‘টুকলুু’ নামটি তার এমনি এমনি হয়নি। মাথায় বুদ্ধি, গায়ে জোর আর মনে সাহসÑএই তিনে মিলে টুকলু।
গ্রামে শিয়ালের খুব উপদ্রব। শিয়ালেরা প্রায় রাতেই কোনো না কোনো বাড়ি থেকে হাঁস, মুরগ চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা টুকলুর মালিকের বাড়ি থেকে একটাও হাঁস মুরগ চুরি করতে পারেনি। শিয়ালসর্দার আক্ষেপ করে বলে, ‘টুকলুদের বাড়িতে অনেক মোটা তাজা হাঁস-মুরগ আছে আর এদের গায়ে আছে প্রচুর তেল। যদি খেতে পারতাম!’
এক শিয়াল বলে, ‘টুকলুদের বাড়ি ঢুকলে জীবন নিয়ে ফিরে আসা যাবে না সর্দার। সে খুব ত্যান্দড়। তার বাড়ির হাঁস-মুরগ খাওয়ার আশা বাদ দেওয়াই ভাল।’
আরেক শিয়াল বলে, ‘কুকুরটা বেজায় প্রভূভক্ত ও গোঁয়াড়। তাকে লোভ দেখিয়ে বাগে আনা সহজ হবে না।’ সর্দার বলে, ‘বোকার মতো কথা বলিস না তো, লোভে পড়ে মানুষেরা পর্যন্ত কত খারাপ কাজ করে বসে আর সে তো একটি কুকুর; সে বুঝি টলবে না লোভে! যা, তার সাথে খাতির জমিয়ে লোভ দেখিয়ে নিরাপদে চুরি করার পথ বের কর। গেরস্থের তাজা হাঁস আর মুরগগুলো না খেলেই নয়।’
দুই.
পরের দিন রাতে তিন শিয়াল গেল টুকলুর কাছে। টুকলু ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে শিয়ালেরা বলল, থামো থামো। আমরা আজ চুরি করতে আসিনিÑ এসেছি তোমার উপকার করতে। ভাই টুকলুু, ‘তোমার মনিব মাছ-মাংস খেয়ে তোমাকে দেয় হাড় আর কাঁটা, ভাত খেয়ে দেয় ফেন। তুমি সারারাত সজাগ থেকে কত কষ্ট করে মালিকের মূল্যবান স¤পদ রক্ষা কর আর তোমার কপালে ভাল কোন খাবারই জোটে না। ছিঃ কত অকৃতজ্ঞ আর কৃপণ তোমার মালিক! অথচ আমাদের একটু উপকার করলেই তুমি পাবে প্রতিদিন তাজা হাঁস-মুরগের মাংস যা খেয়ে তুমি হয়ে উঠবে অনেক সুঠাম ও শক্তিশালী।’
শিয়ালের কথা শুনে টুকলুু ঢোক গিলে মলিন হাসি দিয়ে বলল, ‘ঠিক বলেছ, আমার মালিক বড় কৃপণ আর অকৃতজ্ঞ, এখন তোমাদের জন্য আমি কী করতে পারি আগে তা-ই বল।’
শিয়াল টুকলুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ‘ভাই টুকলু, আমরা তোমার মালিকের খোপ থেকে প্রতিদিন মুরগ আর হাঁস নিয়ে যাব তুমি একদম চুপচাপ থাকবে। চুরি করার সময় তুমি নাকডেকে ঘুমাবেÑযা করার আমরাই করব। আমরা তোমাকে প্রতিদিন একটা করে মোরগ ও হাঁসের মাংস দিয়ে যাব।’ টুকলুু আনন্দে চোখ বড় করে বলে, ‘এত্ত!’
তিন.
পরের দিন রাতে টুকলু উঠোনে পড়ে নাক ডেকে ঘুমুতে লাগল। শিয়ালেরা নিশ্চিন্তমনে ঢুকলো গিয়ে হাঁস-মুরগের খোপে। তারা চুপি চুপি খোপ থেকে হাঁস ও মোরগ নিয়ে যেই বের হতে যাচ্ছে অমনি ওরা ফট্টাস করে আটকে গেল টুকলুর মনিবের পাতানো ফাঁদে। মনিব লাঠি দিয়ে শুরু করল ধুমধাম পিটনি; শিয়ালের প্রাণ যায় যায়। একটা শিয়াল হাঁপাতে হাঁপাতে মনিবকে বলে, ‘আমাদের মেরে ফেলার আগে দয়া করে আমাদের একটি কথা শুনুন।’ মনিব বলে,‘ মরার আগে কী কথা বলবি, বল।’
শিয়াল বলে, ‘মারতে হয় আপনার পাহারাদার অকৃতজ্ঞ লোভী কুকুরটাকে আগে মারুন। চক্ষুলজ্জায় সে নিজে চুরি করে খেতে পারে না; সে আমাদের ভাড়া করে এনেছে চুরি করতে। ডাকুন আপনার অকৃতজ্ঞ ফাজিল টুইকলাকে, কথাগুলো তার সামনেই বলি।’
টুকলু এসে অলসভাবে বলে, ‘কী হয়েছে এখানে? ইশ, একটু টেরও পেলাম না। কী গভীর ঘুমে ছিলাম রে আমি!’
রক্তাক্ত শিয়াল রাগে কটমট করে বলে, ‘তোর মালিক আমাদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে ফেলল আর তুই কিনা বলছিস এখানে হচ্ছেটা কি, টের পেলাম না, চেঁচামেচি? তুই আমাদের কি বলেছিলে আর কি করেছিস? তুই একটা মিথ্যাবাদী বজ্জাত কুকুর ছাড়া আর কিছুই না।’
টুকলুু হাই তুলে বলে, ‘না রে চালাক শিয়াল, ‘আমি মিথ্যাবাদীও নই, অকৃতজ্ঞও নই। তবে বলতে পারিস বুদ্ধিমান আর বিশ্বস্ত। বুদ্ধির কাছে চালাকি টিকে না। আমি আমার কথা রেখেছি। কথা দিয়েছিলাম, চুরির সময় নাক ডেকে ঘুমাব, আমি তাই করেছি। আর আমার মনিব, যিনি আমাকে এত আদর করে লালন পালন করেন, জীবন থাকতে তাঁর ক্ষতি হতে দেব আমি? তাই তো আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম আমার মনিবকে।’
শিয়াল কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘তুই আমাদের চুরি করতে বলে তোর মনিবকে সতর্ক করে দিয়েছিস? এখন আমাদের কী হবে!’
টুকলু হাই তুলে বলল, ‘কী আর হবে, অতি চালাকের যা হয়, তা-ই হবে তোদের।’
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৯