হোটেলে ফিরেই অনেককে দেখতে পেলাম গলায় GCPএর ID ঝুলিয়ে ঘুরছে।আমিও তড়িঘড়ি করে জিনিসপত্র রুমে রেখে ছুটলাম রেজিস্ট্রেশন করতে। রেজিস্ট্রেশন শেষ হতে না হতেই দৌড় দিলাম ডিনারের জন্য। দুপুরে অভুক্ত থাকায় খিদেটা ভালই ছিলো।গিয়ে দেখি কাউকেই চিনি না! খাবার নিয়ে কোথায় বসি কোথায় বসি করতে করতে একটা খালি টেবিলেই বসে পড়লাম।একে একে আমার টেবিলে এসে জড়ো হলো আফ্রিকান, আমেরিকান এবং ইন্ডিয়ান participant রা।এখানে একটা মজার কান্ড হলো। ঐদিন ডিনারে ডেজার্টে ছিলো দুধসেমাই। তো আফ্রিকানরা এই খাবারের সাথে পরিচিত ছিলো না। বিধায় খাওয়ার পরের খাবার তারা খাওয়ার আগেই নিয়ে আসলো। আমাদের টেবিলে ছিলেন আমেরিকার কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তো এক আফ্রিকান participant ঐ প্রফেসর সাহেবকে বললেন, " তুমি কি স্যুপ পছন্দ করো না? স্যুপটা ভাল, নিতে পারো! " আমি চি চি করে একটু বলার চেস্টা করলাম যে, ঐটা স্যুপ না, ডেজার্ট!


খাওয়ার এক পর্যায়ে দেখলাম, ছিপছিপে লম্বা গড়নের মডেলদের মতো দেখতে খুবই স্টাইলিস একজন আফ্রিকান মহিলা সব টেবিলে ঘুরে ঘুরে গল্প করছেন। সবাইকে দেখলাম তার সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলতে। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় সে আমার পাশে চলে এলো এবং আমার হাত ধরে খুব স্বাভাবিকভাবে বললো," হ্যালো আরমিন, কেমন আছো? আমি এন ডিওপ।" আমিতো একই সাথে অবাক, মুগ্ধ এবং বিস্মিত হলাম! এই সেই এন ডিওপ?



ডিনারের পর এন ডিওপকে বললাম, আমি গ্রিসেল্ডার সাথে দেখা করতে চাই। তো এন ডিওপ বললো, গ্রিসেল্ডা রেজস্ট্রেশনের ওখানে আছে, সে নিজেও যাবে ওর সাথে দেখা করতে।এখানেও চমক! গ্রিসেল্ডাকেও আমি ভদ্রলোক ভেবেছিলাম, গিয়ে দেখি ভদ্রমহিলা!

পরদিন খুব ভোরে উঠে রেডি হতে হলো। কারন সকাল আটটায় ওপেনিং। তার আগেই ব্রেকফাস্ট সারতে হবে। যেকোনো বড় অনুস্ঠানে শাড়ি আমার পছন্দের পোশাক! আর আমি লক্ষ করেছি যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুস্ঠানে অংশগ্রহনকারীরা তাদের দেশীয় সংস্কৃতিটাই তুলে ধরে। তো অনোভ্যস্ততায় লাল টুকটুক শাড়ি পরে যখন নাস্তা করতে গেলাম, দেখি অনেকেরই খাওয়া শেষ! সকাল সকাল আরেকটা চমক! মেম পুতুলের মতো দেখতে নিতান্তই অল্প বয়স্ক একটা মেয়ে মায়াকাড়া হাসি দিয়ে বলে উঠলো," হ্যালো আরমিন, কেমন আছ? আমি জিলিয়ান।" এ্যা বলে কি এই মেম পুতুল? এই সেই জিলিয়ান? যে কিনা মিটিং এ আসার আগে পোস্টার দাও, রিপোর্ট দাও করে করে আমার মাথা খেয়ে ফেলেছিলো! আমি অসম্ভব বিরক্ত ছিলাম এর উপর। মনে মনে জিলিয়ানের যে ছবিটা একেছিলাম,তা অনেকটা এরকম , মুখে ভদ্রতার নকল হাসি ঝুলানো স্যুটেট বুটেট মাঝবয়সী কোন ভদ্রলোক। আবারো ধরা খেলাম! আসলে এই মিটিংএ যাবার আগে এন ডিওপ, গ্রিসেল্ডা আর জিলিয়ান এই তিনজনের সাথেই সবচেয়ে বেশী যোগাযোগ হয়েছিলো। আর আমি ৩জনকেই ছেলে ভেবেছিলাম। খুব ভালো লাগলো যখন দেখলাম GCPএর লিডিং পোস্টগুলিতে মেয়েদের জয়জয়কার!
সেদিন ব্রেকফাস্টে কি খেয়েছিলাম মনে পড়ছে না। শুধু মনে আছে পেস্ট্রি নিয়েছিলাম জিলিয়ানের দেখাদেখি। চমৎকার বন্ধুত্ব হয়ে গেলো প্রথম দিনেই।ও বলছিলো ও সকালে খেতে পারেনা, ওর পেট নাকি দেরীতে জাগে! হা হা!
মিটিংএর জন্য নির্ধারিত কনভেনশন সেন্টারে ঢুকে দেখি প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে! সব টেবিল ভরা! কাউকে চিনি না! কি করি! খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম আমার বাংলাদেশী কলিগকে।উনিও ফিলিপাইন থেকেই গিয়েছিলেন।মিটিংএ কি আলোচনা হয়েছিলো, সেটা লিখতে গেলে আরেক মহাভারত হয়ে যাবে! তার চেয়ে বরং কিছু ছবি দেখা যাক!
চা বিরতি
দুপুরের খাবারের লম্বা লাইন
কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে
মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে: পর্ব ১
মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে: পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