ডুমেলা বতসোয়ানা-১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আগেরগুলো পড়তে চাইলে-ডুমেলা বতসোয়ানা-১২
বতসোয়ানা আসার পর এদেশের অনেকের কাছে বাংলাদেশ ঠিক কোথায় অবস্থিত তা বোঝাতে ঘাম ছুটে যেতো। আমাদের পরিচয় দেয়ার মতো তো আসলেই কিছু ছিল না। দি আমেরিকান হেরিটেজ ডিকশনারিতে বাংলাদেশের পরিচয় এভাবে দেয়া আছে, বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। পূর্বে বাংলার অংশ ছিল। ইনডিয়া ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এটি পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ইনডিয়ান সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ আলাদা দেশ গঠন করে। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। জনসংখ্যা-১৪,৪০০০,০০০।
ব্রিটানিকায় বলা আছে, একটি দেশ, দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত, আয়তন ৫৬,৫৯৭ বর্গমাইল (১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার)। জনসংখ্যা ২০০২ অনুযায়ী ১৩,৩৩,৭৭০০০। রাজধানী ঢাকা।
তারপর আতিপাতি করে খুঁজেও বাংলাদেশকে এক নামে চেনা যাবে এ রকম কোনো তথ্য পেলাম না। এনসাইক্লোপিডিয়াতে আরো লম্বা ইতিহাস, ভূগোল, পৌরনীতি সবকিছু বলা আছে কিন্তু এক বাক্যে আমার দেশকে পরিচিত করে তুলতে পারে এমন তথ্য পাইনি। তারপর আরো অনেক ডিকশনারি খুঁজলাম। ওয়ার্ডনেট, উইকিপিডিয়া কোথাও আমাদের দেশকে এক বাক্যে পরিচিত করানো যাবে এমন কিছু খুঁজে পেলাম না। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার মাথার ওপর বসা এ দেশটিতে এসেছি আজ কয়েক মাস হলো। এ পর্যন্ত এদেশি যতোজনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেকেরই তেমন একটা ধারণা নেই। অবশ্য দুই-একজন পেয়েছি যারা বাংলাদেশকে ক্রিকেট প্লেয়িং দেশ হিসেবে জানে, কিন্তু সেটাও তেমন ভালোভাবে নয়। আমার পাশের রুমমেটের কাছ থেকে এদেশি একটি ডিকশনারি খুঁজে বাংলাদেশের পরিচয় জানতে গিয়ে দেখি এক সময়কার পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন এবং অন্যতম রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচয় দেয়া আছে। যাক তবুও তো একটি পরিচয়।
একদিন আমি বতসোয়ানা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে বয়স্ক শিক্ষার ওপর বই খুঁজতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বই পাই। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শনের ওপর একটি বই। বইটি দেখতে পেয়ে কি যে খুশি হয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, বাংলা সাহিত্যে একমাত্র নোবেল বিজয়ী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই। হোক না তা সম্পূর্ণ ইংরেজিতে অনুবাদকৃত, তবুও তো তিনি আমাদের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের কবি। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে যাওয়া কবি। আমি সোৎসাহে রুমমেটদের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পরিচিত করে তোলার গল্প জুড়ে দেই। তারা অবাক হয়। কিভাবে ইংরেজি ভিন্ন অন্য ভাষার একজন কবি নোবেল পুরস্কার পায় তা আমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয়। আমি প্রাণপণে আমার দেশের যা কিছু ভালো আছে, যা কিছু সুন্দর তার ব্যাখ্যা করি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি।
এই তো কিছুদিন আগে আমার ডিপার্টমেন্টের কোঅর্ডিনেটর লেথোসোডি আমাকে দেখে বললো, জামান, তুমি কি ক্রিসমাস-এর বন্ধে বাংলাদেশ যাবে? যেও না, ওখানে শুধু বৃষ্টি আর বন্যা।
আমি বুঝলাম, এ মেয়েটি সম্ভবত বতসোয়ানা টেলিভিশনে কিছুদিন আগে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের দৃশ্য দেখে আমাকে এ কথা বলছে।
