somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের সকালে পুড়ছে কেউ সাথে জ্বলছে দেশ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

আজকে কুয়াশা তেমন একটা নাই কিন্তু বাতাসটা একটু বেশি তারপরও আলী মিয়া ঘামছে।বাহিরে আলো হয়ে গেলো এখনো সব কাজ শেষ হয় নাই। রাতে নেতা কয়েকবার ফোন দিছে সকালের আগে আগে তার সবকিছু চাই মানি চাই,না হলে ১টা টাকা ও দিবে না।কয়েকদিন ধরেই আলী মিয়ার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না তাই এই ক্ষণিকের সুযোগে টাকা কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না কারণ টাকাটা যে তার খুব দরকার। হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আলী মিয়া আরেকটা জর্দার কোটায় শক্ত করে টেপ মারছে যাতে সহজে বাস্ট না হয়। যত তাড়াতাড়ি পারে তার কাজ শেষ করে নেতার কাছে ককটেল গুলো পৌছে দিতে হবে।

দুই

সুমনের সারা রাত ঠিক মত ঘুম হয় নাই।তারপরও এত সকালে বিছানা ছাড়তে হবে নেতা বলছে সকালে চায়ের দোকানের পিছনে দেখা করতে,আজকের কাজটা যদি ভালো ভাবে করতে পারে ক্ষমতায় গেলে সুমনের পোস্ট পাক্কা।আজকে সাড়ে ৩বছর ধরে সুমন নেতার পিছনে ঘুরছে এলাকায় নেতার দলে একটা পোস্ট পাবার আশায় সেখানে আজকে নেতা তাকে নিজেই পোস্ট এর কথা বলছে এমন সুযোগ বারবার আসে না।বিছানা ছেড়েই সুমন ছুটে গেলো কলপারে না হলে বস্তির মানুষ গুলোর জন্য তার দেরী হয়ে যাবে।আর মা যদি দেখে ফেলে তাহলে তো সব শেষ যেতেই দিবে না কোথাও যে করেই হোক তার চোখ ফাকি দিতে হবে।

তিন

আজ খুব ভোরে আমেনার ঘুম ভেঙে গেছে।তার পাশেই শুয়ে আছে তার ছেলে,ছেলের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে মা।নিজের গায়ের চাদরটা ছেলের গায়ে জড়িয়ে দিলো একটু শান্তি করে ঘুমাক না ছেলেটা কিছুক্ষন পরেই তো ছুটতে হবে স্কুলে।আজ কত দিন ধরে একটা নতুন শীতের জামার জন্য বায়না ধরেছে ছেলেটা আমেনা কিনে দিতে পারছে না।মাসের মাঝখানে টাকা এখন হিসেব করে খরচ করতে হয় তারমাঝে কি করে বাড়তি খরচ করে।তার কি এখন সেইদিন আছে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে নিজের আর ছেলের জন্য খাবার জোড়ার করে,ছেলের পড়াশুনা খরচ দিয়ে বাকি কাজ সারতে তাকে কর্য করতে হয় প্রায়ই।তারপর ও তার মানিকের জন্য সামনের মাসে একটা নতুন শীতের জামা কিনতে হবে একটা মাত্র ছেলে তার আদর করে নাম রেখেছে মানিক।

চার

হাবিলদার রফিকের মেজাজ বেজায় গরম,কোথাও রাগ দেখাতে না পেরে সব রাগ দেখায় তার স্ত্রীর উপর। জামা কাপড় পড়তে পড়তে আজ সে মনে মনে গালি দিচ্ছে পুলিশের উপরের পুলিশের কর্তাদের উপরে বসে বসে শুধু হুকুম আর সব কাজ যেন তাদের।কে কোথায় বোমা মারবে কে কোথায় আগুন লাগাবে তার সব কিছু যেন তাদেরই খুজে বের করতে হবে আর উপরে বসে বসে তারা মজা নিবেন। হুকুমের গোলাম পাইছে সবাইরে। পারলে বাহ বাহ আর না পারলেই লাথি আরে বাবা এত মানুষের মাঝে ক্যামনে বুঝুম কেডার কি কামে যাচ্ছে।শীতের ভিতর এই সাধ সকালে ডিউটি করতে কার ভালো লাগে।গালি দিতে দিতেই বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলো হাবিলদার রফিক।কিছুক্ষণ হাবিলদার সাহেব বাসে উঠে পরলো এখন শুধু পৌছার অপেক্ষা।

পাঁচ

চায়ের দোকানটা এখনো খোলে নাই কিন্তু আসে পাশে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত।ওদিকে আলী মিয়া সুমন,রুবেল,তুহিন কারোই দেখা নাই।নেতা একটা সিগারেট ধরালো নিজের সাথে নিজে ভাবছে আসলে এই মানুষ গুলা কামের না সময় মত আসতে পারে না এরা।আসলে এখন তারা ক্ষমতায় নাই তো তাই মানুষ তাদের কথায় দাম দেয় না ক্ষমতায় গেলে সবগুলারে সুদে আসলে ভরা হবে তখন বুঝবে ঠেলার নাম বাবাজি। সিগারেট টা শেষ হবার আগেই আলী মিয়া চলে এসেছে।নেতার হাতে বাজারের ব্যাগটা দিয়ে বললো ভাল মাল বানাইতে সময় লাগে।নেতা কিছু বললো না কারণ এখন এদের হাত রাখা লাগবে কিছু বলা যাবে না সময় হলে মজা দেখাবে।টাকা পড়ে দিবে আলীকে বিদায় করলো।

