সাধারণ অর্থে ধর্ম বলতে কোন কিছুকে ধারণ বা পোষণ করাকে বোঝায়। কেউ কেউ আবার একে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
পৃথিবীতে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ যত রকমের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সব ধর্মের মূল কথা একটিই- সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ধরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা। কোন ধর্মেই হানাহানির উল্লেখ আছে বলে আজ পর্যন্ত আমি শুনিনি। এসব ধর্মাবলম্বী মানুষেরা সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ইবাদাত বা আরাধনা করে পরকালে মুক্তি প্রাপ্তির চেষ্টা করে।
স্রষ্টার নৈকট্য লাভের আশা করতে হলে আগে তাঁর সৃষ্টির নিকট নিজেকে পৌঁছাতে হবে। মানুষ যেমন শিল্পীর আঁকা ছবি দেখে তার প্রসংশা করে তেমনি স্রষ্টার প্রশংসা করতে হবে তাঁর সৃষ্টি দেখে। স্রষ্টাকে পাবার রাস্তা স্রষ্টা নিজেই বাতলে দেবেন। এসব কথা আপনাদের জানা। এবার মূল কথায় আসি।
স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসতে গেলে আপনার আরেকটি যে ধর্মের প্রকাশ পাবে তাহল আপনার মানবধর্ম। মানুষ সহ জাগতিক সকল সৃষ্টিকে ভালবাসাকে যদি মানব ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করি তাহলে এই মানবধর্ম যে আপনার পোষণ করা ধর্মেই নিহিত তা স্পষ্ট বোঝা যায়। কেননা সৃষ্টিকে ভালোবাসা মানেই স্রষ্টাকে ভালবাসা।
ধারণকৃত ধর্মকে পালন করা অবশ্য কর্তব্য কিন্তু ধর্মে অন্ধ হওয়াটা অপরাধ। যেকোন অনিষ্ট নিমিষেই ঘটে যেতে পারে এই অন্ধতার কারনে যা ধর্মের মধ্যে নিষিদ্ধ। ধর্মের প্রতি এই অন্ধতা মানুষকে বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম মানুষকে মুক্তি দেয়।
প্রকৃতপক্ষে মানুষের কর্মই তার ধর্ম। ধর্মকে প্রকৃতরূপে ধারণ করতে গেলে মোহকে ত্যাগ করতে হয় আর কর্তব্যকে জগতের সামনে পেশ করতে হয়। ধর্মান্ধতা মোহ সৃষ্টি করে আর কর্ম মোহকে ত্যাগ করতে সাহায্য করে। মানুষ যদি নিজের কর্মকে ত্যাগ করে তবে সে মোহাবিষ্ট হয়ে ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যেকোন অনিষ্ট ঘটে যেতে পারে তার দ্বারা। মানুষ তখনই কর্মকে ত্যাগ করে যখন সে ব্যাক্তিগত ধর্মে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে। কর্মত্যাগী মানুষ সর্বদাই অন্ধের মতো শুধু সত্যকে হাতরে বেড়ায় কিন্তু নাগাল পায়না, আলেয়াকে আলো মনে করে আর কুহেলিকাকে সত্য বলে মেনে নেয়। ব্যাক্তিগত ধর্ম ব্যাক্তির পক্ষে মঙ্গলময় হতে পারে কিন্তু জগতের জন্য নয়। জগতের জন্য জাগতিক কর্ম সম্পাদন করতে হয় আর সে জন্য কখনো কখনো ব্যাক্তিগত ধর্মের বাহিরেও বিচরণ করতে হয়। কর্মকে ধর্মজ্ঞান করার আগে জগতের ওপর তার প্রভাবকে বিবেচনায় আনাও কর্তব্য বলে ধরে নেওয়া উচিত। মহাভারতের কুরু বংশের ধ্বংসের জন্য না দায়ী দুর্যোধন নাতো তার মামা শকুনি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য দায়ী ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য আর কর্ণের ধর্মান্ধতা ও তাদের ব্যাক্তিগত ধর্মের পালন। মোহাবিষ্ট এসব কর্মত্যাগী ব্যাক্তিদের জন্যই মহাধ্বংসের আয়োজন হয়েছিল।
সুতরাং, ধর্মের প্রতি মানুষের যে দুর্বলতা রয়েছে তাকে অন্ধতায় পরিণত না করে মুক্তি লাভের উপায় খুঁজে ধর্মকে যথাযথভাবে ধারণ করাকে কর্তব্যজ্ঞান করাই শ্রেয়। তাই ব্যাক্তিগত কর্মের পরিবর্তে জাগতিক কর্মকে ধর্মজ্ঞান করলে হয়তো ধরার বুকেই আমরা স্বর্গসুখ অনুভব করতে পারব।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৫