আমি ভাবি, তাই তো। আমাদের বাংলাদেশ যে বিশ্ব দরবারে বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, সাইক্লোন, টর্নেডো কবলিত একটি গরিব রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বলার মতো তো আমাদের তেমন কিছু নেই। প্রতিবছর আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হই। এ রকম চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে আসে। আমরা রাজনৈতিক হানাহানিতে বিশ্ব দরবারের মাথাব্যথা জাগিয়ে তুলি। আমরা মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যাই। ধর্মান্ধ কিছু ব্যক্তির বোমাবাজির কারণে আমরা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যাই। বিদেশে এসে আমাদের নিচু মাথা আরো নিচু হয়ে যায়। আমরা বুক ফুলিয়ে গর্ব করতে পারি না - আমার সোনার বাংলা বিশ্বের দরবারে অন্যতম সুন্দর একটি দেশ, যে দেশের রয়েছে একটি সম্ভাবনাময় বিশাল জনসম্পদ, যে দেশের রয়েছে অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদ, যা দিয়ে আমরা বিশ্বকে চিনিয়ে দিতে পারি যে, আমরা বিশ্ব সেরা। কিন্তু আমরা পারি না। আমাদের জনসংখ্যা এখন সুষ্ঠু নেতৃত্বের অভাবে জন-বোঝা হয়ে দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এখন অদূরদর্শিতার কারণে অন্য দেশের লোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে আমাদের নেতা-নেত্রীরা ব্যতিব্যস্ত থাকেন। ক্ষমতায় যেতে পারলে আমও খান আর ছালাটিকেও বগলদাবা করেন। আমাদের আমজনতার জন্য আঁটিটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, আঁটিটি বপন করো, এক সময় গাছ হবে, তারপর আম হবে, তারপর তোমরা খাবে।
আমরা সেই স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকি। আমাদের ওপর মিথ্যা স্বপ্ন আরোপ করা হয়, আর আমরা সেই আরোপিত স্বপ্ন ধারণ করেই ভবিষ্যৎ পানে চেয়ে থাকি।
১৩ অক্টোবর ২০০৬, শুক্রবার। সকাল ১০টার দিকে আমার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়া সংক্রান্ত মেসেজটি। মেসেজটি পাঠিয়েছেন বতসোয়ানায় বসবাসরত এক বাঙালি ডাক্তার আরুস্তু ভাই। আমি মেসেজটি পড়ে হতচকিত হই। সত্যিই কি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন? আমি বাংলাদেশ থাকাকালেই শুনে এসেছি যে, তাঁর নাম নোবেল কমিটির মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সত্যিই যে তিনি একেবারে নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবেন এমনটি আমি কেন, মনে হয় অনেকেই কখনো ভাবিনি। আমি তড়িঘড়ি করে ইন্টারনেট ভুবনে বসে পড়ি। বিবিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি, আরে তাই তো! বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। আমি আবেগ চেপে রাখতে পারি না। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, এই তোমরা কে কোথায় আছ, শোনো। আমাদের বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক এ বছরের বিশ্ব সেরা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। তোমরা বুঝতে পারছো, আমি কি বলছি! আমি এ নোবেল বিজয়ী সন্তানের দেশের ছেলে।
কিন্তু এভাবে চিৎকার করে আমার বলা হয় না। আমি বিবিসির সংবাদ শিরোনামটি আমার মোবাইলের মেসেজ অপশনে হুবহু তুলে নেই। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অ্যান্ড দি গ্রামীণ ব্যাংক হ্যাভ বিন অ্যাওয়ার্ডেড দি ২০০৬ নোবেল পিস প্রাইস। এ বাক্যটির সঙ্গে থ্রি চিয়ার্স শব্দটি জুড়ে দিয়ে পাগলের মতো বিভিন্ন নাম্বারে সেন্ড করতে থাকি। প্রথম মেসেজটি যার নাম্বারে পাঠাই তিনি বতসোয়ানায় বসবাসকারী বাংলাদেশেরই সন্তান মি. আশরাফুল আলম। তারপর সাজ্জাদ ভাই, সবুর ভাই, শামীম, লিটন সবার নাম্বারে মেসেজ পাঠাতে থাকি। মনে হচ্ছিল সারা বিশ্বের সব মোবাইল নাম্বারে আমার দেশের গৌরবের কথা মেসেজ করে জানিয়ে দেই। আমার দেশের সোনার ছেলের নোবেল জয়ের কথা জানাই, তাঁর মহান কীর্তির কথা জানাই। বলি, দেখ, আমাদের দেশ শুধু দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই পরিচিত নয়, শুধু দুর্ভিক্ষের দেশ হিসেবেই পরিচিত নয়। রাজনৈতিক হিংসা-হানাহানির দেশ, সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচিত নয়। আমাদের সোনার বাংলাদেশ শান্তির দেশ, সোনার ছেলেদের দেশ। এ দেশের এক সোনার ছেলে বিশ্ব শান্তির বার্তা বয়ে এনেছে পৃথিবীব্যাপী। সন্ত্রাস নির্মূলে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে