
শুরুটা ভালো হলে নাকি অর্ধেক কাজ এগিয়ে যায়। ক্রিকেটেও তাই। ভালো একটা উদ্বোধনী জুটি হলে বড় স্কোরের পথটা সহজ হয়ে যায় অনেক। এবারের বিশ্বকাপে উপমহাদেশের উর্বর উইকেটে ব্যাটসম্যানরা পাওয়ার-প্লে কাজে লাগিয়ে ফুল ফোটাতে চাইবেন নিশ্চয়ই। তাদের বেঁধে রাখতে সেখানেই বিষ ঢালতে হবে বোলারদের। কাজটা কিন্তু ভালোই পারতেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। গত দুই বছরের পারফরম্যান্স সে কথাই বলছে।
মাশরাফির ইকোনমি রেট (ওভারপ্রতি রান দেওয়ার হার) এমনিতেই শ্রদ্ধা করার মতো, ৪.৬০। প্রথম ১০ ওভারে সেটা আরো ভালো, ৪.০৩। ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই সেরা পারফরম্যান্স। তাঁর সমান ৪.০৩ ইকোনমি রেট দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার লনওয়াবে সোসোবেরও। তবে এ সময় মাশরাফির চেয়ে দুই ইনিংস কম বল করেছেন তিনি। ১৯ ইনিংসে ২৪.৭৮ গড়ে সোসোবের উইকেট ১৪টি আর ২১ ইনিংসে ২৭.৩০ গড়ে মাশরাফির ১৩টি। গড়ের দিক থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোসোবের ঠিক পরেই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। অথচ চোটের কারণে তিনি এবারের বিশ্বকাপে নেই। মাশরাফির অভাবটা ভোলাতে পারবেন তো অন্যরা?
গত দুই বছরে মাশরাফি খেলেছেন ২১টি ওয়ানডে। এর মধ্যে সেরা ম্যাচটা ২০০৯-এর ১০ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে অনুষ্ঠিত ট্রাই নেশন ফাইনাল। মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় দুর্দান্ত একটা শুরুর দরকার ছিল বাংলাদেশের। আর মাশরাফির প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। উপুল থারাঙ্গার শট গিয়েছিল এঙ্ট্রা কভারে থাকা সাকিব আল হাসানের হাতে। সনাৎ জয়াসুরিয়াকে এগিয়ে আসতে দেখে থ্রো করেন সাকিব আল হাসান,তাতেই রান অউট মাতারা হারিকেন। প্রথম ওভারে মেডেন নেয়া মাশরাফি নিজের তৃতীয় ওভারে ফেরান চামারা কাপুগেদারাকে। মাশরাফির প্রেরণায় জ্বলে ওঠা নাজমুল ৩ উইকেট নিলে ৬ রানে ৫ উইকেটে পরিণত হয় লংকানরা। ১০ ওভারের মধ্যে নিজের ৫ ওভারে 'নড়াইল এঙ্প্রেস' দিয়েছিলেন মাত্র ৮ রান, সেখানে মেডেন ছিল ১টি। ম্যাচটিতে অবশ্য প্রথম স্পেলে করেছিলেন টানা ৮ ওভার। স্পেলটা এমন ৮-১-১৫-১! আর পুরো ম্যাচে তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ১০-১-১৮-১। এ কারণে লক্ষ্যটা অল্প রানের হলেও ৪৮.১ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। মুত্তিয়া মুরালিধরন ১৬ বলে ৩৩ না করলে হয়তো জিতেই যেত বাংলাদেশ।
এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারে ২১ রানে ৩, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০ ওভারে ২২ রানে ২ আর শেষ ম্যাচে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে নিজের স্পেল ৫-১-১১-২, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫-১-৪-০ আর শেষ ওয়ানডেতে ছিল ৫-০-১৫-৩। ২০১০ এর জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফরে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ড ৩৪৭ রানের পাহাড় গড়লেও মাশরাফি ছিলেন অনন্য। ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। আর প্রথম ১০ ওভারে তার স্পেল ৫-১-১৪-১! দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ভাঙ্গেন জোনাথন ট্রট ও লুকে রাইটের ২৫০ রানের জুটি। আউট করেন দু'জনকেই। অথচ বিশ্বকাপে থাকবেন না এমন একজন পারফর্মার। একবার ভাবুন,বাংলাদেশের বিপক্ষে বদলা নেয়ার হুমকি দেয়া বীরেন্দর শেবাগ হয়ত উদ্বোধনী ম্যাচে সাপ পেটা পেটাচ্ছে শফিউল-রুবেলদের। আর ভারতকে আগের দু'বার হারানোর নায়ক মাশরাফি তখন হাত কামড়াচ্ছেন! এখন পুরো ফিট হলেও নড়াইল এঙ্প্রেসের চেইন যে টেনে ধরা হয়েছে আগেই।
কালের কণ্ঠ