কেমন করে আমাকে এভাবে ভুলে গেলি রে তুই?
প্রায়ই চুপি চুপি তোর এফ বি তে গিয়ে তোর ছবি দেখি! কত ঢংয়ের পোষাক যে তুই পড়িস আজকাল, আর কত যে পোস দেয়া শিখেছিস! কি দারুন হ্যান্ডু হয়েছিস রে তুই এখন! তোর নতুন কোনো ছবি, নতুন কোনো ড্রেসআপ দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় দশ বছর আগের সেই দিনটির কথা। মনে আছে তোর? একদিন যে মুখ কাচুমাচু করে এসে আমাকে বলেছিলি, " তুমি কি একটু যাবা আমার সাথে? একটা প্যান্ট কিনবো।" তোর সাথে ঘুরতে ঘুরতে আমি চিনেছিলাম গ্যাপ, ইস্ট্যাসি......কোনটা গ্যাবারডিন আর কোনটা জিন্স ! আমাকে ছাড়া কোন জামা কাপড় কিনতে পারতি না তুই! মনে আছে, সেই অফ হোয়াইট ফতুয়া টার কথা? নিজের হাতে ব্লক করেছিলাম! অর্ধেকটা করার পর হঠাৎ করে রং শেষ হয়ে গেলো। বাইরে তখন মুষলধারে বৃস্টি হচ্ছে! কোন রিক্সাও নেই! তাও দুজন মিলে বেড়িয়ে পরলাম। বৃস্টিতে নীচের রাস্তায় পানি জমে গেছে। আমরা সিঁড়ি কোঠা থেকে বের হতে পারছি না। দারোয়ান ভাইকে দিয়ে রিক্সা আনালাম , আমাদের গাওসিয়া নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে ,এই শর্তে! কি প্রচন্ড রকমের বৃস্টি ছিলো , রাস্তায় মানুষও কমে গিয়েছিলো সেই বৃস্টিতে! অফ হোয়াইটের উপর মেরুন ব্লক, ব্লকের উপর হ্যান্ড পেইন্ট , তার উপর সেলাই করে চুমকি আর স্টোন লাগিয়েছিলাম! কি দারুন হয়েছিলো তোর ফতুয়াটা, আমার সব চেয়ে বেস্ট ব্লক ছিলো ঐটা। তোর বন্ধুরাও সবাই অনেক পছন্দ করেছিলো , মনে আছে?
কত ভালবাসতি আমাদের তুই! আমরা যখন উইকএন্ডে মেজখালার বাসায় বেড়াতে যেতাম , তুইও চলে আসতি। বাসায় বলে আসতি যে রাতে বাসায় ফিরে যাবি, কিন্তু ঠিকই রাতে থাকার জামা কাপড় নিয়ে আসতি। তাও আবার অভিনব উপায়ে ! হ্যাংলা পাতলা তুই দুই তিন সেট জামা কাপড় নিজর গায়েই চাপিয়ে নিয়ে আসতি, যাতে বাসায় কেউ বুঝতে না পারে যে তুই থাকার প্ল্যান নিয়ে আসছিস! হাহাহাহাহা!
তোর মনে আছে, একবার আমরা পহেলা বৈশাখে আইসক্রীম খেতে খেতে রিক্সা করে আসছি, তোর এক কোন এক বন্ধু আমাকে তোর গার্ল ফ্রেন্ড ভেবেছিলো! হাহা! অথচ কত ছোট তুই আমার! আমরা খুব মজা করেছিলাম এটা নিয়ে!
