somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একঝাঁক অন্যরকম মুক্তিসেনা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪ জুলাই ১৯৭১ বল পায়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে পিন্টু বুকের মাঝে অন্যরকম এক ভয় কাজ করছে একের পর এক প্রতিপক্ষের খেলোয়ার সামনে চলে আসছে ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।পাশ থেকে সালাউদ্দিন দম বন্ধ করে দৌড়াচ্ছে সারা গায়ের ঘাম ঝরে পরছে মাটিতে।হঠাৎ পিন্টুর চিৎকার “সালাউদ্দিন বল নে” সালাউদ্দিন একদমে সামনে এগিয়ে বল টেক করেই সুট করলো প্রতিপক্ষের গোলকিপার অবাক বনে কিছু বুঝে উঠার আগেই গোল।সালাউদ্দিন মাটিতে বসে পড়লো চোখ দিয়ে টপ টপ করে জড়ে পরছে অশ্রুকনণা।



শেখ আশরাফ আকাশ পানে চেয়ে আছে দূরে পত পত করে উড়ছে একটি পতাকা গাঢ় সবুজের সাথে কড়া লাল বৃত্তের মাঝে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের হলুদ রঙের মানচিত্র আঁকা পরাধীন একটি দেশের পতাকা।পরাধীনতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতার জন্য,মুক্তির জন্য,নিজের অধিকারের জন্য যে দেশটি লড়ে যাচ্ছে শত অবিচারের বিরুদ্ধে কিন্তু এখনো স্বীকৃতি মিলে কারো কাছ থেকে সেই দেশটির পতাকা উড়ছে বিশ্বের শক্তিধর দেশ ভারতের মাটিতে।হাকিম ভাবছে এইতো কিছুক্ষণ আগেও এই পতাকাটি উড়াতে রাজি হয়নি কেউ কিন্তু তাদের এককথা পতাকা উড়ানো আর জাতীয় সংগীত গাওয়া ছাড়া মাঠে নামবো না আর এখন সেই পতাকাটা দেখতেই ভরে উঠছে মন।ভিনদেশের মাটিতে ভিনদেশীদের মুখে সারা স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে উঠেছে জয় বাংলা জয় বাংলা ধ্বনিতে।দেখতে দেখতে খেলার শেষ বাঁশি বাজালো রেফারী ফলাফল জয় বাংলা একাদশ(১ম ম্যাচে নাম ছিলো) ২-২ নদীয়া কৃষ্ণনগর একাদশ ম্যাচ ড্র।



পশ্চিম বঙের নদীয়া জেলায় কৃষ্ঞনগর স্টেডিয়ামে সেদিন সাক্ষী হয়ে রইলো২৫ হাজার মানুষ দেখলো নিজের দেশের মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে জনমত সংগ্রহ করার জন্য কি করে একঝাঁক তরুণ জার্সি আর শর্টস আর বুট পরে নেমে গেলো ভিনদেশের মাটিতে বুকে শুধু এক্টুখানি আশা নিয়ে,দেশের জন্য অপরিসীম ভালোবাসা নিয়ে।আর সদর্পে উচিয়ে মাঠ দাপাচ্ছেন,এরাও মুক্তিযোদ্ধা যাদের হাতে নেই কোন বন্দুক আছে শুধু।যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধ করার যেই ডাক এসেছিলো সেই ডাক যে বাঙালির প্রাণের ডাক ছিলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সেটা প্রাম্ন করে দিয়েছিলো আরো একবার। সত্যিই তো যার যা কিছু ছিলো তা নিয়েই যুদ্ধ করেছিলো আমাদের সবপ্নপুরুষেরা।






