somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষারের দেশে আনন্দের এক একটা দিন ...... ২৮তম পর্ব

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখানে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকটা থেকেই বেশ ঠান্ডা বাড়তে শুরু করে। বাতাসের বেগ প্রচন্ড হওয়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমতে শুরু করার কারনে, গ্রীষ্মে অভ্যস্ত মানুষগুলোর জন্য আবহাওয়ার এই পরিবর্তন মানিয়ে নেয়া কিছুটা কষ্টকর হয়। আর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রীতিমত জ্যকেট গায়ে চড়াতে হয়। এসময়টাতে সাইকেল চলানোটা হয়ে যায় বেশ কঠিন, কিন্তু শেষ চার মাসের বাহন সাইকেলটাকে এড়িয়ে চলা হয়ে যায় অসম্ভব। সবচেয়ে ভালো লাগে যে জিনিসটা তা হলো, ওজন কমে রীতিমত মডেলদের মতো একটা ফিগার। হোক সে ছেলে কিংবা মেয়ে, সবাই পুরো গ্রীষ্মটা সাইক্লিং, জগিং আর বাহিরে বেড়িয়ে প্রফুল্ল একটা মন আর ঝরঝরে মেদহীন শরীরটা নিয়ে, কেবল আসন্ন ভয়াবহ ঠান্ডার ভয়ে কিছুটা ভীত থাকে বলে আমার মনে হয়েছে।

বছরের এই সময়টা আমিও যেন কিছুটা ঝরঝরে আনুভব করি। তবে যার মাঝে লুকিয়ে থাকে, আমার এই চঞ্চলতার রহস্য, থ্যাংক্স গিভিংয়ের বন্ধের পর, তাকে আগামী ছয় থেকে আট মাসের জন্য বিদায় জানানোটা খুব কষ্টের হয়ে যায়।

সে আর কেওনা, আমার দ্বিচক্রযান।

ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ গোলগাল, বাঙ্গালীর ভাষ্যমতে যা "স্বাস্থ্য ভালো" হিসেবে আখ্যায়িত হয়। বহু বছর আগে বুদ্ধদেব বসুর গল্পের বইয়ে, লেখক তার নায়িকার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেছিল- গতানুগতিক গল্পের বইয়ের নায়িকারা যেমন - আকর্ষনীয় শরীর আর রুপ লাবন্যের অধিকারী হয়, "বাবলী" সেরকম না। পড়াবার সময় মনে হয়েছিল, ঠিকতো আমার মতো মানুষ কোনদিন নায়িকার আর্দশ রুপ হতে না পারুক, চলনসই তো বটে। সেই থেকে আমি আমাকে মধ্যবিত্ত পরিবারের "একজন চলনসই মেয়ে" হিসেবে ধরে নিয়েছি। নিজের ওজন কিংবা সৌন্দর্য্যের দিকে লক্ষ্য করবার প্রয়োজনীয়তাটা , বুদ্ধদেব বাবুর অনুপ্রেরনার পরও "ছিকাঁয়" তোলা আজব বস্তু হয়ে থাকলো। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ল্যাবে, পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা দাড়িয়ে কাজ করবার কারনে, পায়ে ব্যাথার চিকিৎসা হিসেবে ওজন কমাবার চেষ্টায় নামতে হয়েছিল বেশ ভালো ভাবেই। যার ফলশ্রুতিতে এই সাইকেলের সাথে সাক্ষাৎ।

সাইকেল কেনা, চালানো শেখা, অতঃপর ছোটখাটো ট্রাফিক আইন ভংগো করে, দুই-একটা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে রাস্তায় নেমে প্রয়োজনীয় মোটামোটি সব জায়গাতে যাওয়া শুরু করলাম। মোটের উপর সবই এই হতভাগ্যের একাই করতে হয়েছিল। তবে জুনিয়র এক বন্ধুর পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ বেশ কিছু সাহায্য , সেসময়টাতে আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ছিল বলে- এক বাক্যে স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। সে বেচারীর উৎসাহ ব্যন্ঞক কথাগুলো না শুনলে হয়তো আমার এই অসম্ভব ভালোলাগার অভিজ্ঞতাটা কোনদিন হতোনা।