মনে আছে , ছোট বেলায় অন্য কাজিনরা যখন তোর পিছনে লাগত, আমরা দুইবোন তখন তোকে প্রটেক্ট করতাম! বড় ভাইয়ারা যে তোকে ক্ষেপানোর সময় বলত, ডাক এখন তোর বোনদের ডাক।
আমাদের বাসায় যে আমরা ঘরের ভিতরে দুই বিছানায় বসে বসে ব্যাটমিনটন খেলতাম! হাহা! আমরা গোল হয়ে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে তাস খেলতাম, বাবা আসলেই তাস গুলি লেপের নীচে লুকিয়ে ফেলতাম! একদিন মসজিদে মিলাদ হোলো, তোকে কত বল্লাম, যা আজকে তেহেরি দিবে মিলাদে, তুই গেলি না ফাজিল! আমার এখনও চোখে ভাসে, তোদের দুই ভাইবোনকে আমি নিয়েএসেছিলাম একবার, খালামনি তখন বলছিলো, ও এত আদর করতে পারে, তোরা বড় হলে মনে রাখবি এসব? তোদেরকে বাসায় নিয়ে আসলাম। বাসায় বুয়া ছিলো না, আমি রান্নাঘরে পটল ভাজা বানাচ্ছি, আর তোরা দুইটা মুগ্ধ হয়ে দেখছিস ! আপুর হাতের রান্না না জানি কত মজা! কিন্তু ঐদিনই সম্ভবত আমি প্রথম পটলভাজা বানিয়েছিলাম । ভালো হয়নি একদমই , লবন হয়নি, পুড়ে গিয়েছিলো। নিজের চেয়ে তোদের দুইটার জন্যেই বেশী খারাপ লেগেছিলো। কোথায় গেল রে সেই দিন গুলি?
আমরা শপিং এ গেলে সব সময় তিনজন এক রিক্সায় উঠতাম, তুই রিক্সায় একা উঠতে চাইতি না, সেজন্য তোকে সব সময় রিক্সার উপরে বসাতাম! হাহা! কত চিন্তায় ছিলি তোরা , আমার বিয়ে হয়ে গেলে আর এভাবে শপিংএ যাওয়া হবে না! আমার বিয়ের দিন সকালে আমাকে ফুল এনে দিতে হবে। ঘুমিয়ে পড়লে যদি সকালে উঠতে না পারিস , সেজন্য তোরা দুই ভাই আমার, সারা রাত ঘুমাস নাই। আমার বিয়ের দিন বিদায়ের সময় আমি কাঁদছি, হঠাৎ আমার কান্না ছাপিয়ে তোরা দুই জন কেঁদে উঠলি। তোদের কান্না দেখে সেদিন আমি কান্না থামিয়ে দিয়েছিলাম।
মেডিক্যালে চান্স পেলি না , কত ভেঙ্গে পড়েছিলি! আমি কি তখন তোর পাশে দাড়াইনি? মানলাম , তুই নিজের যোগ্যতায় আহসানউল্লাহতে চান্স পেয়েছিস। কিন্তু আমি কি কিছুই করিনি?
আংকেল কত বার তোদের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, আমি কি অস্বীকার করেছি কখনও? আমি সব সময় তোকে আমার আপন ভাইয়ের মতই ভালবেসেছিলাম রে! ফ্যামিলিতে সবাই ভাবতো, তুই কখনও আমার কথা অমান্য করবি না! সেই আমাকেই ভুলে গেলি তুই! আমি ভাবতাম, তোর আপন বোনদের চেয়েও বেশী ভালবাসতি আমাকে! আমি কত ভুল ভাবতাম!
কিভাবে কি হয়ে গেলো! জানি এই চিঠি কোনদিন তোর চোখে পড়বে না। না পড়ুক। দেশ ছেড়ে দুইজন দুই মহাদেশে আজকে! ইউরোপের রাস্তাঘাটে তোর ছবি দেখি, আর ভাবি, কিভাবে ম্যানেজ করিস তুই? একদিন যে আমাকে ছাড়া একটা প্যান্ট কিনতে পারত না, এখন কত রঙঢঙের পোশাক পড়ে! তোর চোখের দিকে তাকিয়ে ছোট্টবেলার সেই সরলতা খুঁজে ফিরি আজও! ভালো থাকিস রে তুই, এই আপুটাকে ছাড়াই ভাল থাকিস।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