১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরেই জিয়া সর্বপ্রথম নিজের নামে বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বঙ্গবন্ধুর অবদান কে অস্বীকার করা। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ষ্ট্যান্ড বাই স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে যান তথা যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমরা জানি যে তিনি বলেছিলেন "আমি যদি ঘোষণা নাও দিতে পারি তোমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়বা"। দুদিন আগে ২৪শে মার্চে বাংলা ভিশন চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. জেনারেল (অব) মীর শওকত ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে মেজর জিয়া কতৃক রিভল্ট এবং কর্ণেল খান জুনেজো কে আটক করে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করার এবং জিয়ার নিজের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের কথা বলেন। তবে তিনি বলেন যে বোধহয় আগ্রবাদ রেডিও ষ্টেশন হতে এম. এ. হান্নান সাহেব ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু তার রেঞ্জ অল্প ছিল বিধায় চট্টগ্রামের সীমিত এলাকার মানুষ শুনতে পেয়েছে। কিন্তু কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রের রেঞ্জ ছিল অনেক বড় তাই সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ও পাশ্ববর্তী কয়েকট দেশে এই ঘোষণা শোনা গেছে। তিনি এও বলেন যে তৎকালীণ স্থানীয় আলীগের নেতারা প্রথমে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন জিয়া নিজে এবং বঙ্গবন্ধুর নাম ছাড়াই স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য। পরে প্রথমে তারা নিজেরা দিতে চাইলেও জিয়া কি দিয়েই ঘোষণা পাঠ করান বঙ্গবন্ধুর নাম যূক্ত করে। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সারাদিন ঐ ঘোষণা পত্র রেকর্ড করে বার বার বাজানো হয়। ঐ দিন ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম সুমুদ্র বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে থাকা একটি জাপানী জাহাজ কতৃক জিয়ার ঘোষণা রেকর্ড করা হয়। যা পরবর্তিতে রেডিও অষ্ট্রেলিয়া কর্তৃক সংগৃহিত হয় এবং সম্প্রচারের পর সারা বিশ্ব জানে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সহ মূক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের সন্ধ্যা ৭:৪৫ মানে অষ্ট্রেলিয়ায় রাত ১১:৪৫। তাই রেডিও অষ্ট্রেলিয়ার ব্রডকাষ্টিং করে তাদের রাত ১২টার পর তথা ২৭শে মার্চ হয়। এই কারণে বলা হয় যে জিয়া ২৭শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু জাপানী জাহাজ কর্তৃক ঐ রেকর্ড প্রমাণ করে যে ২৬শে মার্চই জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেন;
At 7:45 pm on 26th March 1971, Major Zia broadcast the message which became historic in the struggle for independence.
"This is Swadhin Bangla Betar Kendra. I, Major Ziaur Rahman, at the direction of Bango Bondhu Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction, I have taken command as the temporary head of the republic. In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalis to rise against the attck by the west Pakistani Army. WE shall fight to the last to free our motherland. By the grace of Allah, victory is ours. Joy Bangla."
...Major Zia's message was picked up by a Japanese ship anchored mid- stream in Chittagong harbour. When the news of this declaration was broadcast by Radio Australia, the rest of the world came to know of it...
Click This Link
আর সবচেয়ে বড় কথা হল স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে জেনারেল শফিউল্লাহ কে সর্বপ্রথম গাজীপুর সমারাস্ত্র কারখানায় বিদ্রোহ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েন এবং জিয়ার সিনিয়র হওয়ায় তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান করা হয়। আর জিয়ার ঐ ২৬শে মার্চের ঘোষণা এবং মূক্তিযুদ্ধের প্রথম গেড়িলা বাহিনী Z-Force সহ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান করা হয়। মনে রাখতে বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র জিয়ার জন্যই ঐ একবারই সেনা উপ-প্রধানের পদ সৃষ্টি করা হয়। আরও সেক্টর কমান্ডর যেমন খালেদ মোশারফ, এ. কে. ক্ষন্দকার, মীর শওকত সহ অন্যান্যদের অবশ্যই ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু শফিউল্লাহ ও জিয়ার ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্যই তাদের কে সেনাবাহিনীর সরাসরি সর্বোচ্চ দুটি পদে বসানো হয়। আবারও বলছি বঙ্গবন্ধুই সমগ্র দেশের মানুষ কে দেশের স্বাধীনতার জন্য এক রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আনেন। উনার দিক নির্দেশনাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলস্তম্ভ। তাই জিয়ার ঘোষণা ২৬শে মার্চ স্বীকার করে নিলে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিন্দুমাত্র কমে না। যারা জিয়ার ঘোষণা কে দিয়ে বঙ্গবন্ধূর অবদান কে অস্বীকার করতে চান তারা আসলে বাংলাদেশকেই অস্বীকার করেন। আমরা যারা বিএনপি ও আলীগ করি তাদের কে রাজনৈতিক ভাবাদর্শের সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে যার যতটুকুন প্রাপ্য সেই সম্মানটুকুন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে জিয়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। এ ধরণের অযথা বিতর্ক বিশ্বের দর্বারে আমাদের সম্মান কে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। দেশের ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।