somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

আমলা ও একটি চিড়িয়াখানার গল্প

০২ রা জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোরাই পথে ইতালী প্রবেশ করার সময় মজনু মিয়া সাত সঙ্গীসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। পুলিশ তাদের পাকড়াও করে নিয়ে গেল চেক পোষ্টে। নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করে ওদের একজন একজন করে পাশের কক্ষে নিয়ে রাখছে।

প্রথম দুইজন মালয়েশিয়ান, পরের জন পাকিস্তানী, পরের দুইজন ইন্ডিয়ান, আরেকজন ফিলিপিনো, শেষের জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করতেই মজনুর জবাব, আই এ্যাম বাংলাদেশী। এ কথা বলতেই আনন্দ-উত্তেজনায় পুলিশেরা সমস্বরে ইউরেকা! ইউরেকা! বলে আনন্দে লাফিয়ে উঠল।

মজনু কিছু না বুঝেই ওদের সাথে হাসিতে যোগ দিল। ছয় সঙ্গীকে এক কক্ষে আর মজনুকে পরম যত্নে অন্য একটা পরিপাটি ছিমছাম এসি কক্ষে নিয়ে রেখে পুলিশ টেলিফোনে ত্রস্ত-ব্যস্ত হয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে ঘন ঘন আলাপ করছে। সবার চোখে মুখে পরম তৃপ্তির হাসি। মজনু কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে, প্রচন্ড আনন্দদায়ক কিছু একটা ঘটছে, এটা সে বুঝতে পারছে। এসব আনন্দে তার দুশ্চিন্তা কোথায় উবে গেছে সে নিজেই বলতে পারবে না।

তারপর একটা পুরনো গাড়িতে মজনুর ছয় সঙ্গীকে বেওয়ারিশ কুকুরের মত তুলে নিয়ে গেল। কাচের জানলা দিয়ে মজনু এসব দেখছে। ছয় সঙ্গীর এই দুরবস্থার মধ্যে নিজের এত আদর-আপ্যায়নে সে ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বলছে, আমার আব্বু যে সাবেক আমলা এই খবরটা পুলিশ জানল কী করে!

ঘন্টাখানেক পর গাড়ির বিশাল বহর চলে এলো। সাথে ওই দেশের পুলিশ প্রধান। এসেই তাকে দেখে খুব খুশি হয়ে চেকপোষ্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের পিঠ চাপড়ে ওয়েল ডান বলে উৎসাহ দিলেন। মজনুকে অতি আধুনিক একটা এসি গাড়িতে যত্ন করে নিয়ে বসালো। তার আগে পিছে বড় বড় কর্মকর্তার গোটা বিশেক গাড়ি পতাকা নেড়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ।

ঘন্টা খানেক পর দি ন্যাশনাল জু-এর প্রধান ফটকের ভেতর দিয়ে স্যালুট নিতে নিতে বিশাল এক ভবনের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালেন। অফিসের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা ব্যস্ত হয়ে স্যালুট দিতে দিতে সামনে এল। পুলিশ র্কতার এক ইশারায় মজনুকে যত্নের সাথে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি মনোরম এসি কক্ষে নিয়ে রাখল। আবারো উপাদেয় নানান ফল আর দামি দামি খাবার। মজা করে খেল মজনু।

রাত বারোটা। মজনুকে নিয়ে মোটা মোটা শিকঅলা বিশাল কক্ষে নিয়ে রাখা হলো। গভীর রাতে একাকী ঘুমিয়ে পড়ে মজনু।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে তার ডান পাশের ছাউনিতে বাঘ আর বাম পাশেরটায় সিংহ। পেছনেরটাতে হায়েনা। ওদের ছাউনির মত তারটিও। একটা বিশাল সাইনবোর্ড তার ছাউনির সামনে সেটে দেয়া আছে।

পুলিশ রাতেই এই জবর খবরটা প্রেসে পাঠিয়ে দেয়ায় পরের দিন চিড়িয়াখানার সামনে অজস্র দর্শণার্থীর ভীড়। ভিড় সামাল দিতে পুলিশের ব্যস্ততা।

এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি মূল্যে টিকিট কিনে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মজনুর খাচার সামনে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মজনু। শত শত দর্শক চরম আগ্রহে, পরম কৌতূহলে নানাভাবে দেখছে তাকে। আগ্রহের যেন শেষ নেই। কেউ কেউ পেছনের দর্শকের বেশামাল ধাক্কা খেয়েও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বারবার দেখার চেষ্টা করছে মজনুকে। কেউবা পুনঃ টিকিট কেটে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই মহানন্দে ফোনে বন্ধু-বান্ধবদেরকে আনন্দে খবরবাট্টা দিচ্ছে। অনেকেই ফোনে বলছে, আরে ভাই তাড়াতাড়ি আয়, না দেখলে জীবনে বড় কিছু মিস করবি। পৃথিবীর সবচেয়ে আজব দেশের আজব প্রাণী এনেছে চিড়িয়াখানায়!

