পূর্বের কথাঃ সময়টা গোধূলি বেলা। সাড়ে ৬ টার পরে। রাস্তায় তখন আধো আলো, আধো অন্ধকার। স্থান হল ভার্সিটির ডাবল ডেকার বাস। কোন রুটের তা বললাম না।
মূল কাহিনীঃ অনেক জ্যাম আজ রাস্তায়। আমি বসে বসে গান শুনছিলাম। যেহেতু ডাবল ডেকার বাস, তাই নিচে মেয়েরা এবং উপরে ছেলেদের জন্য জায়গা বরাদ্ধ। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম পরিবেশ, গাছপালা আর মানুষ।
যেহেতু জ্যাম, সবকিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। এতো জ্যামের ভিতর দিয়ে গাড়িটা শম্বুক গতিতে এগিয়ে চলছিল। থেমে থেমে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা মোড়ে বাস থামলো। বাসের সবাই জ্যামের ঠ্যালায় অতিষ্ঠ। কেও কেও ঘুমাচ্ছে, কেও কেও তাস খেলছে। কেও বা দূরালাপনি যন্ত্রে দুরালাপন করছে।
আমি রাস্তার সব মানুষকেই দেখছি। হঠাৎ দেখলাম আমাদের ভার্সিটির বাসের সাইডে কয়েকটা ছেলেপেলে এসে দাঁড়ালো। এদের মধ্যে একটা ছেলে নিচে থাকা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে অশ্লীল ভঙ্গি করতে লাগলো। হ্যাঁ, অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে রাস্তার কয়েকটা সাধারণ ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী নারী শিক্ষার্থীদের বাসের ভেতরেই টিজ করেছে।
আমি এতোটাই হতভম্ব হয়েছি যে, ব্যাপারটা সাথে সাথে ধরতে পারি নি। জ্যাম ছোটার সাথে সাথেই বাসটা টান দিল জোরে। হারিয়ে ফেললাম সেই ছেলেটাকে। নিজের উপর অজান্তেই প্রচণ্ড রাগ উঠছিল।
আমি জানিনা যাকে উদ্দেশ্য করে অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছিল, তিনি দেখেছেন কিনা। কিন্তু এতোটুকু ঠিকই বুঝতে পারছি যে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার ইত্যাদির কোন মূল্য নেই। আমরা যদি নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে সহপাঠীদের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিতে না পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
ধিক্কারটা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য। যেখানে আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, যেখানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সেখানে এখনো আমাদের দেশের নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর আদব-লেহাজ শিখাতে পারিনি।
আপাতত কিছু বলার মুখ নেই, বাকিটা আপনারা আন্দাজ করে নিবেন আমাদের মন মানসিকতা এখন কিসের রুপ ধারণ করেছে।