somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারুন ভাই

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হারুন ভাইকে আমি চিনি আজ প্রায় ১৪ বছর হলো। কালো, বড় বড় মায়াভরা চোখ আর মুখে লাজুক হাসি, হারুন ভাইয়ের চিরায়িত রুপ! চৌদ্দ বছর ধরে তিনি আমাদের পারিবারিক টেইলর। পারিবারিক বলছি একারণে যে, আমাদের পরিবারের সকলের জামা কাপড় তাঁর কাছেই বানাতাম। বানাতাম বলছি কেন? কেন এখন আর বানাই না? আসলে জামা বানানোর ১৪ বছরের পথটি আজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিভাবে? বলছি ....................

রাঁধুনী আসেনি আজকে, মধ্যাহ্ন বিরতিতে তাই বাসা্য় অনেক কাজ, রান্না, গোসল, খাওয়া......... দেরী করলে আবার অফিসে ঝারি! ধুপধাপ কাজের ফাঁকে দেখলাম ছোটবোনের তিনটা মিসকল, ভাবলাম নিশ্চয় কোনো ভালো খবর আছে, তাই আমাকে জানানোর জন্য এত ব্যস্ত .................

কোনোরকমে বাসা থেকে বের হয়েই ছোটবোনকে ফোন দিলাম। ভাবলাম হ্য়ত ওর অফিসের কোনো এক্সাইটিং কিছু শুনবো, কিন্তু শুনতে হলো, "একটা খারাপ খবর আছে !" দ্রুত চিন্তা করছি কি ধরনের খারাপ খবর হতে পারে? অফিসে গন্ডগোল? মামুনির শরীর কি হঠাৎ বেশী খারাপ হয়ে গেলো? নাকি নতুন কোনো বিপদ এসে ভর করেছে আমাদের উপর? আমার সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আমার বোন কাঁদতে কাঁদতে বললো, "হারুন ভাই আজকে সকাল দশটায় মারা গেছেন।" আমি দাড়িয়ে পড়লাম। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

হারুন ভাই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আর কোনোদিন তাঁর হাসিমাখা মুখটা দেখবো না, আপা ডাকটা শুনবো না ভাবতেই আমার দুচোখ ছাপিয়ে শুধু কান্না আসছে......... অনেক মানুষ দেখেছি জীবনে, উনার মত মানুষ দেখি নাই। এক রাগহীন অমায়িক মানুষ ছিলেন তিনি। কত সময় কত রাগ করতাম, কোনদিন উনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি, মুখের উপর পাল্টা উত্তর দেননি। সব অভিযোগ মাথা নত করে হাসিমুখে শুনতেন। আমার ছোট বোনের বর সব সময় বলত, "হারুন ভাই সব সময় আপনাদের জামা বানাতে ভুল করে, তারপরও আপনারা উনার কাছেই জামা বানাবেন! আর হারুন ভাই এত বছর ধরে জামা বানায়, তারপরও ভুল করে! আপনারাও আজব, আর হারুন ভাই ও আজব!" আসলেই হারুন ভাইয়ের কাছে জামা বানাতে দিলে কোথাও না কোথাও তিনি একটু ভুল করতেনই, আমরা অল্টার করাতাম, রাগ করতাম, কিন্তু ওনার কাছেই ড্রেস বানাতাম। কারণ ছিলো ওনার আন্তরিকতা! দোকানে গেলেই ব্যস্ত হয়ে টুলটা বের করে দিতেন বসার জন্য, কয়েকদিন না গেলেই ফোন করতেন, আপা রাগ করেছেন, জামা বানাবেন না? আর ভুল হবে না আপা। ঈদ কিংবা যেকোনো অনুস্ঠানের আগের দিনও আমরা নিশ্চিন্ত মনে কাপড় নিয়ে উপস্থিত হতাম, জানতাম হারুন ভাই একটা ব্যবস্থা করে ফেলবেন।এমনও হয়েছে, ঈদের আগেরদিন ড্রেস বাসায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। মানুষের প্রশংসা কুড়ানো আমাদের সুন্দর সুন্দর জামাগুলোতো তাঁরই মমতার ফসল। আমি দেশের বাইরে থাকার সময়ও তাঁর কাছ থেকেই ড্রেস বানিয়েছি। আমাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মী্য়স্বজন সবাই হারুন ভাইকে চিনত, উনার কাছে ড্রেস বানাতে চাইত। শুধু আমাদের সাথেই না, অন্যদের সাথেও তিনি এমনি আন্তরিক ব্যবহার করতেন। ওনার মত মানুষ আজকালকার দিনে পাওয়া ভার!

হারুন ভাইয়ের মৃত্যুতে একটা বড় ধাক্কা খেলাম আজকে। উনিতো আমাদের কোনো আত্মী্য় না , কিন্তু মনে হচ্ছে যেন আমার খুব ঘনিস্ঠ আত্মী্য়ই মারা গেছেন। আমার বোন জরুরী একটা মিটিং ক্যানসেল করেছে, বলেছে, "আমার আত্মীয় মারা গিয়েছে!" বুঝলাম, মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য অনেক লেখাপড়া করতে হয় না, বড় অফিসার হতে হয়না । সাধারণ হয়েও অসাধারণ হওয়া যায়! এই যে, আজকে আমি কাঁদছি উনার আন্তরিকতা আর বিনম্রতার জন্য! আমি কালকে মারা গেলে আমার জন্য কেউ কাঁদবে না, আমার অনেক দোষ, সবচেয়ে বড় দোষ হলো আমার অনিয়ন্ত্রিত রাগ! আজকে খুব আপনার মত হতে ইচ্ছে করছে হারুন ভাই, রাগহীন। অনেক সময় অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আপনার সাথে, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন কেনো হারুন ভাই? ক্ষনস্থায়ী এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই স্থায়ী না, আর যা কিছু ভালো, তাও যেনো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়.....ভালো মানুষগুলোও হারিয়ে যায় সময়ের আগে......কত মানুষ কতবছর বেঁচে থাকে, আপনার এত তাড়া কিসের? এখন আমাদের কে জামা বানিয়ে দিবে? কে আপনার মত আপা বলে দৌড়ে আসবে, বলেন তো? আমি আপনার জন্য আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করেছি, আল্লাহ যেনো আপনাকে ক্ষমা করেন এবং বেহেশত নসীব করেন, আর আমাকে যেনো আপনার একটা গুন দেন, রাগ না করে যেন আপনার মত হাসিমুখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি।

আর একটা কথা, আমার এই ভাইটা আজকে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছেন, কবরে তাঁর প্রথম রাত, আপনারাও দোয়া করবেন, যেন তাঁর কবরের আজাব মাফ হয়। তাঁর পরিবার যেনো এই ক্ষতি কাটিয়ে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৫
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাল ভারত

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:৫২


পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....


'ওরফে গফুর' এর লেখা আমি বহুবছর থেকেই পড়ি। ওনার লেখা পড়ে ওনার মতবাদ, আদর্শে আমি বিভ্রান্ত হয়েছি বারবার। কারণ, কোন এক পত্রিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×