"চল দোখাই, বাড়ি চলে যাই। আজ আর তেমন কিছু মিলবে বলে মনে হয় না। আরেকদিন তোকে মাংসা খাওয়াবো। একেবারে কাঁচা মাংস। রক্তের ছোপ লেগে থাকা মাংস।" কথাগুলো বলতে বলতে মা কুকুরটি আদরের ছোট্ট ছানাকে বাড়ি ফেরার তাড়া দিচ্ছিলো।
আজ কোরবানির ঈদ। এই দিনে নাকি মানুষ তার প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে। বাচ্চা কুকুরটি চেয়ে থাকে। চেয়ে চেয়ে দ্যাখে সকাল থেকে দুপুর অবধি মাংস কাটাকাটির কাজ। অপেক্ষায় থাকে। পেটে ক্ষুধা আর নয়নের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বেলে রাখে দুপুর অবধি। বিকাল গড়িয়ে সূর্য বিদায়ের বেলায়ও যখন সামান্য নাড়িভূরিটুকুও ভাগ্যে জুটলো না তখনই আশার প্রদীপটা দপ করে নিভে যায়। যেমনি করে মোমবাতি নিভে যায় দমকা হাওয়ায়।
"মা, মানুষ কোরবানি করলো কই? সব তো ওরা নিজেরাই ঘরে ঢুকালো। এ বছর আর মাংস খাওয়া হলো না মা!" দোখাইয়ের কথায় মা কুকুরটির চোখে বরষা নামে। ভিজে উঠে অন্তরাত্মা। ছেলেকে একটুকরা কাঁচা মাংস এনে দিতে না পারার কষ্টে আহত হয় বার বার।
দোখাইয়েরা ছিলো পাঁচ ভাইবোন। অনাহারে জন্মের পরপরই চলে গেছে ওর ভাই-বোনেরা। কোন মতে বাঁচিয়ে রেখেছে ওকে ওর মা। বাচ্চারা চলে যাবার পর থেকে মা কুকুরটির চোখ ভিজে থাকে জলে। দোখাই জিজ্ঞেস করলে বলে, ''বয়স হয়েছে তো, তাই এমন হয়। ঠিক হয়ে যাবে।"
এখন অনেক রাত। দূর থেকে ব্যাঙেদের ডাকাডাকি শুনে ছানা কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে উঠে। ও ভাবে কোন শত্রু হয়তো আসছে। মা কুকুরটি চুপ থাকে। কান খাড়া করে পাহারা দেয় মালিকের বাড়িটিকে। এ বাড়িতে আজ গরু জবাই হয়েছে। নাকে ভেসে আসছে রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ। অপেক্ষায় থাকে কখন শক্ত হাড়গুলো পাবে। মুখে তুলে দিবে আদরের দোখাইকে।
ছবি সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩০