somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'পড়ো, তোমার প্রভুর নামে' - 1

০৫ ই মার্চ, ২০০৭ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিমিকে সেদিন দেখলাম অনেক দিন পরে। গুল্টু গুল্টু চেহারাটার বাঙালী শ্যামল মেয়ের মায়া ভাব কমে নি একটুও, কিন্তু তারপরেও পরিনত। অনেক পরিনত। আগে এদের চিৎকার চেঁচামেঁচিতে কিচ্ছু বলতে পারতাম না, সেদিন চুপ। চেহারাও একটু অন্যরকম লাগছে... রং করা চুল, প্লাক করা ভ্রু... সব কিছু ওই একই রকম, তবে বদল হলো কি সে? অনেক পরে মনে পড়ল, শেষ বার যখন ওকে দেখেছিলাম তখন ওর ভ্রুতে দুল ছিল! জিজ্ঞাসা করলাম, শখ চলে গেল? ও মাথা নাড়ে।

ইউনি, হলিডে, জবস, হোমবুশের মেয়েদের খবরাখবর নেয়ার ফাঁকে হঠাৎই বলল, 'জানো আপু, এই হলিডেতে আমি কুরআন পড়ছি।' আমি জানি, সেই মুহূর্তে আমাকে দেখে যে কেউ ভাবতো আমি আকাশের চাঁদটা দুই হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছি। খুব ভালো লাগায় ডুবছি, ভাসছি। 'সত্যি?' মাথায় দ্রুত মিলিয়ে নিলাম স্বাধীনচেতা মেয়েটা আর কুরআন পড়ার সম্ভবনা... ওর ট্যাটু করার তীব্র বাসনা, ঘরের চারিদিকে সাড়ি সাড়ি টানানো হলিউড বলিউডের হট নায়কদের পোস্টার, কজমো ম্যাগাজিনের নেশা... এসবের চেয়ে বেশি করে দেখেছি খুব নরম মনটা। অনেকটা আমার মত ও, যা মন থেকে মানতে পারবে না, তা কখনই করতে পারে না। আর মন থেকে কিছু করতে চাইলে ভয়ংকর গোঁয়ার। কেন যেন মনে হতো, ও পড়বে। কখনও জোড় করে বলি নি, মনে হতো, ও নিজেই পড়বে।
'তারপরে, কেমন লাগল বলো তো?'
'সত্যি বলব? খুবই অন্যরকম। বেশ ভালো লাগছে।'
'মমম... বুঝিয়ে বলো, কেমন অন্যরকম?'
'এই যে, আমাদের চারপাশে আমরা সব সময় যেমন ইসলাম দেখি, তার থেকে অন্যরকম। তুমি একবার বলছিলে, আমাদের মুসলিম সমাজে প্রথম সিঁড়িটা বাদ দিয়েই পরের সিঁড়িগুলোতে উঠানোর চেষ্টা করা হয় তেমন। প্রথম সিঁড়িটাই তো হলো লেখক আল্লাহকে চেনা, তাঁর প্রতি বিশ্বাস, আস্থা। সত্যি বলতে কি, বিশ্বাস ব্যাপারটা যে কেমন হওয়া উচিত, কিসে হওয়া উচিত, সেটাও ভালো করে বুঝি নি কুরআন নিজে পড়া শুরু করার আগে।'
'রিমি, আমার কিন্তু ঠিক সেরকম মনে হচ্ছিল প্রথম কুরআন পড়ার পরে। আমিও মোটামোটি প্রথম নিজের ইচ্ছায়, আগ্রহ নিয়ে, বুঝে পড়া শুরু করেছি সতের বছর বয়সে। আমার যা বদলে যাওয়া, সেটা সেই বয়সেই।'
'আচ্ছা!'
'হ্যা তো। দেখো, ছোট বেলা থেকে আমাদের বলা হয় ভালো কাজগুলো করতে হবে দোযখের আগুনের ভয়ে। ভাত নষ্ট করলে একশ' শাপ এসে কুটুস করে কামড় দিবে। কি তুমি শুনো নি এই গল্প?'
'হা হা হা। হ্যা শুনেছি।'
'তারপরে, পর্দা না করলে গায়ের ওই অংশগুলো আগুনে পুড়বে। মিথ্যা বললে আল্লাহ জিভ কেটে দিবে। ফর গডস সেইক, কুরআন আমাদের যেভাবে কনভিনস করার চেষ্টা করেছে, সেই ভাবে কনভিনস করো না বাবা!'
'সেটাই। কুরআনে কিন্তু ভালো কাজ করার জন্য প্রাইমারিলি দোযখের আগুনের ভয় দেখানো হয় নি।'
'হ্যা, মনযোগ দিয়ে কুরআন পড়লে বুঝা যায়, আল্লাহ সব কাজ করতে বলছেন কেবল তাঁর জন্য। তাঁর প্রতি ভালোবাসা থেকে। কারণটাও খুব স্পষ্ট করে বলে দেয়া... কারণ আমরা আল্লাহর। আমাদের মায়েরা, বাবারা আমাদের ভালোবাসেন, আমাদের অনেক দেন বলেই আমরা তাদের ভালোবাসতে পারি। কৃতজ্ঞতায় ডুবে থাকতে পারি। কুরআনের পুরোটা জুড়ে আল্লাহ এই কৃতজ্ঞতা বোধটাই উসকে দিতে চেয়েছেন, সত্যটাকে চিনিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাই না? বেহেস্ত দোযখটা কেবল আল্লাহ এই ভালোবাসা ফিরিয়ে না দিয়ে প্রচন্ড অকৃতজ্ঞ হলে, তার শাস্তি বা পুরষ্কার। আর কুরআনে কিন্তু বলা হয়েছে, আমাদের ভালো কাজ করার প্রবনতা খারাপ কাজ করার প্রবনতার চেয়ে বেশি। নিজেদের প্রকৃতিকে অস্বীকার করার শাস্তি দোযখ!'
'একজাক্টলি! আমার খুব ভালো লাগছিল জানো, মনে হচ্ছিল, আল্লাহ আমার সাথে কথা বলছেন!'
'ও মাই গড রিমি মনি, তুমি আমাকে তিন চার বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে দিচ্ছো। আল্লাহকে ঠিক মতো চিনতে পারলে আসলে নিজেকে ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা অনেকটুকু সহজ, তখন কাজগুলো করার মটিভেশন থাকে।'
'একদম ঠিক কথা!'
'আমাকে বহুত বলে কয়েও নামাযে রেগুলার করতে পারে নি আগে। তারপরে, যখন নিজে পড়লাম, বুঝলাম, ভাল্লাগলো, তখন নামায না পড়লে মনে হয় খুব প্রিয় কাউকে হতাশ করছি। খুব প্রিয় কারো সাথে দেখা হওয়াটা মিস হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা কাজের বেলাতেই তাই।'
'আই এম গেটিং দেয়ার আপু!'
'নো ওয়ারিস ডিয়ার, টেইক য়ুর টাইম!'

