এবারের ২০১১ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হবার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ এটা সবাই জানে এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ খেলা আয়োজনের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতিও সম্পুর্ন করেছে। যৌথ আয়োজক হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব বাংলাদেশের কাঁধে পড়েছে আর সমাপনী হবে ভারতে। বর্তমানে খেলাধুলার বিশ্ব আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা বিভিন্ন দেশকে তাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি কালচার এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরার আপ্রান চেষ্ট্রা চালাতে দেখেছি। যার সর্বো উৎকৃষ্ট প্রমান আমরা সাম্প্রতিক বেয়জিং অলম্পিক এবং ভারতের কমনওয়েলথ এর উদ্ভোধনীতে দেখতে পেয়েছিলাম।
যাহোক আসল কথায় আসি। গত কিছুদিন আগে ভারতীয় স্টার শাহরুখের বাংলা আগমন এবং বাংলাদেশকে দেয়া তার থাপ্পড় ভুলতে না ভুলতে ভুলতে এবার আবার বিশ্বকাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে আসছে বিশাল ভারতীয় মিডিয়া বহর। প্রসংগত সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এবারের বিশ্বকাপ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিসিবি যৌথভাবে মাহফুজুর রহমানের অভিরাম ইভার মুখ ক্ষ্যাত স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটিএন ইভেন্টস আর ভারতীয় কোম্পানি উইজক্রাফটকে যৌথভাবে দায়িত্ব দিয়েছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন হলেও এই দুই কোম্পানী মিলে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রচারের জন্য আরো দুদিন মিলিয়ে মোট তিন দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এর মধ্য ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও ১৬ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কনসার্ট আয়োজনের শিডিউল ঠিক করে ফেলেছে এই দুই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালনকারী ভারতীয় কোম্পানি উইজক্রাফট ও দেশীয় এটিএন ইভেন্টস ভারতীয় ফিল্মের তারকা আর সেরা গায়ক-গায়িকাদের নিয়েই অনুষ্ঠানসুচী প্রায় চুড়ান্ত করে এনেছে। এরই অংশ হিসেবে এটিএন ইভেন্টসের চেয়ারম্যান ড.!! মাহফুজুর রহমান ভারত সফর করে গতকাল দেশে এসেছেন। জানাযায় সফরকালে তিনি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় ফিল্মের মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, অভিষেক বচ্চন আর ঐশ্বরিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং সে সুত্রে বচ্চন পরিবার আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান করতে ঢাকা পৌঁছবে। এছাড়া আমন্ত্রিত বলিউড সুপারস্টার সালমান খান, বিপাশা বসু, সাইফ আলী খান, অক্ষয় কুমার, গোবিন্দ, প্রিয়াংকা চোপড়া, সনুনিগাম ও রাহাত ফতেহ আলী খানসহ ৫৮ জনের বিশাল বহর ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পৌঁছবে।
শাহরুখের অনুষ্ঠানের মত এখানেও পরিকল্পনা মাফিক আমাদের শিল্পী এবং আমরা দর্শকের ভুমিকায় থাকতে হবে আপাতত এখন পযন্ত ঘটনাপ্রবাহে তাই মনে হচ্ছে। তবে স্থানীয় আয়োজকদের অনেক রিকুয়েস্টের পর তারা বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লা এবং আরেক গর্ব সাবিনা ইয়াসমিনকে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে!!!
অথচ এই আমরা বাংলাদেশীরা একমাত্র ভাষাসহ নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার জন্য রক্ত জরিয়েছি বারবার। করিনি কখনো কোন শক্তির কাছে আপোস। অথচ আমরাই আজ করুনার পাত্র!! আমরা কি সংস্কৃতিকভাবে এ্তই দুর্বল? মোটেও নয়..আমাদের আছে বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, গম্ভীরা, কবিগান সহ কত রকমের বিচিত্র সব গানের সমৃদ্ধ সমাহার। নৃত্যেও কি আমরা পিছিয়ে আছি...না আমাদের সেখানে আছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদির চমৎকার সব উপাদান। আর সেজন্য বাংলা যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে বিখ্যাত সব সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বকে। সেই লালন-রবীন্দ্র-নজরুল থেকে শুরু করে সুকান্ত-বঙ্কিম-আব্দুল আলিম-আব্বাস উদ্দিন-ফররুখ আহমেদ-রুনা লায়লা-সাবিনা ইয়াসমিন-আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সহ আরো কত কত নাম।
আমাদের শিল্পীদের জাগরনের গানে আমরাইতো জেগে উঠেছিলাম ৭১ এ। তবে কেন আজ আমরা আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ভারতের কাছে সব বিলিয়ে দিচ্ছি। আমাদের স্বকীয়তা থাকবে কোথায় যদি না আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে না পারি? আমাদের সংস্কৃতি বিশ্ব পরিমন্ডলে তুলে ধরার এমন বিশাল সুযোগ আমরা এভাবে হাতছাড়া করলে জাতি হিসাবে আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আর সেই মহান ভাষাসৈনিকদের কি জবাব দিব। আর নতুন প্রন্মমই বা কিভাবে তাদের সংস্কৃতিকে ভাববাসতে শিখবে?
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। সংস্কৃতিক আগ্রাসনই একটি জাতির অধ:পতনের অন্যতম নিয়ামক। সুতারাং বিজয়ের ৪০ তম বছরের এই শুভক্ষনে বিজাতীয় সংস্কৃতিকর এই আগ্রাসন মোকাবেলায় তরুনপ্রজন্মকে দীপ্ত শপথ নিতে হবে।