প্রেমবাগান, গাওয়াইর, দক্ষিণ খান। একদল আড্ডাবাজ ছেলে সন্ধ্যায় টুপি-পাঞ্জাবী পড়ে ঘর থেকে বের হয় তারাবীর নামাজ পড়তে! কেউ পড়ে কেউ পড়েনা, তবে তাদের আড্ডা জমে ষোলআনা! এমনি একদিন আড্ডার দরবারে হাত পাতল দু’জন ভিক্ষুকঃ
-ভাইজানেরা ঈদের সালামী দ্যান!
ওদের মধ্যে একজন জানতে চাইল এখন কিসের সালামি!
-ভাইজান ঈদের দিন ভিক্ষা করতে ভাল্লাগেনা।
ভাল, ঈদের দিন বাইর হইবানা!
-ঈদের দিন সবার পকেট থাকে গরম, তাই দিল খুইলা দ্যায়! কিন্তু বাজান এইটা খুব কামে লাগে যদি ঈদের আগে পাওন যায়! বাচ্চা পুলাপানতো আর এইসব বুজে না, অরা ঈদের আগেই নতুন জামা চায়, ঈদের দিন ঘরের সেমাই খাইতে চায়!
গাওয়াইরের আড্ডাবাজ ছেলেদের মধ্যে একজনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে; সে শিমুল!
পকেটে যা ছিল ঝেড়ে দিয়ে দেয় ভিক্ষুক দু’জনকে। তারা খুশিমনে ফিরে যেতে থাকলে শিমুল হঠাৎ পিছন ডাক দেয়ঃ
আপনেরা কই থাকেন?
-প্রেমবাগান
শিমুল কি যেন ভাবে, আইচ্ছা যান! বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শিমুল দ্রুত বাসায় চলে যায়, অন্যদিন সে টিভি ছেড়ে বসে থাকলেও সেই দিনটা সে টিভি ছাড়তে পারে না। তুমুল ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরে!
পরদিন যথারীতি আড্ডায় মশগুল সবাই, শিমুল শুধু আড্ডায় থেকেও নেই! বন্ধুরা বিষয়টা খেয়াল করে, কিরে দোস্ত মানুষ ছ্যাকা খায়া মন খারাপ করে আর তোর ছ্যাকা দিয়া এত মন খারাপ!
শিমুল বিরক্ত হয়ে বলে, না আমি কালকের বিষয়টা ভাবতেছিলাম, আসলেইতো ঈদের আগে যদি বাচ্চাগুলা ঈদের জামা না পায় ঈদের পরে ঐগুলা দিয়া কি অরা মুড়ি ভাইজা খাবে! বন্ধুরা বলে ঠিক ঠিক! শিমুলের মাথায় একটা সুন্দর লাল ফুল ফোটেঃ আচ্ছা আমরাতো ইচ্ছা করলে আমাদের প্রেমবাগান দক্ষিণখানের আশপাশের গরীবদের ঘরে যেসব বাচ্চা আছে ঈদের আগেই তাদের নতুন জামার ব্যাবস্থা করতে পারি; সাথে ঈদের দিনের জন্যে সেমাই! শুধু আমাদের ঈদের দিনের সালামীটা স্যাকরিফাইস করলেইতো হয়! শিমুলের মাথায় ফোটা লাল ফুলটা ধীরে-ধীরে একে-একে অন্য সবার মাথায়ও ফুটতে থাকে...!
এরপর দিন তাদের আড্ডার জায়গাটা পুরো খাঁ খাঁ করতে! মুরুব্বীরা অবাক হয়ে বলে ‘বখাটে’গুলা সব গেল কই!
ঐদিন তথাকথিত ‘বখাটে’ ছেলেগুলোকে দেখা যায় বস্তির অলি-গলি-ঘর ঘুরে ঘুরে কাগজে কি সব লিখছে! মুরুব্বীদের বলতে শোনা যায় অরা সব ক্ষ্যাপছে ক্যান!
প্রেমবাগান, গাওয়াইর, দক্ষিণখানের ক্ষ্যাপা ছেলেগুলাই আজ থেকে তিন বছর আগে দাঁড় করে ফেলে ‘হ্যাপিনেস ফর অল’ নামের সংগঠনটি!
সেবছর পঞ্চাশটি গরীব পরিবারের শিশুরা ঈদের আগেই পায় নতুন জামা! ঈদের দিন তাদের নিজেদের ঘরেই রান্না হয় লাল সেমাই!
তিন বছর পর সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে দু’শ পঞ্চাশ এ! একদিন যে শিমুলের মাথায় এ লাল ফুলটি ফুটেছিল সেই শিমুলের আজ নিজের’ই একটি ‘লক্ষী’ পরিবার হয়েছে। আমরা আশা করি শিমুল তার প্রজন্মের মাথায়ও এই ‘লাল শিমুল ফুলে’র বীজটা বপন করে দিয়ে যাবে! আমীন!
‘হ্যাপিনেস ফর অল’- http://www.facebook.com/groups/happinessforall
আরিফুর রহমান
০৮.১৬.২০১২
ক্ষিলক্ষেত, ঢাকা।