কান্না থেমে গেল টুনটুনিছানার। একটি বৃষ্টির ফোঁটা চুপ করে ঝুলে আছে বাসার ছাউনি দেওয়া পাতায়। কেমন টলমল করছে ফোঁটাটি। বাতাসে বাসাটি যখন দোল খায় তখন ফোঁটার ভেতর ঝলমল করে অনেকগুলো রঙ। এ ফোঁটাতে নিজের ছবি দেখতে পেল ছানাটি। আর অমনি খিলখিল করে হেসে উঠল সে।
তুমি কে গো আমাদের বাসার উপরে বসে আছ? তুমি কে? বলল টুনটুনিছানা।
আমি মেঘমেয়ে, বলল ফোঁটাটি।
মেঘমেয়ে? কোথা থেকে এসেছ তুমি? তুমি কি আমার সাথে থাকবে মেঘকননা?’
আমি তোমার কান্না শুনে সোজা চলে এলাম এখানে। তুমি কি আমাকে বাসায় থাকতে দিবা?’
টুনটুনিছানা মাথা কাৎ করে বলে, ‘হ্যা থাকতে দেব। তবে আমাকে শোনাতে হবে মজার মজার গল্প।
‘কী গলপ শুনতে চাও তুমি বলো।’
ছানাটি ভাবতে লাগল। তারপর বলল, ‘আমি, আমি শুনব তোমার মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার গল্প।
আসলে আমি হলাম পানি। বলল মেঘকন্যা। আমি কখনো উড়ে বেড়াই, কখনো গড়িয়ে চলি আবার কখনো সাঁতার কাটি।
ছানা চিৎকার করে বলল, ‘সবখানে থাকো তুমি?
হ্যা আমি সবখানেই থাকি। ছিলাম মেঘ। আর বৃষ্টি হয়ে এখানে এলাম। তারপর যাব সাগরে। সূরুজ মামার রোদের তাপে আমরা ছোট ছোট কণা হয়ে বাতাসে উড়তে থাকি। উড়তে উড়তে আমরা অনেক উপরে উঠে পড়ি। তখন সব কণা একদম কাছাকাছি চলে আসি। তারপর হাত ধরাধরি করে আমরা একেবারে গায়ে গায়ে লেগে যাই। এভাবেই হয় মেঘ মা। এই মেঘ মা তখন ভেসে বেড়ায় আকাশে।’
‘তো এখানে কি করে এলে তুমি?’ বলল ছানাটি।
‘এখানে এলাম বৃষ্টি হয়ে।
ছানাটি গলপ শুনে খুশি হয়ে বলল, আমিও মেঘ হবো আর বৃষ্টি হবো। আমি চলে যাব আকাশে। ভেসে বেড়াব। তারপর বৃষ্টি হয়ে চলে আসব মায়ের কাছে। কী মজা!’
মেঘমেয়ে বলে, ‘তুমি যাবে কেমন করে, তুমি তো উড়তেই পারো না।’
টুনটুনিছানা তার ডানে-বামে তাকিয়ে বাদামের খোসার মতো পাখা দেখে বলে, ‘এই পাখা দিয়ে আমি উড়তে পারি না। বলো না মেঘমেয়ে, আমি কিভাবে উড়াল দিয়ে যাব আকাশে।
মেঘমেয়ে বলে, ‘পাখা না থাকলেও তুমি উড়তে পারবে। যদি তুমি একটা কাজ করতে পারো। আর সেটা হবে খুব মজার একটা বিষয়।’
টুনটুনিছানা বলে, ‘বলো, বলো মেঘমেয়ে, পাখা ছাড়া আমি কিভাবে উড়তে পারি, বলো। তুমি যা বলবে আমি তাই করব।’
মেঘমেয়ে বলে, ‘তুমি যদি আমাকে তোমার পেটের ভেতরে নিয়ে রাখতে পার তো এমনিতেই পারবে উড়তে।’
ছানাটি ঠোঁট নিয়ে বিসটি ফোঁটার গায়ে লাগাতেই ফোঁটাটি চলে গেল ছানার পেটে।
‘আরে একি! কেমন জানি উড়– উড়– লাগছে আমার।
পিং পং বলের মতো নাচতে লাগল সে।
পেটের ভেতর থেকে মেঘমেয়েটি বলল, ‘তুমি বাসাটা ফাঁক করে বেরিয়ে পড়ো।’
ছানাটি পাতা সরিয়ে মাথাটা বের করে দেখে, সামনে বিশাল আকাশ। মেঘগুলো ভাসছে আকাশে। খুশিতে তার চোখ-মুখ চিকচিক করতে লাগল। সে ফুড়–ৎ করে উড়াল দিল আকাশে। সে খুশিতে টগবগ করতে করতে ডানে-বামে-উপরে শোঁ-শাঁ করে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে সে চলে গেল মেঘের কাছে। মেঘেরা টুনটুনিছানাকে আদর করে থাকতে দিল তাদের সাথে।
মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে পড়ে টুনটুনিছানার। সে বিসটির সাথে চলে আসে বাসায়। বাসায় এসে মায়ের গলা পেঁচিয়ে ধরে। আর চোখ বড় করে মেঘে মেঘে ভেসে বেড়ানোর গলপ শোনায় মাকে। ছানাটির খুশি দেখে মা-ও খুশি হয়ে যায়।