সুশীল বাবুরা খুব খেপেছেন। সাকিব অমন তেড়ে গেলো কেনো, সাকিব কেনো ব্যাটসম্যানদের বেরিয়ে আসতে বললো? সোহান কেনো আঙুল উচু করে কথা বললো? সাকিব কেনো জার্সি খুলে ফেললো? সবচেয়ে বড় কথা, খেলোয়াড়রা জয়ের পর শ্রীলঙ্কানদের দেখিয়ে দেখিয়ে নাগিন ড্যান্স করলো? এসব কী মেনে নেওয়া যায়? ক্রিকেট হলো ভদ্দরলোকের খেলা।
সেখানে গিয়ে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের এ কেমন অভদ্র লোকের মতো কাণ্ড! কিছুতেই এসব কান্ড হজম হচ্ছে না সুনীল গাভাস্কার, সঞ্জয় মাঞ্জরেকারদের। তারা বিদেশী মানুষ। বাংলাদেশীদের ব্যাপার স্যাপার সহ্য নাও হতে পারে। কিন্তু এই ভদ্রলোক সুশীলের তালিকায় দেখছি কিছু বাংলাদেশীও নাম লিখিয়েছেন। তারাও বেশ টেনে টেনে নাকি সুরে বলছেন, না হে বাপু, এটা ঠিক হয়নি। এমন করতে হয় না। এমন করতে হয় না, তো কেমন করতে হয়! দেখুন, আমাদের অনেক কিছুই খারাপ। আমাদের আচরণ খারাপ, উদযাপন খারাপ। কিন্তু স্মৃতিশক্তিটা খুব একটা খারাপ নয়। এই সুনীল গাভাস্কার এখন বড় বড় কথা বলছেন। তিনি বলছেন আইসিসির সাকিবকে নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অথচ এই সুনীল গাভাস্কার নিজে এর চেয়ে তুচ্ছ কারণে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। স্মৃতিশক্তি খারাপ হলেও উপায় নেই। সেই ভিডিও আজ সকাল থেকে খুব ভাইরাল হয়েছে। লোকেরা ঠিকই মনে করতে পেরেছে যে, গাভাস্কারের যত ভদ্দরলোকের কথাবার্তা মুখে। চাপের মুখে পড়লে তিনি সাকিবের চেয়েও বেশী কিছু করে থাকেন। আর কথাবার্তা হচ্ছে কাদের বিপক্ষে খেলা নিয়ে? শ্রীলঙ্কার। এই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় দেবতা হলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। এক মুরলিধরণকে নো বল ডাকায় তিনি মাঠ ছেড়ে বের হয়ে আসতে উদ্যত হয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিশ্চয়ই মনে আছে। আমাদের ব্যাপার হলো, আমরা গাভাস্কারকেও অন্যায় বলিনি, রানাতুঙ্গাকেও অন্যায় বলিনি।
প্রতিটি অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদে আমরা একমত। সেই সাথে আমরা নিজেরাও প্রতিবাদ করতে চাই। বাংলাদেশ দলের সাথে শ্রীলঙ্কান আম্পায়াররা যেটা করেছেন, সেটা কেবল অন্যায় নয়; রীতিমতো ক্রিকেটের সাথে প্রতারণা। পরপর দুটো বাউন্সার হওয়ার পর আম্পায়ার দাবির মুখে নো বল ঘোষনা করলেন। এরপর আবার লঙ্কানদের দাবির মুখে নো বল প্রত্যাহার করলেন। এটা কী পাড়ার ক্রিকেট নাকি? খেলার অমন সময়ে একটা নো বলের মূল্য বোঝেন না এই আম্পায়াররা! নো বল ঘোষনা করে সেটা আবার দাবির মুখে কীভাবে প্রত্যাহার হয়! এমন ছেলেমানুষী প্রতারনা করার পর আমরা চুপ করে থাকবো, এটা আশা করেছেন আপনারা? সে ক্ষেত্রে আপনাদের আশার বেলুন ফুটো করে দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।
এই যে নাগিন ড্যান্স নিয়ে এতো কথা হচ্ছে, এটা তো আমাদের নাজমুখ ইসলাম অপুর একটা সাধারণ উদযাপন ছিলো। এটাকে ব্যাঙ্গ করলো কারা? এই ভদ্রতা শেখানো শ্রীলঙ্কানরা। বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি হিতে তারা ‘জবাব’ দিলো নাগিন ড্যান্স নেচে। জবাব দিলে জবাব পেতে হয়। মুশফিকুর রহিম আবার জবাব দিলেন। ওখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু গতকাল সাকিবকে আউট করে আবার সেই নাগিন ড্যান্স করলেন বোলার ধনঞ্জয়া। এরপরও আশা করেন যে, বাংলাদেশ জিতলে আর নাগিন ড্যান্স করবে না! কী বিচিত্র আশা! সোহান কেনো আঙুল উচু করে কথা বললেন? সোহান দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে ঢোকার পর তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে, এটা পরিষ্কার টিভি পর্দায় দেখা গেছে।
গালি দিয়েছেন থিসারা পেরেরা। এখন গালি দেওয়ার পরও চুপ করে থাকতে হবে? না, ভাই। আমরা এতো ভদ্র নই। আমাদের গালি দিলে আমরা পাল্টা গালি দেবো। তাতে ২৫ শতাংশ যাক আর শত শতাংশ যাক। কিচ্ছু যায় আসে না। আমরা আপনাদের কাছ থেকে ভদ্রতার সবক শুনতে রাজী নই। একদিন সৌরভ লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি খুলে আপনাদের হিরো হয়েছিলেন। সেদিন এই বাংলার সুশীলরা অবধি তাকে নিয়ে হাপুস নয়নে ভেসে কাব্য করেছিলেন। আজ সাকিব যখন এমন পক্ষপাতমুলক এক ম্যাচ বের করে আনার পর জার্সি খোলেন, সেটা বেয়াদবি হয়ে যায়। আমরা এমন বেয়াদবীই চাই। আমরা এভাবেই ল্যান্ড করতে চাই। হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, কেমনভাবে ফ্লাই করলে, সেটা ব্যাপার না; ব্যাপার হলো, কিভাবে ল্যান্ড করলে। ঠিক, আমরা এভাবে ল্যান্ড করে থাকি। ঠিক আছে?
শ্রীলংকার ক্রিকেটের বরপুত্র মাহেলা জয়াবর্ধনে। একসময়ের বিশ্বসেরা মিডল অর্ডার এখন খেলায় নেই। তবে ক্রিকেট যেহেতু রক্তে তাই দূরে থাকারও জো নেই। মাঝে মধ্যেই খেলা নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এবার বোমা ফাটালেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের আগে ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় কলাম লিখেছেন তিনি। সেখানে উঠে আসে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচের শেষ ওভারের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের শেষ ওভারে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা এড়ানো যেত। আম্পায়ারের ভুলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ওই দুটি বল ছিল ‘নো’। এটা আম্পায়ারদের ভুল।
এবার একটা কুইজ। বলেন দেখি কে আসল ভদ্রলোক? মাহেলা জয়াবর্ধনে নাকি সুনীল গাভাস্কার?
বিডিনিউজ ২৪ এর সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৪০