somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

❤️ প্রিয় বই❤️ আয়না ঘর !

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এত যে আমি ওখানে যাই
ওখানে পাই কাছে;
ওখানে তার পায়ের কিছু
চিহ্ন পড়ে আছে।"

কবি নির্মলেন্দু গুণের কয়েকটি লাইন এই পছন্দের বই এর শুরুতে দেয়া আছে। এই কয়েক লাইনই পড়া শুরুর আগে মন অর্ধেক দখল করে রাখে। খুব ডুবে গিয়ে যখন কোন বই পড়া শুরু হয় নিজেকে তখন রিলেট করা যায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্রটির সাথে।

আয়নাঘর। বইটা হুমায়ুন আহমদের লেখা, তারউপর প্রথম দিকের সেই "ম্যাজিক মোমেন্ট ক্রিয়েট " করা সময়ের লেখা। এত হাজার হাজার রিভিউ এসেছে বলার নয়। হয়ত যত রিভিউ এই এক আয়না ঘর বই এর এসেছে তত বই এর কপি ও বিক্রি হয়নি উনার সময় সাময়িক অন্য লেখকের। তাই এমন একটা বই নিয়ে লিখতে সাহস করার জন্য কলিজা দরকার। আমার সেই কলিজা নেই কিন্তু তাতে কি মনের কথা লিখবো না ?? উ হু তা হবে না তা হবে না।

শেষমেশ কলিজা ধার করলাম, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম সামু ব্লগে আর অনালাইনে কিছু রিভিউ দেখে। মনে মনে ভাবলাম ভাই মানুষ ও দুনিয়ার লক্ষ কোটি আছে। তাই বলে কি কোন বাবা মা চিন্তা করেন সান্তান নেবার বেলায় ? যার যার সন্তান তার নিজের হয়। তাই ভেবে নিলাম আমার লেখা আমার মনের যে ভাবনা সেইটা প্রকাশ করবে। হয়ত উন্নত সাহিত্য মানের হবে না , খুব ইন্টারেস্টিং ও না কিন্তু ব্লগে লেখা তো থাকল। দশ বছর পর নিজের লেখা পড়ে নিজের ই মনে হবে আচ্ছা ১০ বছর আগে আমি এই এঙ্গেলে চিন্তা করতাম ?

শুরুটা গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র লিলিয়ানের ডায়লগ ইহা খেতে বড় সৌন্দর্য হয়
দিয়ে। প্রথম লাইনে আর নামেই বুঝতে পারেছেন লিলিয়ান বিদেশি মেম। হুম বইটা বাংলাদেশের একটা ছোট শহর ময়মনসিংহের ছেলে তাহের। যে কিনা আমেরিকায় ডাক্তারি পড়তে গেছে। আর ইতালির নেপলস থেকে আসা প্রচণ্ড ধার্মিক পরিবারের মেয়ে লিলিয়ানের যৌথ জীবনের টুকরো কাহিনী।

তাহের এবং লিলিয়ানের প্রথম পরিচয়ের বর্ণনার পর্বেই উচ্চস্বরে প্রাণখোলা হাসি আর কৃষ্ণবর্ণের ঘুম কাতুরে তাহেরের প্রেমে পড়ে যাই। (মাত্র ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে, নতুন করে মস্ত বড় অঙ্গন স্বাধীনতা অফুরন্ত সময় সাথে এমন ম্যাজিক বই) ধীরে ধীরে কাহিনী এগুচ্ছে দুজনের পরিচয় বাড়ছে, বাড়ছে ইগো কনফ্লিক্ট। কনভারসেশনে একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা, তাহেরের কার্যকলাপে লিলিয়ানের ঘৃণায় থুথু জমে যাওয়া। অতঃপর তাহের কে শক্ত প্রত্যাখ্যান করে পরিতৃপ্ত মন নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া। প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলার নির্মল আবেগের পরাজিত এ রূপ স্থায়ী নয়। উপরে একজন অলক্ষ্যে হাসছিলেন আর ছক করছিলেন ড্রামাটিক মিলনের।

অচেনা যুবক তাহেরের অযাচিত ব্যবহার তার ভাল না লাগলেও নিজের ঘরে গিয়ে রাতে তাকেই স্বপ্নে দেখে লিলিয়ান। আর স্বপ্ন ছিল ভয়ানক ধরনের। এর মাঝে সেই ভিনদেশী যুবকের সাথে একদিন দেখাও হয়, কয়েকদিন এমন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার পর লিলিয়ান ভার্সিটির মানসিক বিষয়ের কাউন্সিলর এর সাথে দেখা করে কথা বললে সে অনেক কিছুই বুঝতে পারে। লিলিয়ান তাহেরের ঠিকানা বের করে তার বাসায় গিয়ে হাজির হয়। উদ্দেশ্য তাহেরের সম্মতি থাকলে তাকে বিয়ে করা, খুশি হয়ে যায় অনেক তাহের কারন দিনটি তার জন্মদিন ছিল।


সে যেমন ই হোক মোদ্দা গল্প এগিয়েছে ওদের দুইবার বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং তাহেরের পূর্বপুরুষ জাঙ্গির মুন্সির রূপবতী স্ত্রী আয়নাঘরের মায়ায় রয়ে যাওয়া কোন এক তিতিলি বেগমের আত্মার সাথে লিলিয়ানের দুই মেয়ে কে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাঝে সমাপ্ত হয়েছে।


