somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ১

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার পর আব্বা একটা বই কিনে দিয়েছিলেন, নাম মনে নাই - সাধারন জ্ঞানের উপর বই। সেখানেই প্রথম হেলানো টাওয়ারের কথা পড়েছিলাম, কোথায় অবস্থিত? ইটালী নামের একটা দেশের পিসা (ইটালীয়ান উচ্চারণে পিজা) নামক একটা শহরে। সেই প্রথম জানলাম, আমাদের এই পৃথিবীতে ইটালী নামে একটা দেশ আছে! ক্লাস সিক্সে শুরু করলাম স্ট্যাম্প সংগ্রহ, সংগ্রহে ইটালীর স্ট্যাম্পও যুক্ত হলো। পরবর্তী ১০ বৎসর ইটালী আমার মাথা খারাপ করে দিলো! পাঠ্যবই, গল্পের বই, ইতিহাসের পাতা, স্ট্যাম্প এলবাম সব জায়গায় ঘুরে ফিরে বার বার ইটালীর নাম আসে! রোমান সাম্রাজ্যের উৎপত্তি কোথায়? আর্কিমিডিস, লিওনার্দো দা ভিন্চি, মার্কো পোলো, গ্যালিলিও, দান্তে কোন দেশের মানুষ? আলফা-রোমিও, ফেরারী, ল্যাম্বরগিনি, গুচি, প্রাডা, জর্জিও আরমানী কোন দেশের ব্র্যান্ড? পিৎজা-পাস্তা কোন দেশের খাবার? সবগুলোর উত্তর একটাই - ইটালী। ২য় বিশ্বযুদ্ধের মুভি আমার খুব প্রিয়। সেখানেও হিটলারের সঙ্গী ইটালীর মুসোলিনি! ইটালীর মাফিয়ারা তো লা-জওয়াব! আর কতো বলবো, সব বলতে গেলে তো কয়েক পর্বের আলাদা পোষ্টই দেয়া লাগবে!

একসময় সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ সিরিজ খুব পড়তাম। সেখানেই পম্পেই এর ঘটনার উপর নিয়াজ মোর্শেদের একটা অনুবাদ পড়েছিলাম। ১৯৯০ এর দিকে একটা মুভি দেখলাম The Last Days of Pompeii. তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম ইটালীতে বেড়াতে যাওয়ার। ইংল্যান্ডে এসেছি তাও আজ অনেক বছর হলো। প্রতি বছরই ভাবি আগামী বছর অবশ্যই যাবো, বিভিন্ন ঝামেলায় যাওয়া আর হয়েই উঠছিল না। শেষ পর্যন্ত গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করলাম ইটালীর উদ্দেশ্যে। সেই ভ্রমন আনন্দই আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করতে চাই।

ইটালী যাওয়ার কথা শুনে সবাই পরামর্শ দিলো প্যাকেজ ট্যুরে যাওয়ার; যাতায়াত, থাকা-খাওয়া কোন কিছু নিয়েই দুঃশ্চিন্তা করতে হয় না। আমি কখনও প্যাকেজ ট্যুরে কোথাও যাইনি, তাছাড়া আমার স্টাইলের সাথে প্যাকেজ ট্যুর একেবারেই যায় না। আমি প্রচুর হাটি আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করি। যেখানে যাই তার পালস বোঝার চেষ্টা করি, স্থানীয় লোকজনের সাথে মিশি, ভালো লাগলে কোথাও ঘন্টা ধরে বসে থাকি, বিড়ি-টিড়ি খাই, জীবন-যাত্রা দেখি আর মনে মনে পুলকিত হয়ে বলি ”নে বাবারা তোরা দৌড়া, আমার এখন অখন্ড অবসর”! আর প্যাকেজ ট্যুরে থাকতে হয় দৌড়ের উপর, কোন স্বাধীনতা নাই! স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ, পরাধীনতা কি আমাদের সহ্য হয়?

ভুমিকা কি বেশি বড় করে ফেললাম? যাক অনেক হলো, এবার আসল কথায় আসি। মাসখানেক খাটাখাটুনির পর সবকিছু ঠিক হলো। রুট প্ল্যানিং, হাজারো রকমের তথ্য সংগ্রহ, ইটালী যাওয়া-আসার, ইন্টারসিটি ট্রাভেলের আর প্রধান প্রধান দর্শনীয় জায়গাগুলোর টিকেট, সবগুলো হোটেল বুকিং ইত্যাদি ইত্যাদি। ট্রানশ্লেটর দিয়ে কিছু সাধারন অথচ দরকারী বাক্যও শিখে নিলাম, যদিও কষ্ট করে সেগুলো আর ব্যবহার করতে হয়নি! কেন, সেকথায় পরে আসছি। খুব ইচ্ছা ছিল ট্রেনে যাওয়ার, তাহলে আল্পস পর্বতমালার ভিতর দিয়ে তৈরী করা গথার্ড বেইজ টানেলে যাওয়া হতো, আল্পস পর্বতমালাও দেখা হতো কিন্তু ১৮ ঘন্টার জার্নি (ছুটির প্রতিটা ঘন্টাই মুল্যবান!) আর টিকেটের উচ্চমুল্যের কারনে ওটা বাদ দিলাম। যেহেতু আমার ইটালীর সাথে পরিচয় হেলানো টাওয়ারের মাধ্যমে, তাই ঠিক করলাম আগে পিসা যাবো, সেখান থেকেই শুরু হবে আমার ইটালী ভ্রমন!

