৪৩ বছর আগের কথাগুলা বলা কি এতো সহজ। সেসব অনেক কথায় আজ পলি পড়ে গেছে আর কিছু কিছু কথা কে মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছি আমরা জীবন সংগ্রাম মানুষ্কে অনেক কঠিন আর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় সেখানে কোন আবেগ স্থান পায় না।
এমন অনেক গল্প হয়ে ওঠা ঘটনা শুনেছি আমি কিছু কিছু মানুষের মুখ থেকে,আবার কিছু কিছু খুজে খুজে বের করতে হয়েছে বইয়ের পাতা কিংবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে।এমন অনেক ত্যাগের ঘটনা ঘিরে আমাদের স্বাধীনতা তার অনেকেটাই জানি না আবার আমরা অনেকটাই জানি,কিন্তু বলা হয়ে উঠে না কখন।আজ অনেকেরই অজানা এই রকম একটি গল্প হয়ে উঠা ঘটনা বলব।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান বলতে গেলে সবার আগে সবার আগে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর নাম চলে তার সাহসের কথা সকলেরই জানা কমবেশি।কিন্তু এর আগেও আরো একজন ছিলো তার কথা অনেকেই জানি না আমরা তিনি যুদ্ধ শুরুর আগেই বিমান বাহিনী কে প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন এবং কাজ অ করে চলছিলেন সেভাবে।
ক্যাপ্টেন এ টি এম আলমগীর এর কথা বলছি ,তৎকালীন পি আই এর একজন বৈমানিক ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রানবন্ত মানুষ সারাদিন সবাইকে হাসিয়ে রাখতে পারার জন্য তার ছিলো বিশেষ খ্যাতি আর সবচেয়ে বড় কথা একজন প্রকৃত কিংবা খাঁটি বাঙালি, কমক্ষত্রে তার বিশেষ সুনাম ছিলো।
বাঙালি বৈমানিকরা যাতে পাকিস্তানি বৈমানিক এর চেয়ে কাজে বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে সেজন্য তিনি প্রতিদিন তাদের বাড়িতে ১৫-২০এর একটি দলকে বিশেষ টেকনিক্যাল ট্রেনিং দিতেন।যত কিছুই হোক না কেন তিনি তার প্রশিক্ষণে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেন না শুধু মাত্র বাঙালির মেধার প্রমাণ করতে। নিয়মিত ক্লাস আর পরীক্ষা ছিলো তার প্রশিক্ষণে বাধ্যতামূলক।
একবার তার থেকে নিচের একজন ক্যাপ্টেন শাহাব এসে ক্যাপ্টেন আলমগীর এর স্ত্রীর কাছে আর্জি করেছিলেন আজ কেউ পরীক্ষা দিতে চান না তিনি যেন একটু বুঝিয়ে বলেন।তার স্ত্রী নাদিরা আলমগীর তাকে অনেক বুঝিয়ে বলেন আজ পরীক্ষা না নেবার জন্য,জবাবে ক্যাপ্টেন আলমগীর স্ত্রী কে বলেছিলেন আমি তোমার সব কথা রাখতে পারি শুধু এই কথাটি ছাড়া তুমি আজ বুঝতে পারছো না একটা সময় ওদের কে দেশের অনেক কাজে প্রয়োজন হবে তাই কিছুতেই সময় নষ্ট করা যাবে না।
বাঙালি আর পাকিস্তানীদের বৈমানিকদের মাঝে অনেক বৈষম্য বিদ্যমান ছিলো।সুযোগ-সুবিধা কম,চাকরি দেয়ার ক্ষত্রে বাঙালিদের প্রতি অবিচার ইত্যাদি।এই ধরনের ব্যবহার তার মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে তাই তিনি পাকিস্তানি পাইলট এসোসিয়েশন থেকে বেরিয়ে এসে গঠন করেন ইস্ট পাকিস্তান পাইলট এসোসিয়েশন এবং বাঙালি পাইলটদের সুযোগ-সুবিধার জন্য সংগ্রাম শুরু করেন।এ কাজটি তার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না কিন্তু তিনি সেটা করতে পেরেছিলেন।কারন তার মনে নিজ জাতির জন্য ছিলেন অপরিসীম ভালোবাসা তাই সবকিছুই দ্বায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিতেন।
একবার সিলেটের শমশের নগরে পি-আই এর একটি বিমান ক্র্যাশ করে তদন্তের জন্য সেখানে যাওয়া খুবই দরকার হয়ে।কিন্তু পাকিস্তানের কোন পাইলট সেখানে প্লেন নিয়ে নামার সাহস পেলেন না।কারন ওখানে প্লেন ল্যান্ড করাটা খুব বিপদজনক ছিলো।সবকিছু শুনে আলমগীর সব বিপদ উপেক্ষা করে সকলকে নিয়ে সেখানে প্লেন ল্যান্ড করেন এবং বাঙালিদের সাহসের পরিচয় সাক্ষ্য স্থাপন করেন।
মার্চ এর প্রথম দিকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে আলাদা একটা এয়ার লাইনস গড়ার পরিকল্পনা করেন,কিভাবে কোথায় প্লেনগুলো সরিয়ে রাখা হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।২৫ মার্চের রাতের নারকীয় সেই দৃশ্য ,নয়া বাজারের আগুন দেয়ার দৃশ্য সবকিছুই তিনি তার ক্যামেরার টেলিলেন্স এর মাধ্যমে তুলে রেখে বিদেশে প্রাচার করার জন্য পাশের বাসায় অবস্থানরত ব্রাদারদের হাতে তুলে দিয়ে পালিয়ে বন্ধুদের সাথে সিরাজগঞ্জ চলে যান।সেখানেই সিদ্ধান্ত নেন ভারতে পালিয়ে যাবার।
এর মাঝে তাকে খোঁজার জন্য পাকিস্তানী আর্মি তার বাসায় একাধিক বার হানা দেন।এপ্রিলের শেষের দিকে তিনি পরিবারের সাথে ঢাকায় দেখা করতে এলে আর্মির হাতে ধরা পরে নিখোঁজ হন।
স্বাধীন দেশ জাতিকে দেয় অনেক কিছু কিন্তু কেড়ে ও নেয় ততোধিক দেশ আজ স্বাধীন,অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমদের এই স্বাধীনতা।আমি আজ বলবো না কোন কষ্টের কথা একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি গর্বিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩২