অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফিতা কেটে উদ্বোধন হয়ে গেলো আমাদের নতুন ল্যাবটির। ইরিতে আগে শুধুমাত্র একটিই কেন্দ্রীয় ল্যাব ছিলো, গামা ল্যাব।ধীরে ধীরে বিভিন্ন গ্রুপ তাদের নিজস্ব ল্যাব নির্মাণ শুরু করে। এভাবেই সূচনা হয় এন সি বি এল ল্যাব, জি এম এল ল্যাব, হেমি ল্যাব আর সি ফোর গ্রুপের ল্যাব-এর। এর মাঝে গামা ল্যাবে কিছু কাজ করলেও হেমিতে কেটেছে আমার ২০১০-২০১২ এর শ্রমিক জীবন!
রেইনবো ল্যাবটি প্রকৃতপক্ষে উমালী বিল্ডিংয়ের বেইজমেন্টে স্থাপিত বহু পুরাতন একটি ল্যাব। এই ল্যাবটি পূর্বে তিনটি অংশে বিভক্ত ছিলো, রেড ল্যাব, গ্রীন ল্যাব আর ব্লু ল্যাব , যেকারনে একে বলা হতো রেইনবো ল্যাব। তিনটি অংশে তিন ধরনের কাজ হতো, তবে সবই এনালাইটিক্যাল কাজ। মলিকুলার কোনো কাজ আগে এখানে হতো না। গত বছর শুরু হয় পুরোনো এই ল্যাবটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ! পুরো ল্যাব ভেঙ্গে নতুন করে গড়ে তোলা হো্যেছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ল্যাব হিসেবে।এটি বর্তমানে ক্রপ এন্ড এনভাইরোলমেন্টাল সাইন্স ডিভিসনের কেন্দ্রীয় ল্যাব এবং পাঁচটি আই আর এস এর অধীনস্ত পাঁচটি গ্রুপ এখন থেকে এখানে কাজ করবে। এই ল্যাবটি আমার স্কলার রুম থেকে সবচেয়ে কাছে এবং অনেক সখ ছিলো এখানে কাজ করবো। কিন্তু দেখতে দেখতে বিদায় ঘন্টি বেজে গেলো। গতকাল ছিলো ল্যাবটির উদ্বোধোনী অনুস্ঠান। আসুন আপনাদের নিয়ে ঘুরে দেখাই আমার প্রিয় এই ল্যাবটি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে CESD এর প্রাক্তন হেড Dr. Bas Bauman কে। রিবন কাটবার আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন।
Opening remark দিচ্ছেন Dr. Abdelbagi M Ismail , CESD এর Principal Scientist । যদিও রসিক Dr. Bas Bauman ল্যাবটির রেইনবো নামটির স্বপক্ষে ছিলেন, কিন্তু এই নামে ইরিতে একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুল থাকায় Sir Ismail ল্যাবটির নামকরন করলেন Physiology Laboratory ।
CESD এর তিন কিংবদন্তি। পকেটে হাত দিয়ে দাড়ানো Dr. David Johnson , CESD এর বর্তমান হেড।
ছবিতে উনাদের পিছনে কিছু টেবিল আর বেন্চ কি দেখতে পাচ্ছেন? ল্যাব টেকনিশিয়ানরা এখানে লান্চ করে, যা একেবারেই মনপূত নয় Sir Ismail এর। তিনি জোড় গলায় David Johnson কে ফান্ড দিতে বললেন, যাতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ন ল্যাব কিচেন তৈরী করা যায়, যেখানে ফ্রিজ থাকবে, মাইক্রোওয়েভ থাকবে, এসি থাকবে! এই না হলে ইরি!
চলুন, ল্যাবটা দেখি................................
এই হলো মেইন রুমের একটা over view ।
বিভিন্ন তাপমাত্রার ফ্রিজের সারি।
এখানে ৪ ডিগ্রী থেকে -৮০ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত ফ্রিজ আছে। স্যাম্পলের প্রকারভেদ এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এই ফ্রিজগুলোতে সংরক্ষন করা হয়।
-৮০ডিগ্রী সেলসিয়াস নিয়ন্ত্রিত একটি ফ্রিজ।
এই ছবিটি আমি আমার জন্য তুলেছি। হয়ত আর কিছুদিন পর যখন আমি থাকবো না, নতুন কোনো স্কলার এসে দখল করবে -২০ রেফ -এর চতুর্থ সেলফটি।হয়তো অনেক বছর পর আবার আসবো, চোখে মায়া নিয়ে তাকিয়ে থাকবো নতুন বন্টননামাটির দিকে।
Ice making machine এই মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝুরি ঝুরি বরফ তৈরী হয়, যা প্রাইমার এবং ডিএনএ হ্যান্ডেলিংএর সময় কাজে লাগে।
এটা হচ্ছে আমাদের ধোয়াধুয়ির জায়গা! বিভিন্ন glassware এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র ধুয়ে ঐ লম্বা শিকগুলোতে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখি আমরা!
DNA Grinding Area ট্রেতে দেখা যাচ্ছে মর্টার আর পেস্টেল, সহজ বাংলায় হামানদিস্তা।এই হামানদিস্তা দিয়ে লিফ স্যাম্পল গুলোকে চূর্ন করা হয় DNA extraction এর জন্য। তার আগে অবস্য পাতাগুলোকে dehydrated করা হয় লিকুইড নাইট্রোজেন দিয়ে। আর ঐ মেশিনটা হলো Centrifuge , এটাও DNA extraction এর কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফিউম হুড ক্লোরোফর্ম বা পলি এক্রিলামাইডের মত কার্সিনোজেনিক কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করার জন্য অপরিহার্য।
NanoDrop setup DNA extraction এর পর তার concentration মাপা হয় এখানে।
খুব সাবধানে ১ মাইক্রো লিটার DNA দিতে হয় ন্যানোড্রপ মেশিনের মাথায়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে Myrish কে। ওকে আমরা সুপার লেডি বলি। ও একাধারে জব করছে , জেনেটিক্স এর মত জটিল একটি বিষয় নিয়ে পড়ছে, বিয়ে করেছে, বেবি নিয়েছে! আমি অবাক হয়ে যাই ওর ক্যালিবার দেখে!
Working bench এখানে DNA extraction, Dilution এবং PCR cocktail বানানোর কাজগুলো করে থাকি।
Sir Ismail Dr. Bas Bauman কে explain করছেন PCR সম্পর্কে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে PCR (Polymerase chain reaction) মেশিন। এই মেশিনগুলোতে অল্প একটু DNAকে টেনে লম্বা করা হয় মানে DNA এর পলিমার তৈরী করা হয়।
PCR এর পরের ধাপটিই হলো Polyacrylamide Gel Electrophoresis (PAGE)। সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ! এই কাজ করতে করতে আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম একটা সময়!
Bas Bauman খুবই কৌতুহুলী মানুষ। সবকিছুই তার ভালোভাবে জানা চাই। আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি এই মানুষটাকে তাঁর অসাধারণ প্রানশক্তির জন্য! আর উনার স্ত্রী হলেন আমার ফ্যান!দেখা হলেই বলবে U r so colorful! হাহা! আর ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে , সে হলো Chilan, আমার Frienemy= Friend+Enemy ! মাঝে মাঝে মনে হবে আমার জানি দোস্ত, আবার মাঝে মাঝে আমাকে নরকযন্ত্রনা দিয়ে ছাড়ছে!
Atomic Absorption Spectrophotometer এই যন্ত্র দিয়ে পাতা এবং শিকড়ের Na+ এবং K+ এর পরিমান মাপা হয়!
UV/VIS- spectrophotometer এই যন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা হয় পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমান!
একেই বলে Proper Waste Management!
অনেকতো খটরমটর মেশিন দেখলেন, এবার কিছু মুখে দিন।
মিরিয়েন্ডা (ফিলিপিনোরা নাস্তাকে বলে মিরিয়েন্ডা!)
হুম, এরাই আমার ল্যাবমেট! আমি চলে আসবো, কিন্তু ওরা থাকবে!
ল্যাব তো দেখলেন। চলেন আমার অফিসটাও দেখি। খুব বেশী দুরে তো নয়! ল্যাব থেকে বেরিয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই উমালী বিল্ডিং।
উমালী বিল্ডিং এ প্রবেশ করে বাম দিকে একটু এগুলেই চোখে পড়বে ছোট্ট ক্যান্টিনটি। যেখান থেকে প্রতিদিন দুপুরে তিন পেসো দিয়ে ভাত কিনি, বিকালে কফি খাই বন্ধুদের সাথে!
ক্যান্টিন থেকে করিডোর ধরে আরেকটু এগুলেই আমার অফিস।
করিডোর
স্কলার রুম A আমার অফিস।
আমার Girly ডেস্ক !
Girly ডেস্কের আরেকটি অংশ।
সবশেষে আমার কিউট ফিলিপিনো, ভিয়েতনামিজ আর নেপালী সু্ভেন্যুরগুলির পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন! ধন্যবাদ।
ইরি বুলেটিন এর একটি লিংক যোগ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