ওর কারুকাজ করা সাদা রংএর পান্জাবীটা ধুয়ে হ্যাংগারে করে মশারীর দড়িতে ঝুলিয়ে দিয়েছিল, যাতে করে সারা রাতে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে যায়! ওটা এখনও এদিক-সেদিক দুলছে, কিন্তু দেখতে ভয়ংকর লাগছে না মোটেও!!!
৫. গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে এসেছে রনি। খেয়েদেয়ে ভর-দুপুরে শুয়ে বই পড়ছে ও। একটা ভাত ঘুম দেয়ার ইচ্ছা। চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় শুনলো একটা মেয়ে ওকে ডাকছে। তাকিয়ে দেখলো জানালার বাইরে বারো তেরো বছরের একটা মেয়ে। জিজ্ঞেস করলো, ভাইজান, আমার ছোট ভাইটারে দেখছেন? এইখানেই খেলতে আছিল। না, দেখি নাই, এইখানে খেলবো কেমনে ও? যা ভাগ!! বলে পাশ ফিরে শুলো রনি। আবার বইয়ে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলো!
হঠাৎ কেমন যেন অস্বস্তি লাগলো ওর, কিছু একটা ঠিক নাই! আবার তাকালো জানালার দিকে, মেয়েটা নাই। তারপরই ওর গা শির শির করে উঠলো। ঘাড়ের চুল সব দাড়িয়ে গেল ভয়ে!
ও তো দোতলার একটা ঘরে শুয়ে!!!!
সবাইকে নববর্ষের প্রানঢালা শুভেচ্ছা।
ছবিটা ’নেটের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