ভীড় আর ভীড়। ভীড় বেড়েই চলে। সারা শহরে হৈ চৈ পড়ে গেল। চিড়িয়াখানায় এক নতুন আজব প্রাণী আনা হয়েছে। এটা এখন টক অব দ্য সিটি। দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা।

এভাবে মাস খানেক কাটলো। অসম্ভব কৌতূহলী দর্শকদের আবেদন নিবেদনে একদিন মজনুর গায়ের গেঞ্জি ও প্যান্টটা খুলে দেওয়া হল। অনেক চেষ্টা করেও সে এগুলো রাখতে পারে নি। সে কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাড়িতে চিঠি দিল।

পনের দিন পর তার সাবেক আমলা পিতা কামাল সাহেব উপস্থিত। জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কামাল সাহেবের সাথে আলাপ করে সব জেনে নিল। এবং মহানন্দে তাকে আপ্যায়ন করে খবরটা রাষ্ট্র করে দিতেই বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে তাকে ছেলে মজনুর খাঁচায় নিয়ে ঢুকালেন এবং মজনুকে বের করে দিয়ে বল্লেন, তুমি যেতে পার।

মজনু বাইরে এসে মাথা ঘুরিয়ে সাইনবোর্ডের লেখা পড়েই হাউ-মাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল। খাঁচার রডে ধরে সে আব্বুকে বলছে, তুমি একি করলে বাবা! কেন এলে? এখন কি হবে? এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।

আব্বু বলছে, এভাবে কাঁদসিস কেন? কী হয়েছে তোর?

মজনু বলছে আব্বু তোমার ছাউনির সাইনবোর্ডে কি লেখা আছে আমি পড়ি ? -বলেই সে কাঁদ কাঁদ কন্ঠে পড়ছেঃ

"এটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশের প্রাণী। এই প্রাণীটির পায়ের নিচের চামড়া থেকে শুরু করে মাথার কেশাগ্র পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। অতি বজ্জাত স্বভাবের জীব এটি। এদের স্বভাব বোঝা যায় না। কথায় পটু। কথা ও কাজের মধ্যে মিল পাবার কোন নজীর নেই। এরা দেশের চেয়ে দুর্নীতিকে বেশি পছন্দ করে। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য যা ইচ্ছা তা করতে বদ্ধ পরিকর। সংখ্যায় কম হলেও প্রভাব প্রতিপত্তিতে এরা বিশিষ্ট। এরা মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং তাদের মতই বাহ্যিক জীবনাচার এদের। এর ডানে বাঘ ও বামে সিংহ ও পেছনে পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী হায়েনা রয়েছে। এদের চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিকারক ও ভয়ংকর প্রাণী এটি। দয়া করে কেউ ঢিল ছুড়বেন না , নির্দয় আচরণ করবেন না।"

ছেলের পড়া শেষ হতেই কামাল সাহেব খিচকিমেরে বলে উঠলেন, আরে কস কি! তিনি নর্তন-কুর্দনে চিড়িয়াখানা মাতিয়ে তুললেন। ছুটে এলেন জু প্রধান ।

কামাল সাহেব চীৎকার করে কর্মকর্তার গলা টিপে ধরতে যান। পুলিশ প্রধান ভদ্রভাবে জানালেন, তুমি পৃথিবীর অতি বিরল প্রজাতির প্রাণী। মোটা তোমাকে এখানেই রাখা হবে।
আমি কি ছাড়া পাব না!
পাবে।
কবে, কখন?
পৃথিবীর অন্য কোন দেশ তোমাদের এই বিশ্ব রেকর্ড ভঙ্গ করার পর।
কি?!
জ্বী, আমার করার কিছুই নাই। এটাই এ্যানিম্যাল কালেকশান কর্তৃপক্ষের ডিসিশান।
কামাল সাহেব মলিন মুখে বললেন, বাবা মজনু, তুই বাড়ি চলে যা। আমার বুঝি আর যাওয়া হবেনারে!



৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×