সকালে উঠেই ধুপ ধাপ রেডি হয়ে ইউনি। ট্রেইন দেরি হলো আধা ঘন্টা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ক্লাসে ঢুকলাম দেরি করে। মহিলা একটা ভদ্র লেকচার দিল দেরি করা নিয়ে, বকাবকি করার চেয়ে অনেক গুণে খারাপ। খারাপ লাগাটা কাটতে সময় লাগে নি অবশ্য। অ্যামিগডালার স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবে গেলাম দ্রুত। এরপরে দৌঁড়ে ফিজিওলজি লেকচার। জারা, বাতুল, মেহরীন, লীনার সাথে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে দেখা হওয়া বন্ধুর মতো কোলাকোলি। গালে গাল ঠেকানো। লেকচারারকে আমার প্রথম দিন পছন্দ হয় নি। এখন সহনীয়। তারপরে আবার দেঁৗড়ে সাইকোলজি লেকচার। আজকে গেস্ট স্পীকার বার্ট এন্ডারসন। গত সেমিস্টারে আমার খুবই ভালো লেগেছে ভদ্রলোকের লেকচার। আমেরিকান ভদ্রলোক, প্রচন্ড হাসাতে পারে। ছেলেদের সেকজুয়াল বিহেভিয়ার নিয়ে একটা স্টাডি কেন্দ্রিক হাসাহাসি করালেন আজ। বলছেন, আমার এক মেয়ে কলিগ এই স্টাডি দেখে আমাদের বলেন, 'তোমাদের ছেলেদের সমস্যা কি?' আমি প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিতে নিয়ে ভাবলাম, 'ওয়েইট আ মিনিট, আসলেই তো, আমাদের ছেলেদের সমস্যা কি?' আমিও তাই ভাবলাম ! ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু ছুটাছুটি। তারপরে গেলাম আমার অক্সিজেনের নি:শর্ত সরবরাহকে বিদায় দিতে। বেশ সুন্দর সময় কাটলো। একটু শূন্য লাগছিল কি?
হয়তো!
তারপরে, যখন সেন্ট্রাল স্টেশনে প্লাটফর্মে যাচ্ছি তখন হঠাৎ দেখা এডি এভিনিউয়ের ফুলের দোকানের মালিকের সাথে। ষাট সত্তরের বুড়া। আমার মুখ চেনা হয়ে গিয়েছে, দেখা হলেই গজ দাঁত দেখিয়ে একটা বিস্তৃত হাসি দেই। আজ আমাকে অনেক দিন পরে দেখে হাত বাড়িয়ে এসেছে হ্যান্ড শেইক করার জন্য। তারপরে বলছে, 'ডার্লিং, আসো আমার সাথে এক কাপ কফি খাও'! একবার মায়ের মুখটা ভাবলাম। মহিলা যদি জানে এই ঘটনা, টেনশনে পরের দিন আমাকে ইউনিতে দিয়ে আসবে। তাড়াতাড়ি ট্রেইনের সময় দেখিয়ে মেঘলা আকাশে আসন্ন ঝড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, 'মা খুব চিন্তা করবে যে আমার দেরি দেখে'! বুড়া তবু ছাড়ে না, 'আসো না, মাত্র দশ মিনিট'। এর আগে এক কফিওয়ালা আমাকে জোর করে ফ্রি কফি খাইয়েছে, আরেকজন ফ্রি হট চিপস। আরেকজন... ঘটনাগুলো শুনে মায়ের টেনশনে রাতে ঘুম হয়নি। এবার একটা ফুলের দোকানওয়ালা বুড়ো লোকের কফির দাওয়াত কবুল করলাম শুনলে কি করবে ভেবেই ফসকে চলে আসলাম! আহারে, বুড়ো লোকটা সঙ্গ দেয়ার মায়াময় সঙ্গী খুঁজে পাক!
বাসায় ফিরে কনফুসিয়াসের ব্লগে দেয়া টুটুলের দিন যায় একাকী ছেড়ে বসলাম। ওনাকে ধন্যবাদ দেয়া হয় নি, আসলেই অসাধারন গান। তখন ছবির ফাইল ঘাটছিলাম। এই ছবিটা পেয়ে গেলাম। বাংলাদেশে যাওয়ার সময় প্লেইন্লে তোলা। দুম করে মাথায় টাইটেলটা চলে আসল। কিন্তু আসলে আকাশটা শূন্য হওয়ার কোন কারণ নেই। দু'শ করতে হবে আর পাঁচ দিনে, এখনও এগারোটা বাকি। অথচ লেখার কিচ্ছু পাচ্ছি না। না সাবজেক্ট। না সময়। না ইচ্ছা। হেনস এই আবোল তাবোল আলাপে সংখ্যা বাড়ানো!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০০৭ ভোর ৫:১১