somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুই

০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন করে আমাকে এভাবে ভুলে গেলি রে তুই?

প্রায়ই চুপি চুপি তোর এফ বি তে গিয়ে তোর ছবি দেখি! কত ঢংয়ের পোষাক যে তুই পড়িস আজকাল, আর কত যে পোস দেয়া শিখেছিস! কি দারুন হ্যান্ডু হয়েছিস রে তুই এখন! তোর নতুন কোনো ছবি, নতুন কোনো ড্রেসআপ দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় দশ বছর আগের সেই দিনটির কথা। মনে আছে তোর? একদিন যে মুখ কাচুমাচু করে এসে আমাকে বলেছিলি, " তুমি কি একটু যাবা আমার সাথে? একটা প্যান্ট কিনবো।" তোর সাথে ঘুরতে ঘুরতে আমি চিনেছিলাম গ্যাপ, ইস্ট্যাসি......কোনটা গ্যাবারডিন আর কোনটা জিন্স ! আমাকে ছাড়া কোন জামা কাপড় কিনতে পারতি না তুই! মনে আছে, সেই অফ হোয়াইট ফতুয়া টার কথা? নিজের হাতে ব্লক করেছিলাম! অর্ধেকটা করার পর হঠাৎ করে রং শেষ হয়ে গেলো। বাইরে তখন মুষলধারে বৃস্টি হচ্ছে! কোন রিক্সাও নেই! তাও দুজন মিলে বেড়িয়ে পরলাম। বৃস্টিতে নীচের রাস্তায় পানি জমে গেছে। আমরা সিঁড়ি কোঠা থেকে বের হতে পারছি না। দারোয়ান ভাইকে দিয়ে রিক্সা আনালাম , আমাদের গাওসিয়া নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে ,এই শর্তে! কি প্রচন্ড রকমের বৃস্টি ছিলো , রাস্তায় মানুষও কমে গিয়েছিলো সেই বৃস্টিতে! অফ হোয়াইটের উপর মেরুন ব্লক, ব্লকের উপর হ্যান্ড পেইন্ট , তার উপর সেলাই করে চুমকি আর স্টোন লাগিয়েছিলাম! কি দারুন হয়েছিলো তোর ফতুয়াটা, আমার সব চেয়ে বেস্ট ব্লক ছিলো ঐটা। তোর বন্ধুরাও সবাই অনেক পছন্দ করেছিলো , মনে আছে?

কত ভালবাসতি আমাদের তুই! আমরা যখন উইকএন্ডে মেজখালার বাসায় বেড়াতে যেতাম , তুইও চলে আসতি। বাসায় বলে আসতি যে রাতে বাসায় ফিরে যাবি, কিন্তু ঠিকই রাতে থাকার জামা কাপড় নিয়ে আসতি। তাও আবার অভিনব উপায়ে ! হ্যাংলা পাতলা তুই দুই তিন সেট জামা কাপড় নিজর গায়েই চাপিয়ে নিয়ে আসতি, যাতে বাসায় কেউ বুঝতে না পারে যে তুই থাকার প্ল্যান নিয়ে আসছিস! হাহাহাহাহা!

তোর মনে আছে, একবার আমরা পহেলা বৈশাখে আইসক্রীম খেতে খেতে রিক্সা করে আসছি, তোর এক কোন এক বন্ধু আমাকে তোর গার্ল ফ্রেন্ড ভেবেছিলো! হাহা! অথচ কত ছোট তুই আমার! আমরা খুব মজা করেছিলাম এটা নিয়ে!