ফ্লাইট রায়ান এয়ারে রাত ৮:০৫ এ লন্ডন স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে। সে অনুযায়ী ন্যাশনাল এক্সপ্রেসের টিকেট করেছি বিকাল ৪:৪৫ এর। শুরুতেই বিপত্তি! আরো কয়েকজনের সাথে বাসের জন্য স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছি, ৫টা বেজে গেল বাস আর আসে না। ঘন ঘন ঘড়ি দেখছি, আরো দেরি হলে বিপদে পড়বো! এক ছোকরা এসে জিজ্ঞেস করলো আমার ফ্লাইট ক’টায়। বললাম কেন? বললো, সে মোবাইলে বাসের শিডিউল চেক করেছে, আরো ২০ মিনিট ডিলে দেখাচ্ছে। তাইতো! চেক করার কথা মাথায় আসে নি কেন? আমিও চেক করলাম, কথা সত্যি। ব্যাটাকে ধন্যবাদ দিলাম কিন্তু আমার মাথায় হাত। ট্যাক্সি ডাকা ছাড়া উপায় নাই, কিন্তু সে বিরাট খরচের ব্যাপার। এদিকে আর দেরিও করা যায় না। ট্যাক্সিই ডাকতে যাবো, এক বয়স্ক দম্পতি এসে বললো ওরা ট্যাক্সি ডেকেছে, আমি ভাড়া শেয়ার করলে ওদের সাথে যেতে পারি। সম্মতি দিতে দেরি করলাম না।

ওরা স্কটিশ, সারা রাস্তা যেতে যেতে ইংলিশদেরকে গালাগালি করলো আর আমাকে বোঝালো এই ঘটনা যদি স্কটল্যান্ডে হতো তাহলে তারা সাথে সাথে রিপ্লেসমেন্ট বাস পাঠিয়ে দিত! আমিও দাত কেলিয়ে ইংলিশদেরকে কয়েকটা গালি দিলাম। আমার ব্যবহারে খুশি হয়ে চকলেট অফার করলো! কিছু টাকা গচ্চা গেলেও আর কোন ঝামেলা ছাড়াই এয়ারপোর্টে এসে পৌছলাম।

স্থানীয় সময় রাত ১১:১৫ (লন্ডন সময় রাত ১০:১৫) টায় পিসায় প্লেন ল্যান্ড করলো। ই-পাসপোর্ট চেক আউটে দেখি লম্বা লাইন, এদিকে রাত ১২ টার মধ্যে হোটেলে না ঢুকলে বিপদ! পাশেই ম্যানুয়েল ইমিগ্রেশান কাউন্টার দেখি প্রায় ফাকা! তো সেখানে চলে গেলাম। ইমিগ্রেশান অফিসার পাসপোর্ট ফেরত দিতে দিতে মজা করে বললো, তোমরা তো আমাদের সাথে আর থাকছো না, পরের বার কিন্তু ভিসা নিয়ে আসতে হবে! ব্যাটা ব্রেক্সিট নিয়ে খোঁচা দিলো! এদিকে ওর সাথে প্যাচাল পারার টাইম নাই আমার। ঠিক আছে, বলে দিলাম দৌড়।

যাক, ঠিকঠাক মতো হোটেলে পৌছলাম। এয়ারপোর্টের একদম কাছে, মাত্র ১০ মিনিটের হাটাপথ! ফর্মালিটিজ শেষ করে রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে সোজা বিছানায়। একঘুমে উঠলাম পরদিন সকাল ৮ টায়। ইটালীতে আমার প্রথম দিন! রিসেপশান থেকে জানলাম টাওয়ারে বাসে যেতে লাগবে ১০ মিনিট, হেটে গেলে ৩০ মিনিট। আমি হলাম হাটা পাবলিক, তাছাড়া স্বপ্নের পিসা তথা ইটালীতে প্রথম দিন, সুতরাং শুরু করলাম হাটা। প্রাচীন শহরটাও দেখা হবে, আবার টাওয়ারেও পৌছানো যাবে!


শহরের মধ্যে একটি পিয়াজ্জা (স্কোয়ার বা চত্বর)


শহরের বুক চিড়ে বয়ে চলা নদী, নাম 'আরনো'


ভদ্রলোকের নাম জানিনা (নদী পার হয়ে পুরানো মার্কেটে ঢোকার মুখে দাড়িয়ে)


পুরানো মার্কেটের গলি


গলিপথে দেখা এক প্রাচীন গির্জা

কাছাকাছি চলে এসেছি মনে হলো, তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজনকে জিজ্ঞেস করলাম। বললো, সামনের তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে বায়ে তাকালেই টাওয়ার দেখতে পাবে। আহ, ঠিকঠিক মতোই দুরে দেখলাম বাঁকা হয়ে দাড়িয়ে আমার স্বপ্নের টাওয়ার!!!





(বি. দ্র: ক্যামেরা থেকে ছবি ল্যাপটপে নেয়ার পর ছবিতে সময় ও তারিখ দেখাচ্ছে না, কিন্তু ক্যামেরায় দেখা যায়। কিভাবে সময় ও তারিখসহ ছবি কপি/পেষ্ট করা যায়? কারো জানা থাকলে বলবেন দয়া করে।)

তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, ছবি আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।

চলবে.........

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ২
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৫৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×