শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভা একটা চমৎকার চমক নিয়ে এসেছিল আমাদের মাঝে । আমার পরিচিত মানুষদের মাঝে এমন কাউকে দেখিনি যিনি এই মন্ত্রীসভা দেখে খুশী নন ।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি সৎ মন্ত্রীসভা মানেই দক্ষ মন্ত্রীসভা এমনটা ভাবার কোন কারন নেই , একই ভাবে গরীব মন্ত্রীসভা মানেই ভালো মন্ত্রীসভা এমনটা মানতেও আমি রাজী নই । এই সমস্যাসংকুল দেশে আমরা চমক নয় , কাজ দেখতে চাই । আর কাজের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপকের , তার আর্থিক অবস্থান কখনোই বিবেচ্য হতে পারে না ।
শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় তারাই শুধু স্থান পেয়েছেন যারা কোন অবস্থাতেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে কোনদিনই চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না বা চ্যালেঞ্জ করতে যাবেন না বলেই পরীক্ষিত । এতে কোন সমস্যা নেই , আমরা সবাই আমাদের পাশে বশংবদ মানুষ দেখতে পছন্দ করি । কিন্তু শুধুমাত্র আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে কি না সেটা আগামীতে দেখার বিষয় ।
মন্ত্রীসভার সদস্যদের উপরে আশাবাদী থাকতে হবে আমাদেরকে , কারন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এই মন্ত্রীসভা গঠিত ।
কিন্তু এই জনসমর্থন আসলে কিছু বেসিক পয়েন্টের উপর নির্ধারিত ।
মানুষ চায় রাষ্ট্র সত্যিকার রাষ্ট্র হিসেবেই আচরন করবে , আমাদের গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কর্মকর্তারা দেশপ্রেম নিয়ে দেশের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিয়ে কাজ করবেন ।
মন্ত্রীসভার অন্তত একটি নিয়োগ আমাকে বিরক্ত করেছে , সেটা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এডভোকেট সাহারা খাতুন । নির্বাচনোত্তর সারা দেশের সন্ত্রাস সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন , সেটি নিন্দা কুড়িয়েছে । উত্তরার সামান্য চক্ষুশিবির উদ্বোধন করার জন্য তিনি এবং তার চ্যালাচামুন্ডারা যখন উত্তরার সবগুলো স্কুল ছুটি দিয়ে বাচ্চাদের ধরে এনে সভা বড় করেন , তখন তার মাঝে আমি এরশাদ সরকারের মন্ত্রীদের প্রেতাত্মা দেখতে পাই । মন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন আগেও তিনি টেলিভিশনে মন্তব্য করেছেন যে জয়নাল হাজারী আসলে সন্ত্রাসী নয় , তার এলাকায় সে পীরের মতো সম্মানিত ।
এমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দিয়ে এই দেশ আগামীতে কতোদূর যেতে পারবে সেটা দেখার বিষয় ।
এই সব ভুলত্রুটি নিয়েই একটা মন্ত্রীসভা এবং তাকে বিচার করার চূড়ান্ত সময় এখনও আসেনি । এখনও এই মন্ত্রীসভা একমাস পূর্ণ করেনি , তাই যদিও মর্ণিং শোজ দ্য ডে বলে একটা প্রবাদ আছে , তবু আমরা আশাবাদী থাকতে চাই ।
তবে , সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস যে কাজ করেছেন সেটি শুধু নিন্দার যোগ্য নয় , এর বিধান প্রয়োজন ।
তিনি প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্বাচনী আচরনবিধি ভেঙ্গে উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছেন ।
তার বউ এবং মেয়ে সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পিটিয়ে দাত ভেঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন !
এই প্রেক্ষিতে আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানোর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই ।
কারন আবদুল লতিফ বিশ্বাস একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্ঠি করেছেন , রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন , তার পরিবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে ।
গনতন্ত্রের অভিযাত্রায় যে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে জনগন আওয়ামীলীগের জোটকে ভোট দিয়েছে , লতিফ বিশ্বাস সেই প্রত্যাশার স্পিরিটটি বুঝতে অক্ষম হয়েছেন ।
এমন মানুষ সরকারে থাকলে শেষ বিচারে সরকারের জন্য দায় হিসেবেই থাকবেন ।
এই ধরনের মানুষ দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবে না । এই ধরনের একজন মানুষের কারনেই একটা দল পাঁচ বছর পরে সরকার থেকে ছিটকে পড়তে পারে , অতীতে এমন ভুরি ভুরি উদাহরন আমাদের আছে ।
এই ধরনের জঞ্জাল যতো আগে ছুড়ে ফেলা যাবে , ঘর ততোই দূর্গন্ধমুক্ত থাকবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৪০