কোন সহজ জিনিষকে সহজেই কঠিন করে ফেলার ব্যাপারে আমাদের জাতিগত সুনাম দীর্ঘদিনের । আমি আসলে বুঝতে পারিনা এই জটিলতা তৈরীটা কি ইচ্ছাকৃত হয় নাকি আমাদের দক্ষতার অভাব ।
সম্প্রতি রাজউক পূর্বাচল ও উত্তরা প্রজেক্টে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে । সেই আবেদনের যাবতীয় তথ্য দেয়া আছে তাদের ওয়েবসাইটে , কিন্তু তারা প্রথমেই জানালেন যে আবেদনপত্রটি ওয়েব থেকে ডাউনলোড করলে হবে না , সেটা ব্যাংক থেকে একহাজার টাকা দিয়ে কিনে নির্ধারিত ফি সহ আবার জমা দিতে হবে ।
ফরমের দাম ১ হাজার টাকা ।
প্রথমদিন সকালে আমার পরিচিত একজন লাইনে দাড়িয়েছে সেই লোক বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকের কাউন্টারে পৌছাতে পারেনি ।
এভাবে দুইদিন শত শত লোককে কষ্ট আর ভিড় ঠেলাঠেলির একদিন পরে রাজউক জানিয়েছে যে ওয়েব থেকে ফরম ডাউনলোড করে নিলেই চলবে , শুধু জমা দেয়ার সময় একহাজার টাকা বেশি দিলেই ডাউনলোড করা ফরমটি গ্রহনযোগ্য হবে । সমাধানটি সুন্দর , কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন জাগে , এই সুন্দর সমাধানটি তাদের মাথায় কেন আগে আসেনি । সর্বস্তরে আইটি ব্যবহারের মাধ্যমে যে অনেক জটিলতা এড়ানো যায় , সেটা আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যতো আগে বুঝতে পারবে ততোই সবার জন্য মঙ্গল ।
একটি বড় জটিলতা তৈরী হয়েছে প্রবাসীদের প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে । প্রবাসীদের জন্য তারা শুধু মাত্র ডলারে পেমেন্ট নেয়ার ব্যবস্থা রেখেছে , অথচ আমাদের প্রবাসীদের বড় অংশ কাজ করেন ইংল্যান্ডে । ইউকে প্রবাসী বেশ কয়েকজন আমাকে ফোন করে জানতে চাইলেন যে তারা পাউন্ড স্টার্লিংয়ে জামানতের টাকা জমা দিতে পারবেন কি না । বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড গ্রহন করায় প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ হয় এই খাতে । বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে হলে রাজউকেরও উচিত ডলারের পাশাপাশি পাউন্ডের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া , নইলে বড় সংখ্যক প্রবাসীই তাদের টাকা জমা দিতে পারবেন না ।
এখানে আরেকটি জটিলতা তৈরী হয়েছে যে প্রবাসীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোন ব্যাখ্যা রাজউক থেকে দেয়া হয়নি । বাংলাদেশের প্রবাসীদের প্রায় সবাইই বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছেন , অথচ তাদের পাসপোর্টে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সিল দেয়া আছে যে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের কোন ভিসা লাগবে না । কারন বাস্তবতা হচ্ছে তারা বাংলাদেশী মানুষ , কিন্তু পরবর্তীতে বিদেশে থাকার প্রয়োজনেই বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছেন ।
রাজউক যদি তাদের আবেদন গ্রহন না করে , তাহলে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সরাসরি বঞ্চিত হবেন ।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে সরকারী প্রতিষ্ঠান হয়েও রাজউক "জাতীয় পরিচয়পত্রে"র তথ্যকে সঠিক মনে করেনা পুরোটা । এতো কোটী কোটী টাকা খরচ করে যে পরিচয়পত্র তৈরী করা হলো , জাতীয়তার প্রমানপত্র হিসেবে সেটার সত্যায়িত ফটোকপি তারা গ্রহন করতে রাজী হয়েছে , কিন্তু সেই কার্ডে লেখা জন্মের তারিখ তারা বিশ্বাস করে না । জন্মের তারিখের জন্য আপনাকে এসএসসি সার্টিফিকেট অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে ।
জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মের তারিখ থাকা সত্বেও অন্য দলিল দিয়ে জন্ম তারিখ প্রতিষ্ঠিত করার শর্ত প্রদান করা জাতীয় পরিচয়পত্রকে অবজ্ঞা করার সামিল । রাজউকের মতো জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠান সেটি কিভাবে করতে পারে আমার বুদ্ধিতে আসে না ।
রাজউক ফরম ছেড়েছে ৩০ নভেম্বর , আর নানা শর্ত পূরন করে , জামানতের টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে , ইনকাম ট্যাক্সের হালনাগাদ কাগজ জোগাড় করে ( চলতি বছরের ইনকাম ট্যাক্সের সনদ ইস্যু করা এখনও শুরু হয়নি , এটা সংশ্লিষ্ঠ সবাই জানলেও রাজউক জানে না ) সেই ফরম জমা দিতে হবে ১৮ ডিসেম্বরের মাঝে । ৫ দিন পরেই ঈদের ছুটি শুরু হবে , ছুটি শেষ হতে না হতেই বিজয় দিবসের ছুটি , মাঝখানে সাপ্তাহিক বন্ধতো থাকছেই । ৫ তারিখ শুক্রবার থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ শনিবার পর্যন্ত কার্যত বাংলাদেশ বন্ধই থাকবে , তারপর আছে বিজয় দিবসের ছুটি । কাজ করার জন্য হাতে মাত্র কয়েকটা দিন ।
সুতরাং যারা প্লট কিনতে আগ্রহী তারা এখন আছেন দৌড়ের উপর ।
সেই দৌড়টা হুদা দৌড় , আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হুদাই পাবলিকরে দৌড়ের উপর রাখতে ভালোবাসে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৪৬