somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডুমেলা বতসোয়ানা-৮

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বতসোয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ
আগেরগুলো পড়তে চাইলে-ডুমেলা বতসোয়ানা

বতসোয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ
৯ আগস্ট সকাল বেলা মুজিবের গাড়ি করে গ্যাবরনের উদ্দেশে রওনা দেই। মোলেপোলেলে থেকে গ্যাবরন আসতে বতসোয়ানা এয়ারপোর্ট পার হয়েই আসতে হয়। কাছাকাছি এসে এয়ারপোর্টের নামটা ভালো করে দেখে নিলাম। স্যার সেরেস্তে খামা এয়ারপোর্ট। বতসোয়ানার জাতির জনকের নামে এয়ারপোর্টটি। এয়ারপোর্ট রোড পেরিয়ে আমার কাছে আবার সব পরিচিত হয়ে উঠল। প্রথম দিন যখন শামীমের গাড়ি করে গ্যাবরন যাই রাস্তাঘাটের ছবি মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছিলাম। এতক্ষণ একটানা পথের মধ্যে দৃষ্টি ছিল। মোলেপোলেলে থেকে এ পর্যন্ত আসতে পুরো রাস্তাটা বৈচিত্রহীন। মাঝে মাঝে দু'চারটা কাভার্ড ভ্যান বা লরি ছুটে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু প্রাইভেট কার আরও স্পিডে আমাদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। দূরে বহুদূরে যতদূর দৃষ্টি যায় ফসলহীন সমতল রুক্ষ মাঠ। মাঝে মাঝে ন্যাড়া পাহাড়ের সারি। আমরা ছুটছি তো ছুটছি। ফাঁকা রাস্তা। এটাকেই বোধ হয় বলা হয় লং ড্রাইভ। আমাদের দেশে এরকম রাস্তা কল্পনা করি। মানুষে গিজ গিজ করছে রাস্তাগুলো । আর এখানে মাইলের পর মাইল রাস্তার পাশে কোন জনবসতি নেই। মাঠে কোন ফসল নেই। রাস্তার পাশে কোন গাছ নেই। ঝকঝকে চকচকে মসৃন রাস্তা। ড্রাইভ করতে গিয়ে ড্রাইভার যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে এজন্য কয়েক কিলোমিটার পর পর রাস্তায় ঝাঁকুনি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। হঠাৎ ঘসঘস শব্দ এবং গাড়িতে মাঝারি সাইজের ঝাঁকুনি খেয়ে প্রথমবার তো রীতিমতো চমকে গিয়েছিলাম-গাড়ির কোন সমস্যা হলো কিনা ভেবে। পরে জেনেছি এই দীর্ঘ পথে ড্রাইভারের সতর্কতার জন্যই এই ব্যবস্থা।

মুজিব আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নামিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল। বতসোয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে প্রথমেই গেলাম এডাল্ট এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে। ডিপার্টমেন্টে এই সকাল বেলা কেউ নেই। এই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা সবাই বিকেল বেলা পড়ে। দিনের বেলায় চাকরি বাকরি করে তারপর পড়তে আসে। তাই ডিপার্টমেন্ট খালি। কাউকে না পেয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিংয়ের দিকে গেলাম। সবাই কিউ ধরে অ্যাডমিশন ফি দিচ্ছে। ছেলে মেয়ে একলাইনে দাঁড়ানো। আমিও লাইনের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালাম। অ্যাডমিশন ফি জমা দিতে হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্র। ফি জমা দিয়ে এডমিশন চুড়ান্ত করার জন্য ছুটতে হলো প্রফেসর অধুয়ারানার কাছে। ফরমে স্বাক্ষর নিয়ে এবার ছুটলাম আমার বাসস্থানের সন্ধানে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল আছে। আমাকে যেতে হবে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কাউন্সিল অফিসে। ক্রিস্টিনা এই অফিসে পার্টটাইম জব করে। ওর সাথে পরিচিত হয়ে আমার আগমনের উদ্দেশ্য খুলে বলি। চটপটে এই তরুণীটি বতসোয়ানার মেয়ে। পড়ে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিষয়ে। ওর উপরেই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের দেখভালের দায়িত্ব। ড্রয়ার থেকে এক গোছা চাবি নিয়ে ও বের হয়। আমাকে নিয়ে প্রথমেই যায় গ্র্যাজুয়েট হোস্টেল কম্পাউন্ডে। লাল সিরামিক ইটের তৈরি হোস্টেল কম্পাউন্ডটা আমার খুব মনে ধরে।

একটি কক্ষে আমি বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা লাগেজটা নিয়ে উঠে পড়ি। ধবধবে সাদা বিছানা পাতা খাটে। একপাশে পড়ার টেবিল। একটি বড়সড় কেবিনেট। কাপড়-চোপড় রাখা যাবে। রুমটি খুব পছন্দ হয়। একান্ত নিজের একটি রুম। ক্রিস্টিনাকে বিদায় করে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে আমি বিছানায় গা এলিয়ে দেই। আহ্ কি শান্তি। বিদেশ বিভূঁইয়ে এরকম একান্ত নিজের করে একটি রুম থাকা মানে থাকার নিশ্চিন্ত ব্যবস্থা। গ্যাবরন আসার পথে সেই যে খেয়েছি পেটে আর কিছু পড়েনি। ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। খাবারের সন্ধানে বেরুতে হবে। এই ভার্সিটিতে নিশ্চয়ই কোন ক্যান্টিন আছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হই। খাবারের সংস্থানটা করে না রাখলে পরে বিপদ হতে পারে। এই ক'দিন মোটামুটি মুজিবের বাসায় বাঙালি খাবার খেয়েছি। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালি খাবার কোথায় পাবো? আমার রূম থেকে বের হয়ে একে ওকে জিজ্ঞেস করে একটি ক্যান্টিন পাই। পরিচিত খাবারের মধ্যে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মানে আলু ভাজা আর চিকেন ফ্রাই। সাথে শীতল ঠান্ডা কোক। একটি অদ্ভূত ব্যাপার দেখেছি এখানে। এখানকার অধিবাসী সবার সফট ড্রিংকস খুব পছন্দ। এই কনকনে শীতের মধ্যেও হিম শীতল কোক খাওয়া চাই।

THUTU KE DEBE. বতসোয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ভবনের সামনে বড় করে লেখা টি দেখে চমকে যাই। উচ্চারণটা বাংলায় করলে দাঁড়ায় "থুতু কে দেবে"। কী আশ্চর্য! এখানে থুথু কে দেবে? এটি নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শ্লোগান। এর বাংলা অর্থ কি কে জানে! আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে থিতু হয়ে নেই তারপর জানা যাবে। কিন্তু থুতু নিয়ে একটি অবাক করা তথ্য শামীমের কাছে শুনে আশ্চর্য হয়েছি। এদেশে রাস্তাঘাটে যত্রতত্র থুতু, কফ ফেলা অভব্যতা। এমনকি গলা খাঁকারি দেওয়াও অভদ্রতা। বতসোয়ানা ব্শ্বিবিদ্যালয়টি এতটাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন যে এখানে থুথু ফেলতেও মন চাইবে না। কোথাও একটুকরো কাগজ পড়ে নেই। দেয়ালে কোন পোস্টার নেই, চিকা মারা নেই। শিক্ষার্থীরা কোন কিছু খেলে উচ্ছিটাংশ কষ্ট করে হলেও বিনে নিয়ে ফেলবে। আর বাংলাদেশে আমাদের অভ্যাসই হচ্ছে রাস্তাঘাটে কফ, মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা ফেলা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে ময়লার ভাগাড়। পোস্টার, দেয়াল লিখন ইত্যাদিতে সয়লাব। একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম যেখানে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে সেখানে এরকম পরিবেশ দেখে তারা কী শিক্ষা পায়? কিন্তু বতসোয়ানার শিক্ষার্থীদের দেখে মনে হলো একটি পরিচ্ছন্ন জাতি হিসেবে এরা ভবিষ্যত নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।

চলবে...
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×