মনে আছে , ছোট বেলায় অন্য কাজিনরা যখন তোর পিছনে লাগত, আমরা দুইবোন তখন তোকে প্রটেক্ট করতাম! বড় ভাইয়ারা যে তোকে ক্ষেপানোর সময় বলত, ডাক এখন তোর বোনদের ডাক।

আমাদের বাসায় যে আমরা ঘরের ভিতরে দুই বিছানায় বসে বসে ব্যাটমিনটন খেলতাম! হাহা! আমরা গোল হয়ে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে তাস খেলতাম, বাবা আসলেই তাস গুলি লেপের নীচে লুকিয়ে ফেলতাম! একদিন মসজিদে মিলাদ হোলো, তোকে কত বল্লাম, যা আজকে তেহেরি দিবে মিলাদে, তুই গেলি না ফাজিল! আমার এখনও চোখে ভাসে, তোদের দুই ভাইবোনকে আমি নিয়েএসেছিলাম একবার, খালামনি তখন বলছিলো, ও এত আদর করতে পারে, তোরা বড় হলে মনে রাখবি এসব? তোদেরকে বাসায় নিয়ে আসলাম। বাসায় বুয়া ছিলো না, আমি রান্নাঘরে পটল ভাজা বানাচ্ছি, আর তোরা দুইটা মুগ্ধ হয়ে দেখছিস ! আপুর হাতের রান্না না জানি কত মজা! কিন্তু ঐদিনই সম্ভবত আমি প্রথম পটলভাজা বানিয়েছিলাম । ভালো হয়নি একদমই , লবন হয়নি, পুড়ে গিয়েছিলো। নিজের চেয়ে তোদের দুইটার জন্যেই বেশী খারাপ লেগেছিলো। কোথায় গেল রে সেই দিন গুলি?

আমরা শপিং এ গেলে সব সময় তিনজন এক রিক্সায় উঠতাম, তুই রিক্সায় একা উঠতে চাইতি না, সেজন্য তোকে সব সময় রিক্সার উপরে বসাতাম! হাহা! কত চিন্তায় ছিলি তোরা , আমার বিয়ে হয়ে গেলে আর এভাবে শপিংএ যাওয়া হবে না! আমার বিয়ের দিন সকালে আমাকে ফুল এনে দিতে হবে। ঘুমিয়ে পড়লে যদি সকালে উঠতে না পারিস , সেজন্য তোরা দুই ভাই আমার, সারা রাত ঘুমাস নাই। আমার বিয়ের দিন বিদায়ের সময় আমি কাঁদছি, হঠাৎ আমার কান্না ছাপিয়ে তোরা দুই জন কেঁদে উঠলি। তোদের কান্না দেখে সেদিন আমি কান্না থামিয়ে দিয়েছিলাম।

মেডিক্যালে চান্স পেলি না , কত ভেঙ্গে পড়েছিলি! আমি কি তখন তোর পাশে দাড়াইনি? মানলাম , তুই নিজের যোগ্যতায় আহসানউল্লাহতে চান্স পেয়েছিস। কিন্তু আমি কি কিছুই করিনি?

আংকেল কত বার তোদের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, আমি কি অস্বীকার করেছি কখনও? আমি সব সময় তোকে আমার আপন ভাইয়ের মতই ভালবেসেছিলাম রে! ফ্যামিলিতে সবাই ভাবতো, তুই কখনও আমার কথা অমান্য করবি না! সেই আমাকেই ভুলে গেলি তুই! আমি ভাবতাম, তোর আপন বোনদের চেয়েও বেশী ভালবাসতি আমাকে! আমি কত ভুল ভাবতাম!

কিভাবে কি হয়ে গেলো! জানি এই চিঠি কোনদিন তোর চোখে পড়বে না। না পড়ুক। দেশ ছেড়ে দুইজন দুই মহাদেশে আজকে! ইউরোপের রাস্তাঘাটে তোর ছবি দেখি, আর ভাবি, কিভাবে ম্যানেজ করিস তুই? একদিন যে আমাকে ছাড়া একটা প্যান্ট কিনতে পারত না, এখন কত রঙঢঙের পোশাক পড়ে! তোর চোখের দিকে তাকিয়ে ছোট্টবেলার সেই সরলতা খুঁজে ফিরি আজও! ভালো থাকিস রে তুই, এই আপুটাকে ছাড়াই ভাল থাকিস।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
৪৪টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×