ছয়

হাবিলদার সাহেব বসে আছে বাস্তায় পাশের বেঞ্চে পাশের জন ঝিমাচ্ছে বড্ড রাগ লাগছে কিন্তু কিছু বলছে না।

নেতা বসে আছে সামনে দাঁড়ানো রুবেল,তুহিন আর অনেকে।সবার পাশে এক কোনায় সুমন,সে এদের কেউ কে চিনে না তারপরও দাঁড়িয়ে আছে সবার সাথে।নেতা কিছুক্ষন ভাবল এখন এদের কিছু বলা ঠিক হবে না তাই কি করে শুরু করবে বুঝতে পারলো না।কাশি দিকে গলা ঝাকিয়ে শুরু করলো দেশের এখন দূর অবস্থা সেটা তোমরা জানো সবাই,আর এই দূর অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারো শুধু তোমরাই।এদের কাছ থেকে ক্ষ্মতা কেড়ে নিতে হবে আর সেজন্য তোমাদের সাহায্য চায় দল তোমরা যদি সফল হয়ে দলকে ক্ষমতায় আনতে পারো তার প্রতিদান তোমরা পাবে।ব্যাগে থেকে কৌটা গুলো নিজেদের সুবিধা মত নিয়ে নাও তারপর ঝাপিয়ে পর তোমরা। নেতা উঠে গেলো সবাই কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে তারপর ব্যাগ থেকে জিনিস গুলো বের করা শুরু করলো।

সকাল ৯টা মানিকের আর ভালো লাগেনা সকাল সকাল কার ভালো লাগে প্রতিদিন স্কুলে যেতে কবে যে লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে,কবে যে তার আর পড়তে হবে না।হাটছে আর ভাবছে সে যখন অনেক বড় হবে তখন আর সে মাকে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে দিবে না,সারা দিন সে মায়ের কোলে শুয়ে থাকবে আর গল্প শুনবে বাবার গল্প তার বাবা কথা মা এখন বলে না তখন ঠিকই বলবে।

সাত

রাস্তায় বাস চলা শুরু হয়েছে মানুষ কাজে যাচ্ছে ভিড় বাড়ছে।আশেপাশে পুলিশ নেই এটাই ভালো জায়গা সুমন ভাবছে,ভাবনা শেষ হবার আগেই মিছিল শুরু হয়ে গেলো সামনের ছেলে গুলো ব্যান্যার ধরে ফেলেছে। স্লোগান চলছে “রাজপথ ছাড়ি নাই খ তোমায় ভয় নাই”।মানুষ ছুটছে যে যেথায় পারছে।কিছু বুঝে উঠায় আগেই সামনের দিক থেকে পুলিশ আসছে।সুমনে পকেট থেকে ককটেলটা বের করলো হাত কাপছে তার আর কানে ভাসছে ক্ষমতায় গেলে পোস্ট পাক্কা।ফায়ার এর শব্দ মানুষের চিল্লাপাল্লা দিক বেদিকে দৌড়াচ্ছে,সুমন চোখ বন্ধ করে ছুড়ে মারলো পরক্ষনেই মাটিতে পড়ে গেলো।বুকে কি জানি একটা লাগলো খুব ব্যাথ্যা হচ্ছে তার মনে হচ্ছে সবকিছু ঘুরছে শুধু।

মানিক বুঝতে না হা করে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে এসব মুহূর্তেই তার চোখ আধার হয়ে গেলো।কান মাথা গরম হয়ে পানি পড়ছে মানিক রাস্তার পড়ে গেলো সারা গায়ে ঝ্র ঝর করে রক্ত পড়ছে যাকে সে পানি ভেবেছিলো।

হাবিলদার রফিকের মেজাজ গরম সবগুলা পালিয়ে গেছে শুধু একটা পড়ে আছে কিন্তু তার থেকেও মেজাজ গরম কারণ সবাই ফাকা গুলি ছুড়লেও সেই একমাত্র লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলো আর তারই ফল রাস্তায় পড়ে থাকা ছেলেটি।উপর থেকে আবার ভালো ধাক্কা খেতে হবে তাকে।

আট

আমেনা হাউমাউ করে কাঁদছে মানিক কে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেঞ্ছি বিভাগে।কাঁদতে কাঁদতেই ফোন দিলো তার বাবার নাম্বারে।

আলী মিয়া মাত্র খেতে বসেছে এর মাঝেই মেয়ে আমেনার ফোন।মেয়ের কান্না শুনে নিজেকে সামলে নিলো সবকিছু শুনলো বুঝতে পারলো টাকা লাগবে,হাতে টাকা নেই নেতার কাছ থেকে টাকা নিতে হবে।

হাবিলদার রফিক সুমনের লাশ নিয়ে মর্গের সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার ঠিকানা বের করা দরকার সাথে তো কিছুই নেই কি করে বের করবে সে এত কিছু।

নেতা বিছানায় শুয়ে আছে চোখে ঘুম ঝাড়ানো একটা ঘুম দেয়া খুব জরুরী মোবাইলে সিমটা চেইঞ্জ করে শুয়ে পড়লো ছেলেগুলো সব কাজ ঠিক মত করলেই চলে ভাবতে ভাবতে।

আলী মিয়া একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে নেতার মোবাইলে আর অপরপাশ থেকে বলছে”দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না দয়া করে কিছুক্ষন পড়ে আবার ট্রাই করুন”

আমার মানুষ গুলোকে পুড়িয়ে আমার দেশ টা কে জ্বালিয়ে এভাবে আর কত দিন ???

(ঘটনাটি কাল্পনিক)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×