আইডিয়াটা শামসুল হকের মাথা থেকে বেরিয়েছে। জুনের সেই দূরন্ত দিনগুলোতে কলকাতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি এবং সিদ্ধান্ত নেন একটি ফুটবল দল গঠনের যারা সারা ভারতজুড়ে খেলে সমর্থন আদায় করবে আমাদের স্বাধীন বাংলার স্বীকৃতির জন্য। তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন সমিতির প্রথম সেক্রেটারি লুতফর রহমান, কোচ আলী ইমাম ও ইস্ট এন্ড ক্লাবের সাবেক ফুটবলার সাঈদুর রহমান প্যাটেল।তাদের তৎপরতায় ভারতের আকাশবানীতে একটি বিবৃতি প্রচার হলো যাতে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত ফুটবলারকে যোগ দিতে বলা হলো একটি বিশেষ ঠিকানায়। ঘোষণা দিতে বাকি, কদিনে মধ্যেই কোচ ননী বসাকের (চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শবনমের বাবা) ৬০ জনের মতো খেলোয়াড় ট্রায়ালে যোগ দিলেন।সেখান থেকে দলে নেয়া হলো ৩০ থেকে ৩৫ জনকে।



পার্ক সার্কাস এভিনু্যর কোকাকোলা বিল্ডিংয়ের একটি রুমে থাকতেন ফুটবলাররা। আর প্র্যাকটিস করতেন পাশের মাঠেই।খাওয়া দাওয়ার ঠিক ছিলো তাই খেলোয়ারেরা সকালের নাস্তা পেতো না ঠিক মত তাই তারা দুপুরের খাওয়াটা দিয়েই চালিয়ে আর মজা করে দুবেলার খাবার কে এক করে ডাকতো বিএল ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ।রুমে শোয়ার জন্য কোন খাট ছিলো না পাশের পাড়ার মানুষের থেকে তারা খবরের কাগজ এনে তা বিছেয়েই কাটাতো রাতের পর রাত।



১ম ম্যাচের পর থেকে বিশ্ব মিডিয়ার সমালোচনার মুখে কোন দলই নিজ নামে খেলে নাই আমাদের সাথে এমনকি মোহনবাগান খেলেছে গোষ্টপাল একাদশ নামে। মজা হয়েছিল মুম্বাইয়ে- মহারাষ্ট্র একাদশের হয়ে খেলেছিলেন স্বয়ং নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি (ভারতীয় অভিনেতা সাইফ আলী খানের বাবা) এবং আমাদের বিপক্ষে একটি গোলও করেন।দিলীপ কুমার এসেছিলেন ম্যাচটি দেখতে এবং এক লক্ষ রুপি অনুদানও দেন দলকে।মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে ৯টি জয় ৪টি হার ৩টি ড্র করে তৎকালীন সময়ে ৫ লক্ষ টাকার অর্থ সাহায্য তুলে দিয়েছিলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল একাদশ।দিল্লীতে একটি ম্যাচ খেলতে যাবার ঠিক আগে এল অসাধারণ খবরটি- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক সম্মান পেলে ও আজো তাঁরা দলগত ভাবে স্বাধীনতা পুরষ্কার পায়নি সেই নিয়েই আফসোস আছে এখনো।



অনেক দেশই অনেক মূল্য দিয়ে তাদের স্বাধীনতা আদায় করেছে কিন্তু কোন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ক্রিয়া অঙ্গনের ভূমিকা ছিলো না সেক্ষেত্রে বিরল আমাদের এই বাংলাদেশ।





স্বাধীনতা যুদ্ধে যে অসামান্য কৃতিত্ব রেখেছিলো তারা তা কোন উপমাতেই বুঝানো যাবে না,স্বীকৃতির আগেই বিদেশের মাটিতে তারাই ১ম দেশের পতাকা উড়িয়েছিলো গেয়েছিলো ১ম প্রাণের জাতীয় সঙ্গীত।আজ মেসি,নেইমারদের ভিড়ে তাদের নাম কেউ মুখে আনে না হয়ত কিন্তু দেশের জন্য তাদের এই অবদান ভোলার নয়।রাইফেল হাতে যুদ্ধ না করলেও লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেশের মান উজ্জ্বল করেছিলো প্রথম তাঁরাই।জম্ন আমার আসলেই ধন্য এইদেশে জম্নে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×