নয়, সন্ত্রাস নির্মূলে অন্য দেশকে দখল করে নয়, শুধু মানুষের হৃদয় জয় করেই একমাত্র শান্তি আনা সম্ভব, আমার দেশের সোনার ছেলে সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। লাখ লাখ গরিবের হৃদয় জয় করে এ শান্তি আনা সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তিই যে শান্তি আনার প্রকৃত পথ আমার দেশের সেই শান্তিকামী স্বপ্নদ্রষ্টা তা তোমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে যে হিসেবেই পরিচিত থাকুক না কেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তিতে নোবেল বিজয় বিদেশে আমাদের আবার মাথা উঁচু করে চলার প্রেরণা যুগিয়েছে। ছোট্ট একটি ধারণা নিয়েই তিনি আরম্ভ করেছিলেন। গরিবদের জামানত ছাড়া ঋণ প্রদানের ধারণা। মাত্র ২৭ ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকার সেই ঋণ। মহাজনের কাছে ঋণের দায়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪২ জন হতদরিদ্র নারীকে নিজের পকেট থেকেই সে ঋণ প্রদান করা হয়। আস্তে আস্তে সে ঋণ প্রসারিত হয়। সমাজের অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল গরিব শ্রেণীটি সেই ঋণের টাকা দিয়ে কর্ম খুঁজে নেয়, কাজ করতে থাকে। এতে প্রমাণিত হয়, আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী কর্মবিমুখ নয়। কাজ করার সুযোগ পেলে তারা পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম।
ছোট একটি ধারণা থেকে আজ কি বিশাল একটি মহীরুহ। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন, নীরবে নিশ্চুপে। দেশের ৬৪ লাখ গরিব ঋণগ্রহীতা (যার শতকরা ৯৬ জন মহিলা) সবাই এখন আত্মকর্মসংস্থানকারী ও সচ্ছল। প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার পোষ্য যদি তিনজন করেও থাকে তাহলে মোট সংখ্যা দাড়ায় ১ কোটি ৯২ লাখ+৬৪ লাখ। অর্থাৎ ২ কোটি ৫৬ লাখ। পরিসংখ্যানটি বলে দেয় যে বাংলাদেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষের প্রায় আড়াই কোটি গরিব মানুষ এখন সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছে। আমাদের মৌলিক যে চাহিদা - অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা - এর অন্তত প্রথম তিনটি অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান এই আড়াই কোটি গরিবের আয়ত্তে। বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের ডেটা অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪১.৮ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৪ কোটি ১৮ লাখ। আর ২০০০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৪৯.৮ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় পাঁচ কোটি। শতকরা হিসাবে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ জন দরিদ্র, হতদরিদ্র কিংবা নিঃস্ব। ধরে নিলাম, বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে এই প্রায় পাঁচ কোটি দরিদ্র লোকের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ গ্রামীণ ব্যাংকের কল্যাণে আজ সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছে। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান হয়েছে। আর বাকি থাকে আড়াই কোটি লোক। ১৯৭৬ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংক পথ চলা শুরু করে আজ প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের হাতিয়ার। এটা ২০০৭ সাল। এভাবে চলতে থাকলে বাকি প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা তিনটি পূরণ হতে তো বেশি সময় লাগার কথা নয়। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সে স্বপ্নের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বাংলাদেশে দারিদ্র্য নিরসন পুরোপুরি সম্ভব কি না - সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব। মানুষ নিজেই তার দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে পারে। দারিদ্র্য হচ্ছে বনসাইয়ের মতো। বড় বটগাছের বীজ হলেও পাত্রের কারণে বনসাই দেড় ফুটের মতো লম্বা হয়। এখানে দোষটা পাত্রের। গরিব মানুষ হচ্ছে বনসাই মানুষ। সমাজ তাকে ভিত দেয়নি বলে সে ছোট হয়ে আছে। আমি মনে করি, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য কোনো অনুদানের প্রয়োজন নেই। মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের শক্তি আছে। তিনি আশা করেন, ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে। পরবর্তী ১৫ বছরে বাকি অর্ধেকও থাকবে না।
