ছোট বেলায় পড়তাম, পর্যায় সারণীর সপ্তম পর্যায় অসম্পূর্ণ। পর্যায় সারণীর মৌল সংখ্যা ১০৯, ১১৩ হয়ে ১১৪ তে এসে শেষ পর্যন্ত ঠেকে ছিল এতদিন।
পর্যায় সারণী ৭ম পর্যায় পূর্ণ হতে বাকি ছিল আর মাত্র চারটি মৌলের সংযোজন।
অবশেষে পূর্ণ হল পর্যায় সারণীর সেই ৭ম পর্যায়।
এই চারটি অতিভারী ও তেজস্ক্রিয় মৌলের মাঝে তিনটির নামই এসেছে তাদের আবিষ্কারস্থলের নামানুসারে।
পর্যায় সারণীর ১১৩ তম মৌলটির নাম দেয়া হয়েছে "নিহোনিয়াম" [Nihonium(Nh)]। নিহোনিয়াম নামটি এসেছে জাপানিজ শব্দ "নিহোন(Nihon)" থেকে যার অর্থ "জাপান"। "নিপ্পন" শব্দের অর্থও জাপান। ১৯০৮ সালে আবিষ্কৃত ৪৩ তম মৌলটির নাম জাপানীয় বিজ্ঞানীরা "নিপ্পনিয়াম" রাখার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেইসময় সেটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই, এটিই (নিহোনিয়াম) জাপান তথা এশিয়া অঞ্চল থেকে পর্যায়সারণীর প্রথম কোনো মৌলের স্বীকৃত নাম।
১১৫ তম মৌলটির নাম দেয়া হয়েছে "মস্কোভিয়াম"। মৌলটির নাম রাখা হয়েছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর নামানুসারে, যেখানে মৌলটি আবিষ্কৃত হয়েছে।
১১৭ তম মৌলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "টেনেসি" নামক রাজ্যের নামানুসারে রাখা হয়েছে "টেনেসাইন"। IUPAC এর ভাষ্যমতে, "টেনিসি অঞ্চল, বিশেষ করে Oak Ridge National Laboratory, Vanderbilt University এবং University of Tennessee এর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৌলটির নাম রাখা হয়েছে টেনেসাইন।" এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজ্যের নামানুসারে পর্যায় সারণীর কোনো মৌলের নামকরণ করা হল। এই ধারার প্রথম মৌলটি ছিল "ক্যালিফোর্নিয়াম (৯৮তম মৌল)", যেটি কিনা ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার নামানুসারে রাখা হয়েছিল।
আর ১১৮ তম মৌল "অগানিসন" এর নাম রাখা হয়েছে ৮৩ বছর বয়স্ক বিখ্যাত রাশিয়ান পদার্থবিদ "উরি অগানেসিয়ান" এর সম্মানার্থে। উরি অগানেসিয়ান অনেক কয়টি অতিভারী মৌলের আবিষ্কারের জন্য দায়ী(!) ছিলেন। কোনো "জীবিত বিজ্ঞানী"র নামানুসারে নামকরণ করা এটা পর্যায় সারণীর মাত্র দ্বিতীয় কোনো মৌল! এই ধারার প্রথম মৌলটি ছিল "সিবোর্গিয়াম (১০৬তম মৌল)", যেটি কিনা আমেরিকান রসায়নবিদ গ্লেন থিওডোর সিবোর্গের নামানুসারে রাখা হয়েছিল।
আচ্ছা এবার আসি কাজের কথায়।
কেন এই মৌলগুলো পর্যায়সারণীর অন্তর্ভুক্ত হতে এত সময় নিল?
কারণটা সহজ এবং তা হল, অন্যান্য ক্লাসিক মৌল যেমন লোহা, এলুমিনিয়াম, সোনা, রূপা বা তামার মত এদেরকে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় বা এদের কোনো স্থায়ী যৌগ আকারে পাওয়া যায় না। এদেরকে শুধুমাত্র ল্যাবরেটরিতেই তৈরী করা যায়। শুধু তাই নয়, এরা তৈরী বা সংশ্লেষিত হওয়ার অল্পকিছু সময়ের মাঝেই "ক্ষয়" হয়ে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞানীদের অনেক উন্নত প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ব্যবহার করে এদের এই "ক্ষয়" হয়ে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই "ধরে ফেলতে" বা "পর্যবেক্ষণ" করতে এত বছর সময় লেগে গেল!
"একটানা সাত বছর ধরে ১১৩ তম মৌলটি আবিষ্কারের জন্য আমরা একের পর এক ডাটা এনালাইসিস করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমরা মৌলটির কোনো সন্ধানই পেলাম না।" বলছিলেন জাপানের রাইকেন গবেষণাগারের একজন গবেষক কোসুকে মোরিতা। "আমরা হতাশ হইনি। অবশেষে একদিন ভাগ্য ধরা দিল আমাদের হাতে এবং আমরা সেটা আবিষ্কার করতে সক্ষম হলাম।"
শুধু এটা আবিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, জাপানের এই দলটি এখন ১১৯ এবং তার পরবর্তী মৌলগুলো খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক নজরে মৌল চারটির পারমাণবিক সংখ্যা, নাম ও সংকেতঃ
113,Nihonium (Nh),
115,Moscovium (Mc),
117,Tennessine (Ts) এবং
118,Oganesson (Og).
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৪