মন ভরে গিয়েছিল একদম। সেদিন আরেকজন, আমার এক ব্লগার ছোট ভাই, প্রচন্ড রকমের ব্রিলিয়ান্ট, স্বপ্নবাজ, মটিভেটেড ছেলেটা বলছিল সূরা বাক্বারায় পড়া একটা প্রিয় আয়াতের কথা। তখনও ঠিক একই রকম অনুভূতি হচ্ছিল। আমার বড় হতাশ হয় যখন দেখি সবচেয়ে অবুঝেরাই কুরআনের রেফারেন্স টানে সবচেয়ে বেশি বার। বুঝদাররা তাই তিক্ত। যখন দেখি কোন বুঝদার সবচেয়ে বেশি বুঝার প্রয়োজন আছে যা, তাই হাতে তুলে নিয়েছে, তখন বড় আনন্দ হয়। বড় আনন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুহাম্মদ ইউনূসকে একঘরে করে দিন

লিখেছেন sabbir2cool, ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭


জুলাই ষড়যন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাইয়ের মেটিকুলাস ডিজাইনড প্ল্যানে দেশবিরোধী যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেটার অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। দখলদার ইউনূস সরকার প্রবল চাপে পড়েছে। এখন তাদের সব কূল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯


দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার নাই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

একটা পোস্ট দেখে লেখার সাধ জাগলো। যা নিয়ে লিখবো তা আমার নেই।
আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই। বাবা মা যখন ছোট ছিলেন তখনই তারা পরপারে উড়াল দিয়েছেন। বাবার বয়স যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক সংকটে বিএনপি খেলছে পিছনে থেকে, কিনতু কেন?

লিখেছেন সরলপাঠ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:২১

রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ই সঠিক

লিখেছেন ইশতিয়াক ফাহাদ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৯

কিছু মানুষ পুরোপুরি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাঁচে। তারা বারবার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কথাই একমাত্র সত্য। এই প্রক্রিয়াটি এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×