মা-বাবার একমাত্র সন্তান নাসিম। বড় আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠে, যেখান থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করা কথা ছিল নাসিমের। কিন্তু সেই মেধা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার আগেই তাকে চলে যেতে হলো না-ফেরার দেশে। লাশের মিছিলে যোগ হলো আরও এক মেধাবী। কিন্তু আর কত নাসিমকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে? আর কত নাসিম এভাবে ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে অকালে ঝরে পড়বে? নাসিমদের জীবনের কি কোনোই মূল্য নেই? নাসিমদের হত্যাকাণ্ডের কি কোনোই বিচার হবে না? প্রশ্নগুলো নাসিমের জানাজায় উপস্থিত সহপাঠীদের।
নাসিমের বাবা স্কুলশিক্ষক মো. মোসলেম উদ্দিনের অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অনৈতিক কার্যক্রমের
প্রতিবাদ করতে গিয়েই মেধাবী ছাত্র নাসিমকে প্রাণ দিতে হয়েছে। একমাত্র ছেলে নাসিমকে হারিয়ে আবেগাপ্লুত বাবা বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু লাশ হয়ে ঘরে ফিরবে, তা ভাবতে পারিনি। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আর যেন কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়। আমার ছেলেই যেন এই ক্যাম্পাসের শেষ নিহত ছাত্র হয়। তিনি অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তাছাড়া ঘটনার তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
নাসিমের বাবা বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে সাধারণ ছাত্রদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপের মাঝে ইফতারির অতিরিক্ত টোকেন বিতরণে বাধা দিতে গিয়েই নাসিম নিহত হয়। এর আগে ৭ আগস্ট ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে বিভাজন স্পষ্ট হলেও তা নিরসনে প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখেনি। আর ওইদিনের দ্বন্দ্ব থেকেই ১৫ আগস্ট সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষের পরদিন নামেমাত্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও নাসিমের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর কোনো অগ্রগতি দেখানো হয়নি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তদন্তের ফলাফল সম্পর্কেও কোনো কিছু জানা যাচ্ছে না। ওইদিনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
নাসিমের বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টানা ৯ দিন ঢামেকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকার পরও সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি সেখানে নাসিমকে দেখতে যাননি। অথচ এর আগে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক নিহত হলে সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা রাজশাহীতে এসে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেন।
নাসিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু গ্রুপের কর্মী। সে শাহ মুখদুম (এসএম) হলের ২৫৫ নম্বর কক্ষে থাকত। সে চাঁপাইনবাবঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চকনারন্দ গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিন ও জান্নাতুন নেসার সন্তান।