এই সুন্দর ছবিটা আগের পর্বে দিতে ভূলে গিয়েছিলাম, তাই এটা দিয়েই এই শেষপর্ব শুরু করলাম। কলোসিয়ামের উপর থেকে নেয়া দ্য আর্চ অফ কন্সট্যনন্টাইন এর ছবি, পিছনে প্যালেন্টাইন হিল।
তো আগের সূত্র ধরে বলি, রোমান ফোরাম থেকে বের হয়ে এলাম ক্যাপিটোলাইন হিলে। এখানে একটা মিউজিয়াম আছে। হাতে বেশী সময় ছিল না, তাছাড়া পুরা ইটালীইতো একটা মিউজিয়াম; তাই আর ভিতরে ঢুকি নাই।
ক্যাপিটোলাইন হিলে ঘোড়ার পিঠে রোমান সম্রাট অগাস্টাস। এটি ১৭৫ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপন করা হয়। তবে এটা একটা রেপ্লিকা, আসলটা পাশের মিউজিয়ামের ভিতরে সংরক্ষিত।
এই ছবিটা দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। নেট থেকে নেয়া। হিলের মেঝের এই অপূর্ব জ্যামিতিক কারুকাজ আগের ছবিতে কিছুটা দেখা গেলেও ঠিক বোঝা যায় না, আর আমার পক্ষে পুরোটা এক ফ্রেমে আনা সম্ভবও না।
হিল থেকে নেমে আসার সিড়ি।
পাশেই আলতেয়ার দেল্লা প্যাট্রিয়া, যার বাংলা করলে দাড়ায় পিতৃভূমির বেদী। এটি ভিক্টর ইমানুয়েল-২ এর মনুমেন্ট হিসাবেও পরিচিত। ভিক্টর ইমানুয়েল-২ হচ্ছে একীভূত ইটালীর প্রথম রাজা (রাজত্বকাল ১৮৬১ - ১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দ)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সকল অজানা সৈন্য যারা দেশের জন্য প্রান দিয়েছে তাদের সন্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এখানে দু’টি সদা-প্রজ্জলন শিখা স্থাপন করা হয়, আমাদের শিখা অনির্বানের মতো।
আলতেয়ার দেল্লা প্যাট্রিয়া।
দিনেরবেলা, শিখা দু’টি ভালোভাবে দৃশ্যমান না। তাই একটা ক্লোজ ছবি দিলাম। দেবী রোমার মূর্তি যার নামে রোম নগরীর নাম।
নেট থেকে, শিখাসহ।
উপরে উঠার সিড়ি।
আলতেয়ার দেল্লা প্যাট্রিয়ার উপর থেকে নেয়া ভিউ।
উনি একদম উপরের রেলিং এর উপর বসেছিলেন। একদম গা-ঘেষা ছবি কিন্তু কোন বিকার নাই, শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে কয়েকবার দেখলেন। ফটোশ্যুটে অভ্যস্ত বোঝাই যায়। অনেকগুলো স্ন্যাপ নিয়েছিলাম, সবচেয়ে সুন্দরটা দিলাম।
আলতেয়ার দেল্লা প্যাট্রিয়ার পাশে, বিস্তারিততে গেলাম না।
কোন ভিআইপি যাবে, তাই হঠাৎ দেখি রাস্তা বন্ধ। রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে তোলা। দুরে কলোসিয়াম।
সন্ধা হয়ে যাওয়াতে সেদিনের মতো শেষ করলাম। পরদিন ছিল রবিবার। সোমবার দুপুরে ফেরার ফ্লাইট। রাতে হোটেলে ফিরে শুনলাম, কাল রেড ওয়ার্নিং, ঝড়ো হাওয়া এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের পুর্বাভাস। খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না। একেতো ঝড়-বাদলার দেশের মানুষ, তার উপর ইংল্যান্ডে দেখেছি গোড়ালী ডুবলে বলে ফ্লাড আর হেভি রেইন মানে দেশের হাল্কা মাপের বৃষ্টি!
