যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী শাওনের পাজেরো জিপ ও লাইসেন্স করা পিস্তলটি সিজ করেছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হকের নির্দেশে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়িচালক কামাল হোসেন কালা ও দেহরক্ষী দেলোয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে ইব্রাহিমের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ‘তার স্বামী কচি খোকা নয় যে পিস্তল নাড়াচাড়া করতে গিয়ে গুলি বেরিয়ে যাবে। তার স্বামীকে শাওন ও তার সঙ্গীরাই খুন করেছে।’
সূত্র জানায়, ইব্রাহিমের আত্মহত্যার যে গল্প সাজানো হয়েছে তা সত্য নয়। পুলিশও বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশ বুঝেশুনে অগ্রসর হতে চাইছে। এদিকে একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি নিয়ে যাতে পুলিশ বেশিদূর না এগোয়, সেজন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, শাওনবিরোধী গ্রুপটির জোর দাবি, এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। উভয়মুখী চাপে পুলিশ এখন বুঝেশুনে ধীরে এগোতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমপি শাওনের সঙ্গে ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। ঢাকা সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে ইব্রাহিম শাওনের পাশে থাকতেন। এই ঘনিষ্ঠতার সুবাদে শাওন পরিবারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইব্রাহিমের। একপর্যায়ে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন ইব্রাহিম। এরপরই শাওনের টার্গেটে পরিণত হন ইব্রাহিম।
সূত্র আরও বলেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলিস্তান মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের ভেতরেই ইব্রাহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এমপি শাওনের বদৌলতেই এ ক্লাবের হাউস থেকে মোটা অংকের মাসোহারা পেতেন ইব্রাহিম। কিন্তু ওই রাতে ক্লাবের সামনে র্যাব ও পুলিশের নজরদারির কারণে কিলিং মিশন সফল হয়নি। শুক্রবার দিনের অধিকাংশ সময় এমপি শাওন ইব্রাহিমকে নিয়ে তার পাজেরো জিপে করে মিরপুরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইব্রাহিমকে নিয়ে শাওন জাতীয় সংসদ ভবনের ৬ নম্বর ব্লকের সামনে আসেন। এরপরই ওই গুলির ঘটনা ঘটে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা কালো রঙের একটি নোয়া মাইক্রোবাস এবং সংসদ ভবনের স্টিকার লাগানো একটি জলপাই রঙের পাজেরো জিপকে জরুরি বিভাগের সামনে পার্কিং করতে দেখা যায়। জিপ থেকে নামেন এমপি শাওন। বার্ন ইউনিটের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন কারও সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ১০/১২ জন দলীয় কর্মী সমবেত হয় জরুরি বিভাগের সামনে। তাদের এমপি শাওন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়ার পরই কালো রঙের নোয়া মাইক্রোবাস থেকে গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিমের রক্তাক্ত দেহ ধরাধরি করে ট্রলিতে নামানো হয়। জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ইব্রাহিমকে পরীক্ষার পর মৃত ঘোষণার পরই দ্রুত উধাও হয়ে যায় ওয়ার্ডের রাজনৈতিক কর্মীরা। এ সময় এমপি শাওন মোবাইলে নিহত ইব্রাহিমের ভাই মাসুমকে ফোন করে বলেন, তোর ভাই গুরুতর অসুস্থ। মেডিকেলে আয়। এরপরই শাওন তার সহযোগীদের নিয়ে জিপ ও নোয়া মাইক্রোযোগে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ইব্রাহিম কোথায় কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে তদন্তকারীরা জানান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল সম্পর্কেও পুলিশ এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেনি। তবে শাওনের গাড়িচালক কালা এজাহারে যে ঘটনাস্থলের কথা বলেছে সেটি সংসদ ভবনের ৬ নম্বর ব্লক। এই তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্তকারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন বলে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি রিয়াজ হোসেন সাংবাদিকদের জানান।