প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের যারা টেনেছে, তাদের প্রত্যেকের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। নিজের গ্রুপ শক্তিশালী করতে গিয়ে ছাত্রলীগে যারা ছাত্রদল ও শিবিরকর্মী ঢুকিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুপ্রবেশকারীদের দলে টেনে নিজেদের ভবিষ্যত্ নষ্ট না করতে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত দলের অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বহিষ্কার করতে হবে। যারা অপরাধ করবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি শেষ হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক হামিদা বানু ও সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। সভা পরিচালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত ও ছাত্রসমাজকে আদর্শচ্যুত করার জন্য জিয়াউর রহমান এবং এরশাদকে দায়ী করেন।
ছাত্রলীগের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের ইতিহাস জড়িত। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা’। পাকিস্তান আমলে মিলিটারি ডিক্টেটর আইয়ুব থেকে শুরু করে জেনারেল জিয়া এবং এরশাদ ছাত্র রাজনীতিকে ধ্বংস করে গেছে। নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে জিয়া ও এরশাদ ছাত্রদের হাতে অর্থ, অস্ত্র ও ড্রাগ তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতি কলুষিত করেছে। ছাত্রদের বিলাস ভ্রমণে নিয়ে গিয়ে বিলাসী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। রাজনীতি করতে হয় জনগণের সেবা করার ব্রত নিয়ে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসে অর্থবিত্ত, চাকচিক্য ও সম্পদের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রদের চোখ ঝলসে দিয়েছে। সমাজে নানা ধরনের অপকর্ম করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের কারণে ছাত্র রাজনীতির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হারিয়ে গেছে।
ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আগামীর নেতৃত্ব দিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। অশিক্ষিত নেতৃত্ব দেশ ও জাতিকে উন্নত করতে পারে না। এ অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের এরই মধ্যে হয়েছে। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শে বলীয়ান হয়ে এবং ত্যাগের মহিমা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানেও কিছু শ্রেণীর লোক রাজনীতি করছে অসত্ উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য এবং অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ-সম্পদকে বৈধতা দেয়ার জন্য। আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার পথ মিলিটারি ডিক্টেটররা নস্যাত্ করেছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, আদর্শহীন রাজনীতি দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারে না। শুধু সাময়িক ভোগবিলাস করা যায়।
১৫ আগস্টের কালোরাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দিনটি জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায়। ’৭১-এর পরাজিত শত্রুরা স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে জাতির পিতাকে সেদিন হত্যা করেছে। তবে দেশের মানুষ সাময়িকভাবে থমকে গেলেও অন্যায়কে মেনে নেয়নি। যে কারণে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও রায় কার্যকর করতে পেরেছি।