হাতের তুলি রঙ্গে ফেলি, সেলফিতে এফেক্ট তুলি, কল্পনা মাখিয়া দেই সাথে,
ক্যামেরা কেমন জব্দ, বন্ধুরা সব উতপ্ত, লাইক হাসিয়া মরে তাতে !
*****************************************************
আমসত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে
হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিকে নিস্তব্ধ, পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে। - রবি ঠাকুর
পরম শ্রদ্ধেয় মান্যবর শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাবু মহাশয়,
যথা বিহিত সন্মান অতঃপর সবিনয় নিবেদন, একদা কলিকাতা শহরে অবস্থান কালে একটি গুরুত্বপূর্ন দিবসে স্বস্ত্রীক জোড়াসাঁকোয় তোমার আবাসস্থল পরিভ্রমন করিবার সুযোগ গ্রহণ করিয়াছিলাম। উক্ত স্মরণীয় দিবসটি ছিল ২০০৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী। সুদীর্ঘকাল পূর্বে অন্তরীক্ষের অপরিচিত, অজানা, চির-রহস্যাবৃত একটি স্থানে তুমি চিরদিনের ন্যায় হারাইয়া গিয়াছ এতএব এই দিবসটির সহিত তোমার পরিচয় নাই । এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিবসটি বিশ্ব জুড়িয়া বাঙ্গালীদের নিকট শহীদ দিবস নামে পরিচিত এবং উক্ত দিবসে মায়ের ভাষা, তোমার ভাষা, বাংলা ভাষার দাবীতে জীবন উৎসর্গকারী কয়েকজন অকুতোভয় বাঙ্গালী তরুণের জন্য বিশ্ববাসীর নিকট আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামে স্বীকৃত ।
তোমার বাসভবনে অর্ধ দিবসের অধিককাল অতিবাহিত করিবার কালে দোতলায় তোমার সেই বিখ্যাত দক্ষিনের বারান্দায় গিয়া দাঁড়াইয়াছিলাম এবং ফিরিয়া ফিরিয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিয়াছিলাম । অতঃপর নিঃশব্দ চরণে তোমার তিরোধানের কক্ষটিতে উপস্থিত হইয়া কিয়ৎকাল নীরবে, বিনম্র-চিত্তে, গভীর শ্রদ্ধার সহিত সজল নয়নে তোমাকে স্মরণ করিয়াছি । হৃদয়ের স্পন্দন যেন বলিতেছিল "হে অতীত তুমি গোপনে হৃদয়ে কথা কও, কথা কও।"
শত-সহস্র স্মৃতি বিজড়িত তোমার নিবাস, পারস্যের অমর কবি শেখ সাদীর ভাষ্য মতে যাহা একটি পান্থশালা ভিন্ন কিছুই নহে, পরিদর্শন সমাপ্ত হইলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে কলেজ স্ট্রিটে গমন পূর্বক একটি পুস্তকালয় হইতে অন্যান্য কয়েকটি পুস্তকের সহিত তোমার "জীবন স্মৃতি" গ্রন্থখানি সংগ্রহ করিয়াছিলাম । জীবন স্মৃতিতে চারটি ছত্রে রচিত কবিতায় তুমি যে আহারের বর্ণনা দিয়াছ তাহা অতিমাত্রায় সুস্বাদু হইবার কারণে এইরূপে নিঃশেষিত হইয়াছে যে পিপিলিকা পাতে কিছু না পাইয়া অশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে প্রস্থান করিতেছে ! ইদানিং কালে ফেসবুক ও তাহাতে সেলফি ছবির অত্যাধিক জনপ্রিয়তা পরিলক্ষিত হওয়ায় রসনাময় কবিতাটির প্যারোডি প্রস্তুত করতঃ আমার ফেসবুকে ব্যবহারের জন্য স্বহস্তে প্রস্তুত আমার সেলফিতে ব্যবহার করিলাম । করজোড়ে বিনীত নিবেদন, কবিবর, মদীয় ধৃষ্টতা নিজ গুনে মার্জনা করিও!
********************************
স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানিনা। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ, যাহা-কিছু ঘটিতেছে তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি-অনুসারে কত কী বাদ দেয়, কত কী রাখে। কত বড়োকে ছোট করে, ছোটকে বড়ো করিয়া তোলে। সে আগের জিনিসকে পাছে ও পাছের জিনিসকে আগে সাজাইতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। বস্তুত, তাহার কাজই ছবি আঁকা, ইতিহাস লেখা নহে। এইরূপে জীবনের বাহিরের দিকে ঘটনার ধারা চলিয়াছে, আর ভিতরের দিকে ছবি আঁকা চলিতেছে। দুয়ের মধ্যে যোগ আছে, অথচ দু'ই ঠিক এক নহে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (জীবন স্মৃতি)
I do not know who has painted the pictures of my life imprinted in my memory. But whoever he is, he is an artist. He does not take up his brush simply to copy everything that happens;he retains or omits things just as he fancies; he makes many a big thing small and a small thing big! He does not hesitate to exchange things in the foreground with thing in the background. In short, his task is to paint pictures, not to write history. The flow of events forms our external life, while within us a series of pictures is painted. The two correspond, but are not identical.
- Rabindranath Tagore in "My Reminiscences"
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