হিপনোটাইজ কনসেপ্টের সাথে প্রথম পরিচয় হয় হুমায়ূনের আজ রবিবার নাটক থেকে। এক বুড়া সবাইকে পেন্ডুলামের দিকে তাকায় থাকতে বলে হিপনোটাইজ করে ফেলে। তখন মনে আছে, গলার লকেট সহ চেইন খুলে নিয়ে ভাইয়া, মীরা, বাবা, মা, সবাইকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করতাম। কাজ হতো না।
আজকে সাইকোলজি টিউটরিয়ালটা ছিল হিপনোটাইজ করা নিয়ে। প্রথমে পুরা ক্লাস ব্যাপী সবাইকে হিপনোটাইজ করার একটা চেষ্টা করা হল, তারপরে এই নিয়ে লেকচার। খুব মনযোগ দিয়ে, একান্ত মনে কোন কিছু ভাবলে, আমাদের মস্তিষ্ক সেটাকেই সত্যি ভাবা শুরু করে। সেটাই হিপনোটাইজড হওয়া। কেউ কেউ খুব সহজে হিপনোটাইজড হয়। তাদের মধ্যে খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করার প্রবনতা থাকে, সহজে বিশ্বাস করার প্রবনতা থাকে, নতুন জিনিস পরীক্ষা করার ইচ্ছা থাকে, কল্পনা বিলাসী মন থাকে। এই গুণগুলো সবার সমান পরিমানে থাকে না, তাই সবাইকে হিপনোটাইজ করা একই রকম সহজ না। কাউকে খুব সহজে করা যায়, কাউকে কখনই করা যায় না।
আমাদের কাছে ভদ্রমহিলা প্রথমেই প্রতিজ্ঞা করে নিল উলটা পালটা কিছু করাবে না, তাই স্বস্তি পেলাম। তারপরে বলা হল পুরো গায়ের প্রতিটা পেশী নরম করে চেয়ারে গা এলিয়ে বসতে। আমি স্যান্ডেল খুলে বসলাম! কি হয় দেখি! তারপরে বলা হল হাতের তালুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। আমার ডান হাতের তালুতে একটা তিল আছে। লোকে বলে, তালুতে তিল থাকলে নাকি মানুষ বিদেশে যায়। এটার স্ট্যাস্টিক্যাল বেইস জানতে ইচ্ছা করছে। ভাবতে ভাবতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। খুব চেষ্টা করছিলাম মনযোগ দিয়ে এক সুরে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে যেতে। পারছিলাম না। একটা গোস্বা এসএমএস পেয়েছিলাম ক্লাস শুরুর আগে। প্রিয় কেউ আমার উপর রাগ করলে আমার খুব অস্থির লাগে। তবু চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু জ্বালা হল, ভদ্রলোক বলছে, 'তোমার ঘুম আসছে, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে, তুমি চোখ খোলা রাখতে পারছ না'... আমার ঘুম আসছিল না
খুব চেষ্টা করলাম বিশ্বাস করতে। অত:পর, যখন বলল, 'তোমার চোখ বন্ধ, একদম বন্ধ, কিচ্ছু দেখতে পারছো না। তুমি গভীর ঘুমে আপতিত।' আমি তখন চোখ বন্ধ করে ফেললাম। গভীর ঘুমে না হলেও একটু ঘুম আসছিল বইকি!
তারপরে একসুরে বলা কথাগুলো বাঁ হাত উপরে তুলতে বলল। সোজাসুজি উপরে তোলা অবস্থায় কল্পনা করতে বলল, হাতের সাথে ভারি কিছু বাঁধা। হাত ভার সহ্য করতে পারছে না। নেমে আসছে। একটু একটু করে হাত নেমে আসছে। কি আশ্চর্য! আমার হাতটাও নামা শুরু করল। আমার একটু ভয় লাগল, চেষ্টা করলাম হাতটাকে স্থির রাখতে... আমি কি সত্যিই হিপনোটাইজড? আশ্চর্য, পারলাম না হাতকে স্থির রাখতে, কেউ একজন খুব জোড়ের সাথে নিচের দিকে টানছে।
এর পরে বলল, দুই হাত শক্ত করে এক সাথে ধরে রাখতে। এর পরে ভাবতে, হাত আলাদা করা যাবে না। এরপরে টেনে আলাদা করতে। ঠিক তখনই ভাবা শুরু করেছিলাম, আমি হিপনোটাইজড। কিন্তু হাত সহজেই আলাদা করে ফেললাম।
এরপরে বলা হল, ভাবতে, চোখ খোলা যাবে না। এবং চোখ খোলার চেষ্টা করতে। সত্যিই, খুব খুব চেষ্টা করলাম চোখ খুলতে। দুই চোখের পাতা সুপার গ্লু দিয়ে এক সাথে লাগানো ছিল। একটুও আলো আসতে পারল না, অনেক যুদ্ধ করেও খুলতে পারলাম না চোখের পাতা। বলল, মাথা নাড়ানো যাবে না--এতে বিশ্বাস করতে। তারপরে মাথা নাড়ানোর চেষ্টা করতে। মাথায় যেন কেউ দশ টনী ওজনের পাথর বসিয়ে দিল। খুব জোড় করে ঘাড়টাকে একটু একটু এদিক সেদিক নিলাম। দুই হাত উপরে তুলে যখন ভাবতে বললো হাতগুলো একটা অদৃশ্য শক্তি বলে একটা অন্যকে টানছে, তখন সত্যিই তাই হলো।
যখন আশ্চর্য হয়ে ভাবছি, ইশ, আমাকে হিপনোটাইজ করে ফেলবে এত্ত সোজা? পরেরটা বিশ্বাসই করব না। বলা হলো ভাবতে, মাথার উপর দিয়ে মাছি উড়ছে। হুট করে মনে হলো, ধুর হঠাৎ করে মাছি কোথথেকে আসবে। ব্যাস, কিছুতেই মাছি টের পেলাম না!
ক্লাসের একটা মেয়ে পুরা হিপনোটাইজড হয়ে গিয়েছিল, ঠিক এই পর্যায়ে বুঝা গেল। ও হাত দিয়ে মাথার উপর থেকে মাছি তাড়াচ্ছিল বিরক্ত হয়ে!
আধা ঘন্টার প্রক্রিয়াটা শেষে চোখ খুললাম। তখন বুঝলাম, হয়েছিলাম বুঝি বা আধা আধি হিপনোটাইজড। পুরাপুরি হই নি! হলে মন্দ হতো না অবশ্য!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০