সাল ২০৪৩। আমি বসে আছি একটা রেস্টুরেন্টে। এখানে পুরনো দিনের খাবারগুলো নিয়ে মেলা হচ্ছে। বর্তমানের স্বাদ-গন্ধহীন ক্যাপস্যুল খেয়ে খেয়ে জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে। তাই সেই ছোটবেলার খাওয়া খাবারগুলো অনেকদিন পর চেখে দেখার জন্যই আমার এখানে পদার্পণ। গত ২০২৩ এর ভীষণ খরার দরুন, খাবারের আকাল থেকেই স্বাদ-গন্ধহীন ক্যাপস্যুলের জন্ম। কথায় আছে, ‘প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক’।
আমরা সরকারী চাকুরী করি। আজকের খাদ্য-মেলা ভীষণ গোপনীয়তার সাথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা শুধু সরকারী কর্মচারীদের জন্য। অনেক কষ্ট করে এসব বিলুপ্তপ্রায় উপকরন আমাদের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমার মতো অনেকেই এসেছে। খাবার খেতে, খাবার দেখতে। এখনও দেরী হচ্ছে কেন ঠিক বুঝতে পারছি না। পাশের লোকটি বলল যে ‘প্রেসিডেন্ট এরশাদ’ নাকি মেলা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন। এখনও আসেননি তিনি। এদিকে খাবারের গন্ধ ক্ষণে ক্ষণে প্রবল হচ্ছে। একপর্যায়ে টিকতে না পেরে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলাম। দূর থেকে দেখছি রান্নাঘরের চারপাশে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেটের বাইরের ২ জন রোবট সিপাহী সরে যাওয়ার পর আমি দরজায় উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলাম।
সময়ের খেয়াল নেই, কখন থেকে যে আমার পিছনে ২ জন রোবট সিপাহী দাড়িয়ে আছে দেখতেই পাইনি। আমাকে ক্যাঁক করে গর্দান পাকড়াও করলো। তারপর শুরু হল চেকিং। একবার শার্টের পকেটে, আরেকবার প্যান্টের পকেটে হাত দিচ্ছে। আমি যতই বলি সুড়সুড়ি লাগছে, তারা আরো বেশি করে করতে লাগলো। রোবটরা অবুঝ প্রাণী। তারা কোনো মানুষের কমান্ড বোঝে না। সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে কিছুক্ষণ পর ছেড়েও দিল। এসে দেখি খাদ্য-মেলা শুরু হয়ে গেছে। কখন যে এরশাদ এসেছে আর চলে গেছে টের পাইনি......। ভালই টাইম পাস হল রোবট সিপাহীদের সাথে।
এখন সবাই খাচ্ছে। আমিও প্লেট নিয়ে বসে পড়লাম। একবার এটা খাচ্ছি তো আরেকবার খাচ্ছি ওইটা। অনেকগুলো খাবার নতুন করে চিনছি। অনেক দিন খাদ্য যাদুঘরে যাওয়া হয় না। ওইখানে সব বিলুপ্ত খাবারের নাম ছবিসহ দেয়া আছে। বাচ্চাদের নিয়ে একদিন যেতে হবে। আমি খেয়ে খাবার চিনেছি। আর ওদের ছবি দেখিয়ে চেনাবো।
অনেকগুলো খাবার একসাথে দেখছি। ইচ্ছামত খাচ্ছি। অপেক্ষার তর শইছিল না। পোলাও-চিকেন কারি-খাসির রেজালাও দুর্দান্ত হয়েছে। মেইন কোর্সের পর মিষ্টি খাবার গুলো বেশ ভাল লাগছে। দুধের তৈরি মিষ্টান্নগুলো তো চোখ, জিব, মন জয় করে ফেললো। সবচেয়ে ভাল লাগলো সিদ্ধ চাল ও ঘনদুধের মিশ্রণ। লোকে বলে এটার নাম নাকি পায়েস, মতান্তরে ফিরনি। জর্দা দিয়ে পান খেলাম। মনে আছে আগে দিদা, ঠাকুমারা আগে পানের পিক ফেলতেন। অনেকদিন পর পান দেখে পান খেয়ে ঠোঁট, জিব লাল করে রেস্টুরেন্টের দেয়ালে দেয়ালে পানের রস ছিটিয়ে দিলাম। খাবার খেয়ে আমরা সবাই স্লোগান দিলাম, “জয় এরশাদের জয়”।
উৎসর্গ করলাম চির তরুন প্রেসিডেন্ট এরশাদ এবং আমার মেধাবী ক্লাসমেট এরশাদকে.....................