১৯৭৬ সাল থেকে শুরু করে যে স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল তা আজ ২০০৬ সালে ৬৪ লাখ শাখা এবং ন্যূনতম তিনজন করে পোষ্য হিসেবে ১ কোটি ৯২ লাখ প্রশাখাবিশিষ্ট মহীরুহে পরিণত হয়েছে। মাঝখানে লেগেছে ৩০ বছর। ছোট্ট একটি স্বপ্নের বীজ থেকে আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা এ মহীরুহ এখন অনেক পুষ্ট। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী আর বাকি আড়াই কোটি লোকের মৌলিক এই তিনটি চাহিদা পূরণে এ পুষ্ট মহীরুহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য ২০০৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত - এই ২৪ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এখন আমাদের সে পথ অনুসরণ করে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্বের। আমরা হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানিপূর্ণ নেতৃত্ব চাই না। যে নেতৃত্ব আমাদের সাধারণ জীবনমানের পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখে না, আমরা সেই নেতৃত্ব চাই না। আমরা চাই অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানের আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে আসা কোনো নেতৃত্ব। আমরা চাই আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সক্ষম কোনো ক্যারিসমাটিক নেতৃত্ব, যার যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় রাজপুত্রের মতো আমাদের ঘুম ভেঙে যাবে এবং আমরা নতুন উদ্যমে আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বো।
অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়ে আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রথম তিনটি যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান - এগুলো পূরণে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যে পদযাত্রা শুরু করেছেন তা শুরু মাত্র। এ পথ চলা আমাদের চলতেই থাকবে। আমাদের এ পথ চলায় কান্ডারী হয়ে আসবেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসেরই মতো অন্য কোনো নেতা। যিনি বা যারা আমাদের আর বাকি দুইটি মৌলিক চাহিদা পূরণে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবেন। এগুলোর একটি শিক্ষা এবং অন্যটি চিকিৎসা। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা আজো অনেক পিছিয়ে আছি। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখানোর মধ্যেই নিহিত আছে অন্য দুইটি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্র। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারলে সর্বপ্রথম শিক্ষার সুযোগের কথা আসে। যদিও আমরা বলি, শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। কিন্তু এ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তো সর্বপ্রথম স্বাবলম্বী হওয়া দরকার। শিক্ষা গ্রহণ করার মতো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে না পারলে শিক্ষা সে সুযোগই হোক আর অধিকারই হোক তা নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় অনেক দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব হয় না। পড়াশোনার পরিবর্তে সংসারকে সময় দিলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে - এ রকম যদি দেশের অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা হয়ে থাকে- সে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠানো কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
চলবে...
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন