somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিটা দিনই হোক মায়ের জন্য; শুধু মা-দিবস না ।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১১ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ হঠাৎ করেই মনে হলো এই লেখাটি এখানে পোস্ট করলে কেমন হয়.?
আমি ভালো লিখতে জানি না, কিন্তু এই লেখাটি আমি যতবার পড়ি আমার চোখ ভিজে যায়, অদ্ভুত কোনো কারণে ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে, এই লেখাটি আমি আজ এখানে আমার খোলা ডায়েরিতে তুলতে পারলাম । বেশ কিছুদিন আগের লিখা, পুরোটাই উঠিয়ে দিলাম ।



জীবন এবং মৃত্যু, মাঝখানে একটি চাঁদ

যে ছিলো আমার স্বপ্নচারিনী তারে বুঝিতে পারিনি.....গানের লয়ে মৃদু পা দিয়ে ঘুম এসে কেড়ে নেয় দূ’চোখের দৃষ্টি । সফেদ বিছানায় সফেদ চাঁদনী তখন আমায় জড়াজড়ি করে আমায় আরো নিবিষ্ট করে দিচ্ছে ঘুমের সাথে ।

মারা গেছে ??..এমন একটা শব্দ হঠাৎ কানে এসে চোখের ঘুমটাকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেললো ।
সচরাচর এমনটি আমার হয়না । আমি ভীষণ ঘুমকাতুরে, মরার মতো ঘুমাই।

আট তলার জানলা দিয়ে নিচে তাকাই; একটা এম্বুলেন্স থেকে ভেসে আসছে অস্পষ্ট হৃদয়-আত্মা-শরীর নিংড়ানো চিৎকার;.......”আম্মা !...মা ..!...ও আম্মা....মা গো.....!” পাশের বেডের একজনকে জিগ্যেস করলাম “কি ব্যপার”, বললো 'রোগীটি মারা গেছে ।

কোন্‌ রোগী, কার রোগী, কার মা, কার বউ, কার সন্তান কিছুই জানিনি । শুধু জেনেছি মানুষকে মরে যেতে হয় ।
কি হয় আমার; জানি না ! আমার চেয়েও কম বয়সী একজনকে হুট করে জিগ্যেস করে ফেলি.....”মানুষ কেন মরে ?”

সেও হতভম্ব হয়ে যায় আমার উদ্ভট প্রশ্ন শুনে । আমি নিজেও বোধয় ।

অনেক উপরে, অন্ধকারে, কোনো এক ওয়ার্ডের খোলা জানলায় আমি; উপরে আমাকে মাখিয়ে নিচ্ছে নিশ্ছিদ্র হাওয়া আর জোসনা । আর অনেক অনেক নিচ থেকে ভেসে আসছে........”আম্মা...আম্মা গো....ও...মা......”!

আমি নির্বাক হইয়ে রই ! স্তব্ধ ! পলক পড়েনা চোখে, এই ভয়ে যদি পলকেই হারিয়ে ফেলি আমার আম্মাকে ?

গত ক’দিন যাবত আম্মু এখানে ভর্তি; গাইনী ডিপার্টমেন্ট এ । ছোট্ট একটা অপারেশন ! আর এই ছোট্ট শব্দটাই আমার বুক-আত্মায় শেঁলের মতো এসে হুড়োহুড়ি করছে ।

মাকে বেশি ভালো বোধয় বাসতে পারিনি, কিন্তু অজানা আশংকায় বুক কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে । চোখের অবাধ্য নালাকে থামাতে পারছিনা টানা গত পাঁচ মিনিট যাবত ।
ঘুমন্ত মায়ের পা জড়িয়ে ধরে মনে মনে ভাবছি, যেন ঈশ্বরের পা ধরে কাঁদছি আর বলছি-“তোমাকে অনেক অসন্তুষ্ট করি মাগো ! তবুও ছেড়ে যেওনা কখনো....প্লিজ । অনেক বছর বেঁচে থাকো, তোমার করুনা না, কিছুই না, শুধু বকে দেয়ার জন্যই বেঁচে থাকো ।”

বুকের হাপড়টাকে টানতে পারছিনা, ইচ্ছে করছে আমার সমস্ত বাহুর শক্তি দিয়ে আম্মার পা’দুটি অনেক শক্ত করে মুখে চেপে ধরে রাখি । কিন্তু পারিনা; পাছে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে ধরা পড়ি । আমি যে শামুকের মতো; নিজের অন্তরাত্মার কথাটি কখনই প্রকাশ করতে পারিনা যথাসময় ।

আমি আমার কাছে পানির মতই স্বচ্ছ । মাকে চিন্তিত করতে পারি, কষ্টও দিতে পারি, মাকে আনন্দও দিতে জানি, মায়ের জন্যে অঝোরে কাঁদতেও পারি নিশ্বব্দে পুরোটা রাত . কেবল বলতে শিখিনি – “মা, তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি ।“
তুমিই তো কখনো শেখাওনি, কখনো কি বলেছো-“আমার ছোট্ট মা টি, তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি.” আমার মা-ও যে একজন ভালোবাসার কিষ্ণগহ্বর; কেবল গ্রাস করতে পারেন ভালোবাসা দিয়ে, প্রকাশ করতে জানেন না ।

মায়ের এই সরূপহীন ভালোবাসার স্ব-রূপ তুলে ধরবার লেখনী শক্তি যে আমার একেবারেই শুন্যের কোঠায় । আম্মাকে নিয়ে লিখতে গেলে কলম কাগজ সবই বিট্রে করবে ক্লান্তিত । এতবেশী ইচ্ছাশক্তি, মনোবল সমৃদ্ধ একজন মা, যাকে সারাটাজীবন দেখেছি ত্যাগের মধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁর স্বপ্নগুলোকে । অন্তত চেষ্টা করেন এবং সফলও হোন । একটা ধৈর্যের আধার । জীবন-মরণ জাতীয় সমস্যাতেও যাকে কখনো দেখিনি নিরাস, কিংবা ভীত । তাঁর একটি বিশ্বাস; "এর মধ্যেই ভালো থাকবে ।”

আম্মাকে নিয়ে লিখবো কই ? কে আছে, কি আছে আমার মায়ের মতন সহনশীল যে, কলম কাগজেরা শুধু সইবেই ?

মায়ের এই অদম্য শক্তি, সরলতা, সাহসিকতা, বিচক্ষণতা আমি ধরবো কোথায়? আমি যে ভীষণ ছোট । আমি যে নগন্য ।
শুধু দূ’হাত ভরে ঈশ্বরের কাছে চাইবো - আমার এই ছোট্ট চোখের সীমানা যেন তাদের শেষ পলক পর্যন্ত এই মায়ের চোখ দুটি দেখতে পায় . যেন শেষ মুহূর্তেও এরকম নিশ্বব্দে বলতে পারি....:"আম্মা, তোমাকে অনেক ভালবাসি.”

আমি যে ভয়ানক স্বার্থপর ! তাই তোমায় হারাবো; ভাবতেও দুঃস্বপ্নের মতো লাগে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রসঙ্গঃ ডক্টর ইউনুস স্যারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

প্রসঙ্গঃ ডক্টর ইউনুস স্যারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য...

জাপান সফরে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস স্যার উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন- "দেশের একটামাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়"।


কথাটা আংশিক সত্য।
কারণঃ
★ দেশে রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কৃমির হাজার বছরের ঘুম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৬




রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা সাইবেরিয়ার পারমাফ্রস্টে ৩০০টি প্রাগৈতিহাসিক কৃমি আবিষ্কার করেছেন, যার মধ্যে দুটিকে সফলভাবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে। এই কৃমিগুলি হাজার হাজার বছর ধরে বরফে আটকা পড়ে ছিল, তবুও গলানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন চাইলে নির্বাচন কমিশনের কাছেই চাইতে হবে, ড. ইউনুসের কাছে নয়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ৩০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১৯


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে—বিএনপি আসলে নির্বাচন চায় কার কাছে? সম্প্রতি নানা বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, দলটি যেন নির্বাচন চাচ্ছে ড. ইউনুসের (অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার) কাছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভাবে মটরবাইকে স্বস্ত্রীক ট্যুর দেই

লিখেছেন অপলক , ৩০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫০



আসলে আমি ফ্রিডম পছন্দ করি। আদেশে নয়, অনুরোধে মন গলে আমার। শহুরে হট্টগলের চেয়ে প্রকৃতি ভাল লাগে। দল বেঁধে ট্যুর দেবার চেয়ে একাকি ট্যুর দিতে ভাল লাগে। বনের কুকুররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি".....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

"বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি".....


বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হতে হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি। হতে হবে সকল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের এই দর্শনের নিহিত রয়েছে আত্মসামাজিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×