সাইকেল কি করে চালাতে হয়, এটা ইউনিভার্সিটিতে শেখায় একটা ক্লাব। কিন্তু তার সাথে আমার জানাশোনা ছিলনা। তাই মূল ভয়টা ছিল, এই স্থুল স্বাস্থ্যটা নিয়ে কিভাবে সাইকেল চালানো শেখা যায়, তাকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় কারন সাইকেল কেনা। আমার হঠাৎ করে জেগে ওঠা আগ্রহের ফলশ্রুতিতে কেনা "সাইকেলের কোনদিন কোন ব্যবহার হবেনা" -এই ধারনাটা বেশ বদ্ধমূল ছিল। তারপর আবার সাইকেলের দাম বেশ বেশী, নুন্যতম ১৫০ডলার। যা আমার কাছে হালকা চিন্তার কারন। ভরসার কথা একটাই, আমার এখানে প্রতি মাসের বাস পাসের দাম ৮৬ ডলার। সুতরাং কোনভাবে যদি প্রতিদিন স্কুল থেকে ৪৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে পারি, তাহলে মাসের এই খরচটা কমে যাবে। আর সেক্ষেত্রে কেবল মাঝে মাঝে দুরে কোথাও যেতে হলে বাসে টিকিট কেটে যাওয়া যাবে। স্কলারশীপ বন্ধ হবার আশংকায়, সে সময় খরচ বাচাবার জন্য এটা একটা বিরাট সুযোগ।

এক কথায় - "এক ডিলে দুই পাখি মারা"। কিন্তু আমার মাথায় কেবল, আম-ছালা দুই হারাবার ভয় - যদি সাইকেলটা কিনে চালাতে না পারি।

শেষমেশ সকল চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে, কিনলাম একটা সেকেন্ড হ্যন্ড সাইকেল, দামে কম- সুতরাং ভয়ও কম। বিদেশ বিভূয়ের একাকী জীবনে আমার এই সাইকেল অধ্যায় অসাধারন ছিল। স্কুল থেকে রাত করে ফিরবার জন্য আর কোন বাধা ধরা সময় ছিলনা, যেকোন জায়গায় হঠাৎ থেমে যেতে বাঁধা ছিলনা। ছিলনা কোন বিকেলে পার্কের রাস্তা ধরে হেটে বেড়াবার ক্লান্তি। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো গ্রীষ্মের শেষে এই পাতা ঝরা সময়টাতে অলিগলি ঘোরা। তাইতো প্রতিক্ষায় থাকলাম, আবার আগামী বছরের, সাইকেলটা তুলে রাখলাম সযত্নে বেসমন্টে।

মাঝে মাঝেই এই পার্কের রাস্তাটা ধরে এগিয়ে যেতে মন চাইতো অজানায়,




পার্কের এক পাশে এই লেক,



রাতে দেখা শহর, সোডিয়াম লাইটের আলোয় হলুদ পাতায় ছেয়ে যাওয়া গাছ:





সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতাকামীদের বাচ্চারা মাদ্রাসায় গিয়ে কিসে পরিণত হয়?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:৪৭



স্বাধীনতাকামীদের বাচ্চারা মাদ্রাসায় গিয়ে শিবির কিংবা হেফাজতে পরিণত হয়, যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।

মুসলিম বিশ্বে, গরীবদের ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় গিয়ে, আধুনিক জীবনভাবনা থেকে বিদায় নেয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামু ব্লগ কি আবারও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হইতেছে!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:২৯

সামু ব্লগ কি আবারও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হইতেছে!

ছবিঃ অন্তর্জাল হতে সংগৃহিত।

ইহা, উহা, ইহার, উহার, ইহাকে, উহাকে - ইত্যাকার সাধু ভাষার শ্রুতিমধুর কিছু শব্দসম্ভারের প্রয়োগ কদাচিত আমাদের প্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাফ-লেডিস বলছি.......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫৮


(ছবি নেট হতে)

আজ ব্লগ না থাকলে কবেই আত্মহত্যা করতে হতো। জ্বী আমার কথাই বলছি। আমার মতো উপযোগহীণ গর্দভ টক্সিক ব্যক্তি বেঁচে আছি শুধু ব্লগের জন্যে। কিভাবে? তবে বলছি শুনুন।

ছোটবেলা হতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভুলে যাচ্ছি কত কিছু=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২



ভুলে যাচ্ছি মমতার ঋণ, বাবার আদর
ক্রন্দনরত দিন, বৃষ্টির ঝুম আওয়াজ
ভুলে যাচ্ছি কত কিছু দিন দিন
বিছানো ছিল কোথায় যেন স্নেহের চাদর।

ভুলে যাচ্ছি দেহের শক্তি, সরল মন
কঠিনের মাঝে ডুবে ধীরে
ভুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমিট্যান্স যোদ্ধা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫৬


সদ্যই আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সপরিবারে হোয়াইট হাউসে উঠেছেন। নির্বাচনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরসহ অন্যান্য সবাইকে এক প্রীতিভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষীরা যাচাই-বাছাই করে সেসব অতিথিদের ভেতরে ঢুকতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×