পরদিন সকালে দেখি একেবারে বাংলাদেশ স্টাইলে ঝড়ো হাওয়াসহ মুুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বুঝলাম দিনটা মাঠে মারা যাবে। যাহোক, দুপুর ২টার দিকে বৃষ্টি পুরা থামলেও আকাশের চেহারা সুবিধার লাগলো না। বেড়াতে এসে হোটেলে আর কতোক্ষন বসে থাকা যায়? আল্লাহর নাম নিয়ে আড়াইটার দিকে বের হলাম। কপাল ভালো ছিল, হোটেলে ফেরা পর্যন্ত আর বৃষ্টি হয়নি। উপরন্তু মাঝে একটু রোদও উঠেছিল!
সরাসরি চলে গেলাম ফন্টানা ডি ট্রেভি বা ট্রেভি ফাউন্টেইন দেখতে। এই ফোয়ারাতে পর্যটকরা প্রতিদিন আনুমানিক ৩,০০০ ইউরোর কয়েন ফেলে! কয়েন ফেলারও কায়দা-কানুন আছে। বাম কাধের উপর দিয়ে ডানহাতে কয়েন ছুড়তে হবে। আমি অবশ্য কোন কয়েন টয়েন ফেলি নাই। নীচের ছবি দু’টা এই বিখ্যাত ফোয়ারার।
হেটে রওয়ানা দিলাম কাসটেল সান্ট এন্জেলো বা ক্যাসল অফ দ্য হলি এন্জেল এর দিকে। যেতে যেতেই ম্যাপে দেখলাম প্যানথিয়ন পড়বে। তো ভাবলাম দেখেই যাই। প্যানথিয়ন একটা গ্রীক শব্দ যার মানে ’সব দেবতার মন্দির’। তবে বর্তমানে এটা একটা চার্চ। এটা ১২৬ খ্রীষ্টাব্দে তৈরী করা হয়। নীচের ৪টা ছবি প্যানথিয়নের।
কাসটেল সান্ট এন্জেলো । সম্রাট হাদ্রিয়ানের জামানায় ১৩৮ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ এটি তৈরী হয়। একসময় এটা রোমের সবচেয়ে উচু বিল্ডিং ছিল।
রোমের বুক চিড়ে বয়ে চলা তেভেরে নদীর ধারে এই ক্যাসেলে যাওয়ার জন্য নদীর উপর এই সেতুটি তৈরী করা হয়। সেতুটির দুইপাশে এন্জেল বা স্বর্গীয় দুতেরা দন্ডায়মান।
ইটালী ভ্রমন শেষ করলাম। ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহে তেভেরে নদীর ধারে ঘন্টাখানেক বসে থাকলাম। হাওয়া খেতে খেতে কিছুক্ষন ''ক’দিনের আমাদের এই জীবন'' জাতীয় কিছু উচ্চ-মার্গীয় চিন্তা-ভাবনা করে হোটেলে ফিরলাম।
তেভেরে নদী।
পরদিন সোমবার যথাসময়ে লিওনার্দো দ্য ভিন্চি এয়ারপোর্টে চেক ইন করলাম। মনার্ক এয়ারলাইন্সের বিমানটি যখন ইংল্যান্ডের ল্যুটন এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করলো, মনটা খারাপ হয়ে গেল। স্বপ্ন থেকে আবার বাস্তব জীবনে পদার্পন! আটটা দিন কিভাবে যে পার হয়ে গেল, টেরও পেলাম না।
সুখস্বপ্ন যে কেন এত দ্রুত শেষ হয়!!!
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
ইটালীর সর্বত্র বিশেষ করে রোমে প্রচুর দেশী হকার ভাইদের সাথে দেখা হয়েছে। যখনই কোন সহায়তা চেয়েছি, রোদে পোড়া, ঘর্মাক্ত চেহারায় হাসি ফুটিয়ে উনারা যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তার কোন তুলনা হয় না।
কোথাও বেড়ানো সহজ, কিন্তু তা লিখিত আকারে তুলে ধরা কত কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। প্রিয় ব্লগার ভাই-বোনদের অনুপ্রেরণা না পেলে এটা আমার জন্যে নিঃসন্দেহে একটা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। এত্তোবড় লেখা শেষ করতে পারবো, জীবনেও ভাবি নাই।
যারা উৎসাহ দিয়েছেন, সবাইকে আমার বিপ্লবী লাল সালাম!!
তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, ২টা ছবি নেট থেকে, বাকিগুলো আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।
-সমাপ্ত-
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০