তাহেরের বিদেশিনী স্ত্রী লিলিয়ান অবাক হয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। তাহের বলল, লিলি!এই দেখ এই ঘরটার নাম আয়নাঘর। জানালাবিহীন ছোট্ট একটা কামরা, যার দেয়াল জুড়ে প্রকান্ড সব আয়না।তাহের বলল, আমার পূর্বপুরুষদের রূপবতী তরুণী বধূরা দরজা বন্ধ করে এই ঘরে সাজ করতো।
‘যারা রূপবতী নয় তারা কি করতো?’
‘আমি কথার কথা বললাম! যারা রূপবতী নয় তারাও নিশ্চয়ই যেত।’
’ঘরটাতো অন্ধকার। জানালা নেই। দরজা বন্ধ করলে আলো আসবে না।’
‘এই ঘরে ঢুকতে হোত প্রদীপ নিয়ে। চারদিকে আয়ানাতো প্রদীপ জ্বাললেই অন্যরকম এফেক্ট হয়। তুমি মোমবাতী জ্বালাও, দেখ কেমন লাগে।’
‘তুমি অন্যঘরে যাও। আমি একা একা মোমবাতী জ্বালাব।’
তাহের চলে গেল। লিলিয়ান দরজা বন্ধ করে, মোমবাতি জ্বালালো। সঙ্গে সঙ্গে ঘরটা যে বদলে গেল। লিলিয়ানের মনে হল। আয়নার ভেতর থেকে কে যেন তাকে দেখছে। অবাক হয়ে দেখেছে!


এমন একটা আয়নাঘরের স্বপ্ন আমাকে অনেক নিঃসঙ্গ, বিধ্বস্ত সময়ে বৃষ্টিঝরা আনন্দ দেয়। আমাকে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়।

বাংলাদেশে ভ্রমণের ২য় রাতে তাহেরের চাচার ছেলে এসে খবর দেয় তার বাবার শরীর খারাপ, কিন্তু জরুরি একটা কথা এখনই তাহেরকে বলতে চান এখনই তাহেরকে তার সাথে যেতে হবে। তাহের লিলিয়ানকে বাড়িতে রেখে মেঘলা রাতে ঘোলা চাঁদের আলোয় রওনা হয় চাচার বাড়ির উদ্দেশ্যে। চারটি ছেলে ঘিরে নিয়ে যাচ্ছে তাহেরকে। একসময় নদীর পারে এলে সেখানে একটা নৌকোতে তোলা হয় তাহেরকে। বুড়ো মত একজন লোক তার চাদরের নিচে ছুড়ি নিয়ে বসে আছে নৌকা মাঝ নদীতে যাওয়ার অপেক্ষায়। সাঁতার না জানা তাহের প্রচণ্ড স্রোতের দিকে তাকিয়ে বসে আছে, এক সময় সে ঝাঁপিয়ে পরে সেই স্রোতের মাঝে।

অন্যদিকে লিলিয়ান হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হতে থাকে তাহেরের কোন বড় বিপদ হবে। এরমধ্যে দোতলার সিঁড়ির দরোজায় কড়ানাড়ে কেউ। বারবার বলে " খুলেন দরজা খুলেন " ভয় পয়ে সে লুকিয়ে পরে আয়না ঘরের একটি কাবার্ডের মাঝে। দরজা ভেঙ্গে ঘরে কয়েকজন লোক। এমন সময় অন্ধকারে কেউ একজন তার চুড়ি পরা হাত রাখে লিলিয়ানের পিঠে, নীরবে সাহস যোগায় তাকে। সেই চুড়িপরা হাত এক সময় তার হাত ধরে লোকগুলির চোখে ধূলি দিয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। তারপর সেই ছায়ামূর্তির পিছনে পিছনে ছুটতে ছুটতে এক সময় লিলিয়ান পৌঁছে যায় নদীর পারে, ছায়ামূর্তির নির্দেশিত দিকে তাকিয়া দেখতে পায় তাহেরের অচেতন দেহ পরে আছে নদীর তীরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

"হুজুগে-গুজবে বাংগালী"- বলে আমাদের একটা দুর্নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। গুজব আর হুজুগ যমজ ভাই।
গুজব বা হুজুগের সবকিছু মানুষ কিনতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্যোতনা দেয় অন্ধ বিশ্বাস।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫১

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১৫



আমার মনে হচ্ছে আমার ওজন বাড়ছে!
আমি সারা জীবন রোগা পাতলা থাকতে চেয়েছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার ওজন বাড়ছে। ওজন মাপালাম। ৮৫ কেজি। ১৫ কেজি ওজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হে অনন্যা তোমার কথিকা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫২



তোমার ভাবনা আজ মনের ভিতর ডাল-পালা মেলে
পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে বিচিত্র সব ফুলের দেশে
আমায় নিয়ে জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় অপরিমেয়
সুখের চাদরে আচ্ছাদিত করে আমায় বিমোহীত করে।

তোমার প্রফাইল পোষ্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক জিয়ার কি হবে তাহলে!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২

আজকের এই বিশেষ দিনে নাহিদ ইসলাম ঠিক সকাল ৯টায় উঠে দেখলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে শুভেচ্ছাবার্তায়। কেউ লিখছে "আমাদের ভবিষ্যতের নায়ক", কেউ বলছে "নেক্সট লিডার"।

চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাহিদ ভাবছেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ জন্মদিন নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৪



জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল নাহিদ ইসলাম।তোমরা এই জেন-যি প্রজন্ম সবাই আমার সন্তানের বয়সি বলে তুমি হিসাবে সম্বোধন করে এই পোস্ট লিখছি। রাজপথের মিটিং মিছিল থেকে জুলাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×